
কক্সবাজারে মাদকের এডি কর্তৃক সাংবাদিককে মাদক মামলায় ফাঁসানোর অপচেষ্টার অভিযোগ তদন্ত করছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পাঠানো তদন্ত টিম। সংগঠিত ঘটনায় বিডি২৪ লাইভসহ নানা গণমাধ্যম সংবাদ প্রকাশের জেরেই অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক মো. জাহিদ হোসেন মোল্লার নেতৃত্বে চার জনের টিম মঙ্গলবার (১১ মার্চ) দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তদন্ত কার্যক্রম চালায়।
জাহিদ হোসেন মোল্লা বলেন, মহাপরিচালকের (ডিজি) নির্দেশনায় আমরা চারজনের টিম সকালে কক্সবাজার পৌঁছাই। দুপুর থেকে অভিযুক্ত এডি, টিমের অন্য সদস্য, ভিকটিম সাংবাদিক শাহীন মাহমুদ রাসেলসহ অন্যদের জবানবন্দি নেওয়া হয়। তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বক্তব্য লিখিত নেওয়া হয়েছে। সংগ্রহ করা হয়েছে তদন্ত সংশ্লিষ্ট ভিডিও এবং বিভিন্ন প্রমাণাদি। সবকিছু এক জায়গায় করে গোছানো একটি প্রতিবেদন ঊর্ধ্বতন মহলের কাছে সন্ধ্যার পরই পাঠানো হয়েছে।
সাংবাদিক শাহীন রাসেল বলেন, আমাকে মাদকের তদন্ত টিম ডেকে পাঠিয়েছিলেন। আমি জেলা কার্যালয়ে গিয়ে আমার সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনার বিবরণ লিখিত দিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, একজন নিরীহ মানুষকে মাদক দিয়ে ফাঁসিয়ে দেওয়ার ঘটনা থেকে মাদক কর্মকতা দিদারসহ তার টিমের অন্যান্য সদস্যদের নানা দুর্নীতির অনুসন্ধান শুরু করি। এ কারণে তারা আমাকে টার্গেট করে মাদক কারবারি বানানোর অপচেষ্টা চালিয়েছেন। এডি দিদারুলের বিরুদ্ধে তদন্ত হলেও আমি শঙ্কিত, কারণ তিনি ইতোমধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করার চেষ্টা করছেন বলে গোপন সূত্রে জানতে পেরেছি। আমি চাই, সুষ্ঠু তদন্ত হোক এবং প্রকৃত সত্য যেন বেরিয়ে আসুক।
সোমবার (৯ মার্চ) সকালে কক্সবাজার সদরের ঝিলংজার বাংলাবাজার এলাকার এক সিএনজি চালককে লিংকরোড থেকে ধরে নিয়ে যায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের টিম। চালকের স্ত্রীর অনুরোধে মাদক টিমকে ফোন করে তাকে আটকের বিষয়ে জানতে চান বিডি২৪লাইভ ও সময়ের কণ্ঠস্বরের কক্সবাজার প্রতিনিধি এবং স্থানীয় দৈনিক মেহেদীর অ্যাসাইনমেন্ট এডিটর শাহীন মাহমুদ রাসেল। সাংবাদিক ফোন করায় সিএনজি চালককে ইয়াবা দিয়ে চালান দেওয়া হয়। সন্ধ্যার পর এ বিষয়ে আবারো ফোন করা হলে মাদকের কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (এডি) এ কে এম দিদারুল আলম সাংবাদিক শাহীন রাসেলের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়ান। এর জের ধরে দু’ঘণ্টার মাথায় পেটে ইয়াবাসহ আটক অন্য যুবকের মাধ্যমে সাংবাদিক রাসেলকে মাদক মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা করা হয়।
বিষয়টি ফেসবুকে দেখে জেলায় কর্মরত একদল পেশাদার সাংবাদিক রাতেই মাদক কার্যালয়ে যান। তারা এডি দিদারের রুমে গিয়ে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে, আটক তরুণকে সাংবাদিকদের সামনে আনা হয়। তখন আটক যুবক সাংবাদিক শাহীন মাহমুদ রাসেলের পুরো নাম কিংবা তার বাড়ি ও পরিচয় ঠিকমতো দিতে পারেননি। সাংবাদিক শাহীনের সঙ্গে তার কখনো কথাও হয়নি বলে স্বীকার করেন যুবক। তাহলে লাইভে সাংবাদিক শাহীনের ইয়াবার বাহক কেন বলা হয়েছে, এমন প্রশ্নের কোনো উত্তর দেননি ওই যুবক।
এসব বিষয়ে অভিযুক্ত এডি এ কে এম দিদারুল আলমও সদুত্তর দিতে পারেননি। কিন্তু ওই যুবকের নামে করা মাদকের মামলার এজাহারে শাহীন মাহমুদ রাসেলের সঠিক পরিচয় উল্লেখ করে ফেসবুক টিভিতে বলা কথাই লেখা হয়।
এ ঘটনায় ১০ মার্চ দুপুরে কর্মরত সাংবাদিকরা এডির বিরুদ্ধে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেন। তাকে ৭২ ঘণ্টার ভেতর প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করার দাবি জানান তারা। সাংবাদিক শাহীন মাহমুদ রাসেলকে মিথ্যা মাদক মামলায় ফাঁসানোর ঘটনায় কক্সবাজারের সাংবাদিক মহল তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখায়। সাংবাদিকরা একত্রিত হয়ে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেন এবং এডি দিদারুলের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে প্রত্যাহারের দাবি জানান।
পুরো বিষয় নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের পর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) বিষয়টি গুরুত্বসহকারে নিয়ে তদন্ত করতে চট্টগ্রাম বিভাগীয় অতিরিক্ত পরিচালকের নেতৃত্বে চারজন কর্মকর্তাকে পাঠান।
এই প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী শুভ্রজিৎ চৌধুরী বলেন, মনে রাখতে হবে, স্বাধীন গণমাধ্যমই একটি শক্তিশালী ও গণতান্ত্রিক সমাজের ভিত্তি। যত দিন না সাংবাদিকদের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা হয়, তত দিন পর্যন্ত গণতন্ত্রের পথে চলা সত্যিকার অর্থে সম্ভব হবে না। শাহীন মাহমুদ রাসেলের এই ঘটনার পর আর সাংবাদিক হয়রানি যেন পুনরাবৃত্তি ঘটে—সেটা সরকার এবং সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। সাংবাদিকদের হয়রানি করার অর্থ শুধু তাঁদের পেশাগত জীবন ব্যাহত করা নয়, এটি সমাজের তথ্যপ্রাপ্তির অধিকারের ওপর আঘাত। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অন্যায়, অনাচার, অসঙ্গতির চিত্র যেমন তুলে আনেন সাংবাদিকেরা, তেমনি অপার সম্ভাবনা আর সাহসিকতার গল্পও লেখেন তারাই। কখনও বেদনার কাব্য গাঁথেন, কখনা রচনা করেন মিলনের মহাকাব্য। তাই সাংবাদিক হয়রানি অচিরেই বন্ধ হোক।
শাকিল/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর