
সুনামগঞ্জের শাল্লায় ছাত্রী ও দিরাইয়ে এক কিশোরীকে ধর্ষণের চেষ্টার ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দিকে দুটি উপজেলায় পৃথক দুটি ঘটনা ঘটেছে। দিরাইয়ে ঘটনায় পুলিশ দুজনকে আটক করলেও শাল্লা ঘটনাটি গ্রাম্য মাতুব্বরেরা সালিশি বৈঠকে মীমাংসার নামে ধামাচাপা দিতে তৎপর।
কিশোরী জানায়, দিরাই পৌর শহর থেকে মেয়েটি কেনাকাটা শেষে সন্ধ্যার আগে বাড়িতে যাওয়ার জন্য দিরাই বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে সেখানে দাঁড়ানো একটি অটোরিকশায় ওঠে। এ সময় আরও দুই যুবক দুই দিকে ওঠে পড়ার পরপরেই চালক অটোরিকশা চালিয়ে দেয়। তখনই অটোরিকশা থামাতে বলে চালককে বলে মেয়েটি। এই কথা বলার পরই পাশে থাকা দুইজন তাকে জাপটে মুখ চেপে ধরে। মুঠোফোন কেড়ে নেয়। তখন মেয়েটি তাদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি শুরু করার এক পর্যায় অটোরিকশা দিরাই মদনপুর সড়কের গণিগঞ্জ এলাকায় আসে। এই সময় জোরে ধাক্কা দিয়ে নিজেকে কোনো রকমে ছাড়িয়ে চলন্ত অটোরিকশা থেকে লাফ দিয়ে রাস্তায় পড়ে যায় মেয়েটি। এবং এক বাড়িতে আশ্রয় নেয়। খবর পেয়ে মেয়েটির পরিবারের সদসয়রা ঘটনাস্থলে গিয়ে হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। তাঁর ডান চোখ,কপাল,গাল,হাত থেঁতলে গেছে। মেয়েটি সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে। বাবা একজন কৃষক।
দিরাই থানার ওসি আবদুর রাজ্জাক বলেন, আমরা মেয়েটির বাড়িতে পুলিশ পাঠিয়েছি। এঘটনায় দুইজনকে আটক করা হয়েছে। এটি স্পর্শকাতর বিষয়,আমরা গুরত্বের সঙ্গে দেখছি।
এদিকে শাল্লায় পঞ্চম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে ধর্ষণচেষ্টার খবর পাওয়া গেছে । গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ভুক্তভোগীর বাড়ির আঙ্গিনায় কাজ করার সময় এ ঘটনাটি ঘটেছে।ধর্ষণ চেষ্টাকারী একই গ্রামের সুদর্শন দাসের ছেলে মানিক লাল দাস (৩০)। তবে ঘটনাটির পর পরই ধামাচাপা দেওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন গ্রামের মাতাব্বর রণজিৎ সরকার,বকুল দাস,বিকাশ দাস,সচিন্দ দাস,রানু দাস, কৃষ্ণপদ দাস,রাজ কুমার দাস,সোম চাঁদ দাস, সুনিল দাস,ইন্দ্রজিৎ দাস,সজল দাস,আশিষ দাস কেনু দাস বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার জোর চেষ্টা করেন।
ভুক্তভোগীর পরিবার ও স্থানীয়রা জানান, গ্রামের তিন পাড়ার মাতব্বররা জড়ো হয়ে ভবিষ্যতে এসব না করার জন্য অভিযুক্ত যুবককে বলে দেওয়া হয়। তবে গ্রামের মোড়ল মাতাব্বরদের এসব রায়ে সন্তোষজনক হয়ে ওঠেনি ভুক্তভোগীর পরিবার ও গ্রামের অধিকাংশ মানুষের।
তবে আইনের দৃষ্টিতে ধর্ষণচেষ্টার বিষয়টি এভাবে ধামাচাপা দেওয়া ঠিক হয়নি বলেও তা স্বীকার করেছেন গ্রামের মাতব্বরেরা।
ভুক্তভোগীর মা বলেন,আমি মেয়েকে নিয়ে বাড়ির পাশে কাজ করতেছি। হঠাৎ করে মানিক লাল দাস চলে এসেছেন। তিনি বলেন, আমি লাকড়ির বস্তা নিয়ে বাড়িতে ফিরছি। এরমধ্যেই অভিযুক্ত যুবক খারাপ উদ্দেশ্যে আমার মেয়েকে জড়িয়ে ধরে ধর্ষণ চেষ্টা করেন। সামাজিকভাবে ভুক্তভোগীর পরিবার পঞ্চায়েত ও গ্রাম্য মাতাব্বরদের চাপে রয়েছে বলে জানান ভুক্তভোগীর পরিবার।
এ বিষয়ে শাল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ভুক্তভোগীর পরিবার এখনও থানায় আসেনি। আপাতত এই বিষয়ে কোনোকিছু বলতে পারবো না। তবে ভুক্তভোগীর পরিবার থানায় এসে অভিযোগ দিলে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পুলিশ সুপার তোফায়েল আহম্মেদ বললেন, বিষয়টি গুরত্বের সঙ্গে দেখতে পুলিশকে বলে দেওয়া হয়েছে। পরিবারের কেউ থানায় গেলেই মামলা নেওয়া হবে। তিনি আরও জানান, সিএনজিসহ ঘটনায় জড়িত চালক ইমন খান (২৫), বাড়ি দিরাই উপজেলার জকিনগর এবং মিঠু মিয়া নামে আরেক যুবককে আটক করা হয়েছে।
শাকিল/সাএ
সর্বশেষ খবর