
সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় রক্তির নদীর নাব্যতা সংকট চরম আকার ধারন করছে। নদী খনন না করায় বালু পাথরসহ বিভিন্ন পণ্য বোঝাই করা কোটি কোটি টাকার মালামাল নিয়ে আটকে আছে শত শত নৌকা, তৈরি হয়ে দীর্ঘ নৌজটের।
একটি নৌকা আটকা পড়লে এর পিছনে আসা সকল নৌকা আটকা পড়ে যায়। এছাড়াও কোনো মালবাহী নৌকা এই পথে তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার বিভিন্ন বাজারে প্রবেশ করতেও পারছে না।
এতে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে নৌ মালিক,শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা। প্রতি বছরেরই নদীতে পানি কমে যাওয়ায় এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হলেও দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ এই দুর্ভোগের সমাধানে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না। যার ফলে গত মাস খানেক ধরে উপজেলার রক্তি নদীর কাটাখালী-নিয়ামতপুর-সুরমা নদী পর্যন্ত ২-৩কিলোমিটার এর বেশী এই নৌ জটের কবলে ৫ শতাধিক বাল্কগেইট নৌকা গুলোতে ৫-৬কোটি টাকার পণ্য বোঝাই করে আটকে আছে।
এছাড়াও আরও মালামাল লোড করে যাওয়ার অপেক্ষা করছে ১০-১৫কোটি টাকার মালামাল। অপরদিকে আসতেও পারছে না আরও ৮-১০কোটি টাকার মালামাল। ফলে ব্যবসায় ভাটা পড়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,জেলার তাহিরপুর উপজেলার যাদুকাটা নদীর বালু ও পাথরের ব্যাপক চাহিদা থাকায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ব্যবসায়ীরা এখানকার ব্যবসায়ীদের সাথে যোগাযোগ করে বালু ও পাথর ক্রয় করেছে।
পরে বড় বাল্কগেইড নৌকা বোঝাই করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ব্যবসায়ীদের নিদিষ্ট গন্তব্যে পাঠায় স্থানীয় ব্যবসায়ীগন। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে নৌ জটের কারণে ব্যবসায়ীরা সময় মত যেমন মালামাল পাচ্ছে না এতে করে লসের শিকার হচ্ছে। তেমনি নৌ মালিক ও শ্রমিকরা দিনের পর দিন নদীতে নৌকা নিয়ে আটকে থাকায় লসের পাশা পাশি চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
বালু ও পাথর ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলমসহ অনেকেই জানান, ভৈরব, টাঙ্গাইল,ময়মনসিংহ, সিরাজগঞ্জ, দাউদকান্দি, যশোর, খুলনা, সাভার, নারায়ণগঞ্জ, ফরিদপুর, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, কিশোরগঞ্জসহ সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে বালু ও পাথরের জোগান দেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। দিনে দিনে এই নদী পেরিয়ে মূল নদী সুরমায় যাওয়া যেত এখন নৌকায় মাল নিয়ে আটকে আছে গত ১৫দিন ধরে। নৌজটের কারণে ব্যবসায় লস হচ্ছে।
নিয়ামতপুর এলাকায় বাসিন্দা বোরহান উদ্দিন জানান, সুনামগঞ্জ জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও পার্শ্ববর্তী নেত্রকোনা, কলমাকান্দা, মোহনগঞ্জসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বার্থে বিভিন্ন মালামাল আনা নেওয়া করা হয় আর এসব পণ্য পরিবহনের একমাত্র মাধ্যম নদীপথ।
কিন্তু নদী খনন না করায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে ব্যবসায়ী ও নৌ শ্রমিকদের। রক্তি নদীতে আটকে থাকা নৌ চালক মাসুক মিয়া জানান,নদীর নাব্য সংকটের কারণে মাঘ মাসের প্রথম থেকেই রক্তি নদীতে আটকা পড়ে শত শত মালবাহী নৌযান। এতে সৃষ্টি হয় তীব্র নৌজট,সে কারণে দিশেহারা এর সাথে জড়িতরা। গত ১ সপ্তাহের বেশী সময় ধরে আটকে আছি।
মাল নিয়ে যেতে পারছেন গন্তব্যে আর পরিবার পরিজনের কাছেও। বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তা মফিজুর রহমান জানিয়েছেন, দুর্ভোগ লাগবে এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলবো।
নৌ পুলিশের সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার টুকেরবাজার ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দিলীপ কুমার দাস জানিয়েছেন,রক্তির নদীতে নাব্যতা সংকটের কারণে বালুভর্তি নৌকা বিভিন্ন জায়গায় আটকে আছে। বৃষ্টি হলে নদীতে পানি বাড়লে এই সমস্যার সমাধান হবে। আর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আমাদের পক্ষে থেকে নজরদারি রয়েছে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের পওর শাখা-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন হাওলাদার জানান, রক্তি নদীটির নাব্যতা সংকটের কারণে নদীতে নৌযান চলাচল সচল রাখতে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে আমরা খনন করেছিলাম। আবারও নাব্যতা সংকট দেখা দিলেও নতুন করে খননের পরিকল্পনা নেই আমাদের।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর