
ভোলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে চলছে ইলিশসহ সব ধরনের মাছ শিকারের ২ মাসের নিষেধাজ্ঞা। কিন্তু নিষেধাজ্ঞার ১০ দিন পার হয়ে গেলেও জেলেদের ভাগ্যে জোটেনি সরকারি বরাদ্দের চাল।
এতে অভাব-অনটনে দিন কাটছে তাদের। চাল না পেয়ে কেউ কেউ সংসার ও এনজিওর কিস্তি চালাতে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে নদীতে নামছেন ইলিশ ধরতে।
বুধবার (১২ মার্চ) সরেজমিনে গিয়ে ভোলার সদর উপজেলার শিবপুর, ধনিয়া, ইলিশা, ভেদুরিয়া, ভেদুমিয়া ও দৌলতখান উপজেলার মদনপুরসহ ইউনিয়নগুলোর মেঘনা ও তেঁতুলিয়ায় জেলেদের মাছ শিকারের দৃশ্য দেখা গেছে।
শিবপুর ইউনিয়নের ভোলার খাল এলাকার মেঘনা নদীর জেলে মো. জামাল মাঝি ও সুমন মাঝি বলেন, ‘২ মাসের সরকারি নিষেধাজ্ঞার ১০ দিন হইয়া গেছে। এখনও আমরা সরকারিভাবে চাল পাইনাই। কাজ কাম নাই, সংসারে অনেক অভাব। রোজার মধ্যে অনেক কষ্ট পাইতেছি। আমাগো নামে সরকারি চাউলডা পাইলে অনেক উপকার হইতো।
ভেলুমিয়া ইউনিয়নের হাজিরহাট এলাকার তেঁতুলিয়া নদীর জেলে মোশারেফ মাঝি ও ইলিশা ইউনিয়নের জাংশন এলাকার মেঘনা নদীর জেলে হানিফ মাঝি বলেন, ‘অভিযানের মধ্যে নদীতে মাছ ধরতে যাই না।
জাইলা কাজ ছাড়া অন্য কোনো কাজও জানি না। তাই কোনো কাজ কাম নাই। সংসার চালাইতে কষ্ট হইতেছে। বাড়িতে স্ত্রী বাজার নিতে কয়, কিন্তু নিতে পারি না। পোলাপাইনরে কিছু কিনাও দিতে পারি না।’
তারা আরও বলেন, আড়তদার থোন টাকা ধার কইরা চাউল কিনছি। আরও ৫-৬ দিন খাইতে পারমু। সরকারি চাউল ডা যদি এর মধ্যেই পাই তাইলে অনেক উপরকার হইবো। আর না পাইলে আবারও ধার কইরা চাউল কিনতে হইবো।’
মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মাছ শিকার করা একাধিক জেলে নাম না প্রকাশ করে বলেন, অভিযানের এই কয়দিন আমরা নদীতে নামি নাই। এহনতো ঘরের চাউল কিনতে হইতো, সংসার চালাতে হইতো, এনজিওর কিস্তি পরিশোধ করতে হইতো। এই কারণে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়া নদীতে যাইয়া মাছ ধরতেছি।
ভোলা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব বলেন, প্রতিটি উপজেলায় দ্রুত জেলেদের মাঝে চাল বিতরণের জন্য যোগাযোগ করে যাচ্ছি। আশা করছি আগামী ৩-৪ দিনের মধ্যেই ভোলার সাত উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে জেলেদের চাল বিতরণ শুরু হবে।
এছাড়াও সাত উপজেলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে নিষেধাজ্ঞা সফল করতে নিয়মিত অভিযান চলছে। তবে কোনো জেলে যদি অজুহাত দিয়ে নিষেধাজ্ঞা অমান্য নদীতে মাছ শিকার করে তাহলে আমরা তাদের আটক করে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে শাস্তি দেবো।
তিনি আরও জানান, ইলিশের অভয়াশ্রমের কারণের ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ভোলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়ার ১৯০ কিলোমিটার এলাকায় সব ধরনের মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
এসময় জেলার সাত উপজেলায় নিবন্ধিত ১ লাখ ৭০ হাজার ২৮৩ জন জেলে থাকলেও এ বছর ৪০ কেজি করে চাল পাবেন ৮৯ হাজার ৬০০ জন জেলে।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর