
পরকীয়া থেকে বিয়ের দাবিতে বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে প্রেমিকা শাহনাজ (৫২) কে মাথায় রডের আঘাত এবং শ্বাস রোধ করে হত্যা করার দায় স্বীকার করেছে প্রেমিক মহিউদ্দিন (৩৫)।
সোমবার (১০ মার্চ) দুপুরে কুমিল্লার আদালতে ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট ঘাতক প্রেমিক মহিউদ্দিন (৩৫) তার প্রেমিকা শাহনাজ বেগম(৫২)কে হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবান বন্দী দিয়েছেন। ঘটনাটি ঘটে গত ৭ মার্চ রাতে কুমিল্লা- সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের দেবিদ্বার উপজেলার ইউছুফপুর এলাকায়।
নিহত শাহনাজ বেগম (৫২) মুরাদনগর উপজেলার বাখরনগর নয়া দিঘীর পাড়ের মো. শাহ আলমের স্ত্রী। তারা স্বপরিবারে একই গ্রামের বাখরনগর সনাতন পাড়ায় শাহনাজ বেগমের পিতা মৃতঃ রুক্কু মিয়ার বাড়িতে স্থায়ীভাবে দীর্ঘদিন যাবত বসবাস করে আসছিলেন। শাহনাজের স্বামী দীর্ঘদিন যাবৎ পক্ষাঘাতে অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী। নিহতার ৪ পুত্র ও এক কন্যা রয়েছে।
অপরদিকে ঘাতক প্রেমিক মহিউদ্দিন (৩৫) মুরাদনগনর উপজেলার গুঞ্জর গ্রামের মোসলেম উদ্দিনের পুত্র। মহিউদ্দিন কোম্পানীগঞ্জ- কুমিল্লা ফারজানা যাত্রীবাহী বাস পরিবহনের কুমিল্লা-জ-১১-০২৬১ নং বাসের চালক।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, শাহনাজ বেগমের সাথে মুরাদনগর উপজেলার কোম্পানীগঞ্জ বাজার ও বাস স্ট্যান্ডের বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও গাড়ির স্টাফদের সাথে অবৈধ সম্পর্ক ছিল। এ সম্পর্ক থেকে ফারজানা পরিবহনের বাস চালক মহিউদ্দিনের সাথে পরকীয়ায় গভীরে জড়িয়ে পড়েন। উভয় প্রেমিক -প্রেমিকার স্বামী-স্ত্রী, পুত্র- কন্যা রয়েছে। সম্প্রতি শাহনাজ বেগম প্রেমিক মহিউদ্দিনকে বিয়ের জন্যে খুই চাপাচাপি করতে থাকে। চলতি সপ্তাহের মধ্যে বিয়ে না করলে মহিউদ্দিনের বিরুদ্ধে মামলা দেয়ার হুমকি দেয়।
গত ৭ মার্চ শাহনাজকে মহিউদ্দিন কোম্পানীগঞ্জ বাজারে ডেকে আনে। পরে তারা ফারজানা পরিবহনের একটি বাসে উঠে। বাসের ভেতরেই বিয়ে নিয়ে কথাকাটাকাটি ও হাতাহাতি চরমে যায়। ওইদিন রাত সাড়ে ১০টায় কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের গোপালনগর গ্যাস ফিল্ড সংলগ্ন এলাকায় গাড়িতে থাকা লোহার ড্রাইভার দিয়ে শাহনাজের মাথায় উপর্যুপরি আঘাত করে অচেতন করে এবং পড়নের শাড়ি দিয়ে গলায় পেচিয়ে শ্বাস রোধ করে হত্যা নিশ্চিত করে।
পরে রাত সাড়ে ১২টার দিকে রসি দিয়ে শাহনাজের হাত- পা বেঁধে কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের দেবিদ্বার উপজেলার ইউছুফপুর ব্রিজের নিচে। ফেলে চলে যায়।
পুলিশ তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে গতকাল রোববার সন্ধ্যা ৭টায় প্রান্তিক বাসে বসে তাস খেলা অবস্থায় ঘাতক মহিউদ্দিনকে আটক করে। পরে তার থেকে শাহনাজের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করে। অপর দিকে পরদিন ৪ মার্চ রক্তে ভেজা বাসটি ধুয়ে পরিষ্কার করে হত্যার আলামত নষ্ট করায় সহযোগী সাত্তারকে র্যাব- ১১ এর উপপরিদর্শক মো. ইব্রাহীম মিয়ার নেতৃত্বে আটক করেন।
উভয় আসামিকে সোমবার (১০ মার্চ) কুমিল্লা ৪ নং জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে হাজির করা হলে, ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে শাহনাজ বেগম হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দেন। পরে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি রেকর্ড পূর্বক কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন।
দেবিদ্বার থানার অফিসার ইনচার্জ শামসুদ্দিন মোহাম্মদ ইলিয়াছ জানান, আমরা গত ৭ মার্চ দেবিদ্বারের ইউছুফপুর থেকে হাত-পা বাঁধা এক অজ্ঞাত মহিলার লাশ উদ্ধার করি, পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার পরিচয় শনাক্ত হয়।
নিহতের বড় ছেলে সবুজ বাদী হয়ে থানায় মামলা করার পর তদন্তের মাধ্যমে মূল আসামি ও তার সহযোগীকে আটক করে কোর্ট হাজতে চালান করেছি।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর