
নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেছেন, পোস্টাল ব্যালট অচল ভোট ব্যবস্থা। দেশের ভেতরে ৪৩৩ টি ভোট হয়েছে৷ প্রবাসীরা কেউ ভোট দিতে পারেনি। মঙ্গলবার (১১ মার্চ) নির্বাচন ভবনে নিজ দপ্তরের সামনে প্রবাসীদের ভোট নিশ্চিত করতে ইসির পরিকল্পনা তুলে ধরে এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, আমরা একটা সিস্টেম আর্কিটেকচার ডেভেলপ করতে চাই। এই তিনটা পদ্ধতির একটা। এরপর আমরা দল ও অন্য অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করতে চাই। এরপর যদি দেখি এইটা গ্রহণযোগ্য হচ্ছে তখন আমরা সিস্টেম ডেভেলপমেন্টে যাবো।
ইসি আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, গত ১৬ ডিসেম্বর প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে সুনির্দিষ্টভাবে বলেছেন এবার আমরা প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোট নিশ্চিত করতে চাই। আশ্বাস নয়, বাস্তবায়ন করতে চাই। এই আলোকে নির্বাচন কমিশন সংশ্লিষ্ট কমিটিকে দায়িত্ব প্রদান করে যে একটা প্রস্তাব দেওয়ান জন্য বলে।
তিনি বলেন, ডাক বিভাগ, বিভিন্ন দেশি বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা করা হয় ও সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবও বিশ্লেষণ করা হয়। আমরা দেখেছি চার ধরনের ভোটার পোস্টাল ব্যালটে ভোট দিতে পারে। ৩৪ দেশে ৪৪ টি মিশন অফিসে আমরা তিনটি বিষয় জানতে চেয়েছিলাম। প্রবাসীদের সংখ্যা, মিশনগুলো সুপারিশ ও সংশ্লিষ্ট দেশে কী ব্যবস্থা রয়েছে। তারা অনলাইন ভোট, স্বশরীরের ভোট, পোস্টাল ব্যালটে কথা বলেছে। পোস্টাল ব্যালট অচল ভোট ব্যবস্থা। দেশের ভেতরে ৪৩৩ টি ভোট হয়েছে৷ প্রবাসীরা কেউ ভোট দিতে পারেনি। কেননা, এতে ৪০ দিনের মতো লাগে। আর প্রার্থী চূড়ান্ত হওয়ার পর সময় থাকে ১৫ দিনের মতো।
তিনি আরো বলেন,আমাদের কমিটি তিনটি পদ্ধতি সুপারিশ করেছে৷ একটি হচ্ছে পোস্টাল ব্যালট, অনলাইন ভোটিং; তবে অনলাইন ভোটিং তেমন জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি। আমরা চারটা দেশে দেখেছি। যেমন যুক্তরাষ্ট্র, ফিলিপিনস, এস্তোনিয়া এবং মেক্সিকো। পাশাপাশি আমাদের উপমহাদেশে ভারত, পাকিস্তানসহ কয়েকটি দেশে পাইলটিং হিসেবে অনলাইন সিস্টেমে করছে। তবর ইউএনডিপির সঙ্গেও আমরা আলোচনা করেছি। তারা বলেছে, এটা অনেকেই সফল হতে পারেনি। ফলে পূর্বের নিয়মে তারা ফিরে গেছে৷
তিনি বলেন, আরেকটি প্রস্তাব হলো প্রক্সি ভোট। অর্থাৎ একজন প্রবাসী বাংলাদেশির হয়ে কেউ একজন তার এলাকায় ভোটটা দিয়ে দেওয়া। আমাদের কমিটির কাছে বিষয় ছিল ভোটারের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া, ভোটের গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা; প্রপার ট্রেইল, সাশ্রয়ী ও সর্বজনীন পদ্ধতি হতে হবে; যাতে করে সকল ধরনের প্রবাসী ভোটটা দিতে পারে৷ সব বিবেচনায় নিয়ে কমিটি পোস্টাল ও অনলাইন পদ্ধতি ডেভেলপ করে ট্রায়ালের জন্য সাজেস্ট করেছে, যাতে করে টেস্ট করে দেখা যায় কোনটি বাস্তবায়নযোগ্য। পাশাপাশি তারা এটাও সাজেস্ট করেছে যদি আগামী নির্বাচনে সত্যিকার অর্থেই প্রত্যাশা পূরণ করতে চাই তবে প্রক্সি ভোটিংয়ে যেতে হবে। বর্তমানে কয়েকটি দেশে বিভিন্ন পরিসরে প্রক্সি ভোটিং প্রচলিত আছে। তারমধ্যে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া অন্যতম। আর ভাতরে শুধুমাত্র সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের জন্য প্রচলিত আছে।
