
গত বছর ছাত্র-জনতার জুলাই অভ্যুত্থানে ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে সংঘটিত বেআইনি ও সহিংস ঘটনায় গঠিত সত্যানুসন্ধান কমিটির প্রতিবেদন হস্তান্তর করা হয়েছে।
ওই কমিটি ১২২ জন শিক্ষার্থী হামলায় জড়িত থাকার সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) উপাচার্যের অফিস সংলগ্ন সভা কক্ষে গঠিত সত্যানুসন্ধান কমিটির প্রতিবেদন হস্তান্তর হয়। সিলগালা করা ওই রিপোর্ট উপাচার্যের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
জানা গেছে, এই রিপোর্ট পরবর্তী সিন্ডিকেটে ওঠানো হবে এবং সেখানে এ নিয়ে আলোচনা হবে। প্রয়োজনে কয়েকটি মিটিংয়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তা নিয়ে আলোচনা করা হতে পারে।
এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০২৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৫ জুলাইয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর হামলা বিশ্ব মিডিয়াতে ব্যাপক আলোচিত হয়েছে। United Nations Human Rights Office of the High Commissioner কর্তৃক পরিচালিত তদন্তের ভিত্তিতে প্রণীত United Nations Human Rights Office Fact-Finding Report on Human Rights Violations and Abuses related to the Protests of July and August 2024 in Bangladesh শীর্ষক তথ্যানুসন্ধান প্রতিবেদনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জুলাই-আগস্ট মাসে সংঘটিত সহিংসতা ও রাজনৈতিক নিপীড়নের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য স্থান পেয়েছে।
১৫ জুলাই ২০২৪ এর হামলার নিকৃষ্টতম দিক ছিল নারী শিক্ষার্থীদের উপর হামলা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টার এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজের জরুরি বিভাগে যাওয়ার পথে আহত শিক্ষার্থীদের উপর হামলা এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজের জরুরি বিভাগের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে আহতদের উপর হামলা এবং ডাক্তারদের চিকিৎসা প্রদানে বাধা প্রদান।
যুদ্ধের সময়ও নারী ও শিশুদের বিশেষ নিরাপত্তা প্রদান করা হয়। আন্তর্জাতিক মানবিক আইনে যুদ্ধের সময় চিকিৎসারত আহতদের উপর হামলা এবং হাসপাতালে হামলাকে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ কারণে হাসপাতালে এবং নারী শিক্ষার্থীদের উপর হামলাকারীদের চিহ্নিত করতে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
এতে আরও উল্লেখ করা হয়, তথ্যানুসন্ধান কমিটি শতাধিক হামলাকারীকে চিহ্নিত করেছে। তথ্যানুসন্ধান কমিটি ২০২৪ সালের অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ থেকে কাজ শুরু করে। সীমিত রিসোর্স দিয়ে কয়েক হাজার আক্রমণকারীকে চিহ্নিত করা দুঃসাধ্য।
এ কাজটি করতে পারে রাষ্ট্রীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। সত্যানুসন্ধান কমিটির অসমাপ্ত কাজ রাষ্ট্রীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে সত্যানুসন্ধান কমিটি আশা প্রকাশ করছে। এই প্রতিবেদন ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় ন্যূনতম ভূমিকা রাখতে পারলে তথ্যানুসন্ধান কমিটির প্রচেষ্টা অর্থবহ হবে, বলে উল্লেখ করা হয়।
প্রতিবেদন গ্রহণ শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, এই রিপোর্ট এখন পর্যন্ত পাবলিক ডকুমেন্টস না। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সিলগালা এই রিপোর্টটি সিন্ডিকেটে উন্মোচন কর হবে। সেখানে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে এবং একাধিক সভা লাগলেও লাগতে পারে। পরবর্তীতে সিন্ডিকেট ট্রাইবুনাল গঠনসহ প্রয়োজন সাপেক্ষে আইনগত পদক্ষেপগুলো নেবে।
প্রসঙ্গত, সত্যানুসন্ধান কমিটির নিকট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহিংসতায় আক্রান্ত, আহত এবং প্রত্যক্ষদর্শীরা অনেক অভিযোগ এবং সত্যানুসন্ধান কমিটি নিজ উদ্যোগেও বিভিন্ন দেশি-বিদেশি ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া থেকে বিভিন্ন ধরনের তথ্য সংগ্রহ করেছে। প্রাপ্ত তথ্যাদির ওপর ভিত্তি করে সত্যানুসন্ধান কমিটি সহিংস ঘটনায় জড়িতদের অনেককে চিহ্নিত করতে পেরেছে। বর্তমানে সত্যানুসন্ধান কমিটি চিহ্নিতদের পরিচয় নিশ্চিত করার কাজ সম্পন্ন করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরি করছে।
ওই তথ্যানুসন্ধান কমিটির সদস্যরা হলেন- কাজী মাহফুজুল হক সুপণ, সহযোগী অধ্যাপক, আইন বিভাগ ও প্রভোস্ট, স্যার এ এফ রহমান হল (আহ্বায়ক); অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইকরামুল হক, ডিন (ভারপ্রাপ্ত), আইন অনুষদ; অধ্যাপক ড. নাদিয়া নেওয়াজ রিমি, ম্যানেজমেন্ট বিভাগ; অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলমোজাদ্দেদী আলফেছানী, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ; অধ্যাপক ড. নাসরিন সুলতানা; প্রভোস্ট, শামসুন নাহার হল। মিসেস শেহরীন আমিন ভূঁইয়া, সহকারী প্রক্টর এবং ডেপুটি রেজিস্টার (তদন্ত) (সচিব)।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর