
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শহীদ আবু সাঈদ হত্যা মামলায় আলামত জব্দের অনুমতি পেয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি)। বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) দুপুরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্তকারী কর্মকর্তার আবেদনের প্রেক্ষিতে রংপুর মেট্রোপলিটন তাজহাট আমলি আদালতের বিচারক রাশেদ হোসাইন এ আদেশ দেন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্তকারী কর্মকর্তা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রুহুল আমিন এ আবেদন করেন। তার পক্ষে শুনানি করেন ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার এসএম মইনুল করিম।
তিনি বলেন, আবু সাঈদ হত্যার ঘটনায় দুটি মামলা রংপুরে চলমান। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালেও একটি হত্যা মামলা হয়েছে। মামলার তদন্তের জন্য তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে আবেদন করেছেন। ট্রাইব্যুনালের পক্ষ থেকে তিনি শুনানি করেছেন।
মইনুল করিম আরও বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত প্রতিনিধিদল এর আগে রংপুরে গিয়ে বিভিন্ন জনের সাক্ষ্য নিয়েছে। বৃহস্পতিবার আলামত জব্দের অনুমতির মাধ্যমে মামলার তদন্তে আরেক ধাপ অগ্রগতি হলো। প্রয়োজনে জব্দ করা আলামতের ফরেনসিক পরীক্ষা করে শিগগির মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে।
আবু সাঈদের বড় ভাই রমজান আলীর করা মামলায় বাদীপক্ষের আইনজীবীরাও শুনানিতে অংশ নেন। বাদীপক্ষের আইনজীবী রোকনুজ্জামান বলেন, আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডে মানবতাবিরোধী অপরাধ হয়েছে। তারা শুনানিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে আলামত জব্দের পক্ষে বলেছেন। এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আদালতে আবু সাঈদ হত্যা মামলার তদন্ত গতি পাবে।
এদিকে আদালত সূত্রে জানা গেছে, আবু সাঈদ হত্যার পর পুলিশ বাদী হয়ে গত বছরের ১৭ জুলাই তাজহাট থানায় একটি মামলা করে। এরপর ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতাচ্যুত হলে ১৯ আগস্ট রংপুরের অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন আদালতে হত্যা মামলা করেন শহীদ আবু সাঈদের বড় ভাই রমজান আলী। মামলা দুটির তদন্ত করছিল পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) রংপুরের পুলিশ সুপার এ বি এম জাকির হোসেন।
অন্যদিকে, ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত সংঘটিত ঘটনাপ্রবাহ বিশ্লেষণ করে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের (ওএইচসিএইচআর) তথ্যানুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়, রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদকে বেপরোয়াভাবে গুলি করেছে পুলিশ। তিনি বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার।
প্রসঙ্গত, গত বছরের কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় গত ১৬ জুলাই পুলিশের গুলিতে শহীদ হন আবু সাঈদ। তিনি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। আবু সাঈদ নিহত হওয়ার পর সারা দেশে আন্দোলন ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। এর ধারাবাহিকতায় গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। এর মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের প্রায় ১৬ বছরের শাসনের অবসান ঘটে।
শাকিল/সাএ
সর্বশেষ খবর