এই পদ্ধতির সুবিধা হলো, এটা প্রচলিত আছে, পাওয়ার অ্যার্টনির মাধ্যমে তো জমিজমাও বিক্রি করে থাকি, তাহলে ভোটও তো অধিকার, যদি সেটাকে আমরা এভাবে বাস্তবায়ন করতে পারি তবে একটা ফলাফল আসবে।বাংলাদেশেও প্রতিবন্ধীদের ভোট আরেকজন দিতে পারে, যদিও এটা প্রক্সি ভোটের সঙ্গে মেলানো যাবে না।
তবে প্রবাসীদের প্রক্সি ভোটের একটা সুযোগ রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা বলছি একটা স্কোপ আছে। এটাই খুব কম সময়ে রিয়েল টাইম করা সম্ভব। এজন্য আগামী ৮ বা ৯ এপ্রিলের মধ্যে একটা কর্মশালা হবে। সেখানে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও ইনস্টিটিউটকে আমরা আমন্ত্রণ জানাবো৷ প্রাথমিকভাবে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় এবং এমআইএসটি-কে সম্পৃক্ত করার ব্যাপারে।
এর বাইরেও কোনো প্রতিষ্ঠান যদি সহায়তা করতে পারে, সংস্কার কমিশনের বিশেষজ্ঞকেও আমন্ত্রণ জানাবো৷ নির্বাচন কমিশনের সাবেক অভিজ্ঞ কর্মকর্তা ও এনজিওকেও আমন্ত্রণ জানাবো৷ আমরা একটা সিস্টেম আর্কিটেকচার ডেভেলপ করতে চাই। এরপর আমরা দল ও অন্য অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করতে চাই।
এরপর যদি দেখি এইটা গ্রহণযোগ্য হচ্ছে তখন আমরা সিস্টেম ডেভেলপমেন্টে যাবো। পরে টেস্টিং ও অডিটিংয়ে যেতে হবে। এরপর আমাদের আইনে পরিবর্তন আনতে হবে। ফাইনালি ট্রায়াল রানে যাবো। আমরা আশাকরছি, যদিও এটা কন্ডিশনাল ব্যাপার, সব যদি করতে পারি প্রক্সি ভোটটা মোটামুটি পরিসরে আর বাকিগুলো ট্রায়াল বেসিসে বাস্তবায়ন করতে পারবো বলে আমাদের ধারণা।
প্রবাসী ভোটার কত হতে পারে-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,প্রবাসী ভোটার প্রকৃত তথ্য যদিও নেই৷ তবে যে ৪৪ মিশন থেকে আমরা তথ্য নিয়েছি সেখানে এক কোটি ৩২ লাখের মতো তথ্য রয়েছে। যদি ৭০ থেকে ৮০ ভাগ ধরে নিই, তবে ভোটার তো এক কোটি৷ যাঁদের ভোটার তালিকায় নাম আছে তারাই কেবল প্রক্সি ভোট দিতে পারবে। এজন্য ৪০ টি দেশে আমরা ভোটার কার্যক্রম চালাবো, তবে আগামী নির্বাচনের আগে কতটুকু পারবো জানি না।
প্রবাসীদের ভোট গ্রহণে চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, একটা চ্যালেঞ্জ হচ্ছে গ্লোবালি একসেপ্টেড কোনো সিস্টেম আমাদের হাতে নেই। এরকম যদি থাকতো তাহলে সেটাই করতাম। এখন নতুন একটি সিস্টেম ডিভাইস করতে হচ্ছে। আশাকরি সফল হবো। নির্বাচন সংস্কার কমিশনও একটা পদ্ধতি সাজেস্ট করেছে। আশাকরি কার্যকর পদ্ধতি বের করতে পারবো। এটা একটা চ্যালেঞ্জ হবে। বিশেষজ্ঞরাই আসলে বলতে পারবে কতদিন লাগবে। তবে ১৫ এপ্রিলের মধ্যে আমরা বলতে পারবো কত সময় লাগবে।
প্রবাসীরা একজন ভোটারকে আস্থায় নিয়ে প্রক্সি নির্বাচন করতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন,একজন ইনডিভিজ্যুয়াল ভোটারকে তার আস্থার ব্যক্তিকেই নির্বাচন করতে হবে৷ কেননা, তার প্রক্সি হবে সে যদি অন্য কাউকে ভোট দিয়ে দেয়।আমাদের আস্থার ঘাটতি, বিশ্বাসের অভাব রয়েছে। তবে একজন ব্যক্তিকে অন্তত পক্ষে তো আস্থায় রাখতে। এটা ব্যক্তির পছন্দ হবে। তিনিই নিজেই পছন্দ করবে।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর