
মাগুরায় ধর্ষণের শিকার আছিয়ার মৃত্যুতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গায়েবানা জানাজা ও কফিন মিছিল করেছে একদল শিক্ষার্থী।
বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) সন্ধ্যা পৌনে ৮ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি চত্বরে গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে কফিন মিছিল নিয়ে সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মিলিত হয় শিক্ষার্থীরা।
গায়েবানা জানাজায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান, গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের ঢাবি শাখার সদস্য সচিব জাহিদ আহসান, ঢাবি শিবার নেতা মাজহারুল ইসলামসহ শতাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন।
এসময় শিক্ষার্থীরা ‘তুমি কে আমি কে, আছিয়া আছিয়া', ‘তোমার বোন আমার বোন, আছিয়া আছিয়া', ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস, হ্যাং দ্যা রেপিস্ট', ‘বিচার বিচার বিচার চাই, খুনিদের বিচার চাই', ‘আমার বোন কবরে, খুনি কেন বাইরে', ‘আমার সোনার বাংলায়, ধর্ষকদের ঠাঁয় নাই', ‘জুলাইয়ের বাংলায়, ধর্ষকদের ঠাঁয় নাই'।
জানাজা শেষে উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ বলেন, শিশুটির মৃত্যু আমাদের নাড়িয়ে দিয়ে গেছে। দ্রুত সময়ে এই ভয়াবহ হত্যার বিচার হবে, ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠিত হবে। শিশুটির জন্য পুরো জাতি দোয়া করছেন। তার মৃত্যু এই ক্রান্তিকালে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছে। এটা এই মুহূর্তে প্রয়োজন। আর কোনো শিশু যেন হারিয়ে না যায়। আমাদের বিচার ব্যবস্থা আইন ব্যবস্থা সুপ্রতিষ্ঠিত হোক। তার মতো আর কোনো মেয়ের সঙ্গে যেন এমন না ঘটে।
গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ ঢাবি শাখার আহ্বায়ক আবদুল কাদের বলেন, আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ আমাদের বোনের হত্যার ন্যায়বিচার আমরা প্রতিষ্ঠা করবো। তার ধর্ষণ ও খুনের বিচার মৃত্যুদণ্ড ছাড়া আর কিছু হতে পারে না। ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড এবং ধর্ষকের সাহায্যকারীদের আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। আগামীর বাংলাদেশে ধর্ষণকে কেবল শারীরিক শ্লীলতাহানি হিসেবে নয়, হত্যার সমপরিমাণ নিকৃষ্ট অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।
ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক মানসুরা আলম বলেন, যে পরিমাণ নিপীড়ন শিশুটির উপর হয়েছে, তাতে তার বেঁচে থাকা কঠিন ছিল। এটা অত্যন্ত ঘৃণিত কাজ হয়েছে শিশুটিকে ধর্ষণ করে মেরে ফেলার চেষ্টা করা। ইতোমধ্যে অপরাধীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালে এ ঘটনার বিচার হতে হবে। আমরা এ ঘটনায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
এ সময় ধর্ষণবিরোধী মঞ্চের পক্ষ থেকে পাঁচ দফা দাবি জানানো হয়। দাবিগুলো হলো-
১. শিশুটির মামলার ক্ষেত্রে ধর্ষণ ও নিপীড়নবিরোধী বিশেষ ট্রাইবুনাল গঠনের মাধ্যমে ৭ দিনের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট জমা এবং এক মাসের মধ্যে তার ধর্ষকের বিচারিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন সাপেক্ষে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের আদেশ নিশ্চিত করতে হবে। বিচার প্রক্রিয়া চলাকালীন নিহতের পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
২. প্রত্যেক ধর্ষণ মামলার বিচারে ধর্ষণ ও নিপীড়নবিরোধী বিশেষ ট্রাইবুনাল গঠন করে দ্রুত মামলার বিচারকার্য সম্পন্ন করে সকল ধর্ষণের বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
৩. তিন কার্যদিবসের মধ্যে বিশেষ ট্রাইবুনাল গঠন করে দ্রুত বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করতে হবে।
৪. নারী ও শিশুর নিরাপত্তার প্রশ্নে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, আইন উপদেষ্টা, নারী ও শিশু বিষয়ক উপদেষ্টার ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে জবাবদিহি করতে হবে।
৫. সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে ‘নারী ও শিশু নিপীড়নবিরোধী সেল’ গঠন ও সেলের কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে হবে এবং ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাইবার বুলিং সংক্রান্ত আইনের সংশোধন করে অপরাধের স্পষ্ট ও যথাযথ সংজ্ঞায়ন করতে হবে।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর
ক্যাম্পাস এর সর্বশেষ খবর