
খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলায় বাস টার্মিনাল এলাকার রাস্তায় কাতরাচ্ছিলেন এক মানসিক ভারসাম্যহীন ভবঘুরে নারী। অনেকে দেখেও না দেখার ভান করছিলেন, কিন্তু যুব রেড ক্রিসেন্টের স্বেচ্ছাসেবীরা তাকে হাসপাতালে নেওয়ার দায়িত্ব নেন। গত ২ মার্চ তাদের উদ্যোগে তিনি দীঘিনালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন। পরে অবস্থার অবনতি হলে পাঠানো হয় খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে। সেখানেই জন্ম নেয় একটি কন্যাশিশু।
কিন্তু জন্মের পর শুরু হয় নতুন লড়াই। নবজাতকের ভবিষ্যৎ কি হবে? ১২ দিন ধরে শিশুটি হাসপাতালে ছিল, ভালোবাসা আর যত্নে ঘিরে রেখেছিলেন খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালের নার্স, যুব রেড ক্রিসেন্টের সদস্য ও সমাজসেবা কর্মকর্তারা। এ সময় শিশুটিকে দত্তক নিতে আবেদন করেন ৩০ জনের বেশি দম্পতি।
শেষ পর্যন্ত আইনগত প্রক্রিয়া শেষে বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) খাগড়াছড়ি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল এবং খাগড়াছড়ি সদর থানার মামলা নং ৩৬/২০২৫ ও সাধারণ ডায়েরি নং ১৪৭/২০২৫-এর ভিত্তিতে শিশুটির দায়িত্ব দেওয়া হয় খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার শালবন ৬ নম্বর ওয়ার্ডের রায়হান হোসাইন ও মোসা. রিজিমা বেগম দম্পতিকে।
হস্তান্তর কার্যক্রম সম্পন্ন হয় খাগড়াছড়ি ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালের সিভিল সার্জন ও তত্ত্বাবধায়কের উপস্থিতিতে। সাক্ষী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আবু আব্দুল্লাহ মো. ওয়ালী উল্লাহ, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি খাগড়াছড়ি ইউনিটের জেলা ইউনিট কর্মকর্তা আব্দুল গনি মজুমদার এবং প্রবেশন অফিসার (অ. দা.) মো. নাজমুল আহসান।
শিশুটির নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে দীঘিনালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মামুনুর রশিদ শুরু থেকেই বিষয়টির তদারকি করেন এবং যুব রেড ক্রিসেন্টের স্বেচ্ছাসেবকরা এ কাজে সার্বিক সহযোগিতা করেন। ভবঘুরে নারীকে হাসপাতালে নেওয়া থেকে শুরু করে নবজাতকের পরিচর্যা এবং আইনি প্রক্রিয়ার সমন্বয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন দীঘিনালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। তিনি স্বেচ্ছাসেবকদের উৎসাহিত করার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা ও সহায়তা প্রদান করেন যাতে শিশুটির ভবিষ্যৎ নিরাপদ থাকে। তার এই উদ্যোগের জন্য স্থানীয়রা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
শাকিল/সাএ
সর্বশেষ খবর