
নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে তিন ভিসা প্রতারককে গ্রেফতার করেছে যৌথবাহিনী। এসময় তাদের কাছ থেকে পাঁচটি মোবাইল ফোন, পঁচিশটি রবি সিমের খালি প্যাকেট প্রতারণার অন্যান্য মালামালসহ নগদ টাকা উদ্ধার করা হয়। এছাড়া মোবাইলে কানাডিয়ান ভুয়া ভিসা আবেদন, কানাডিয়ান ভুয়া ভিসা, ভুয়া পাসপোর্ট, ভুয়া নিয়োগ-যোগদানপত্র, বিদেশগমনে নকল কাগজপত্র পায়।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিষয়টি নিশ্চিত করে অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আশরাফুল ইসলাম জানান- গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে সাইবার নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়েরপূর্বক তাদেরকে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
গ্রেফতারকৃতরা হল পুটিমারী ইউপির ডাউয়ারতল গ্রামের সিরাজুল হক সুজার পুত্র মমতাজ আলী মেডেল (২২), তোফাজ্জল হোসেনের পুত্র তুহিন ইসলাম (২১) ও একই গ্রামের গাজির স্ত্রী সুমাইয়া আক্তার (২২)।
এজাহার সূত্রে জানা যায়- সোমবার রাত সাড়ে ১১ টার দিকে সেনাবাহিনী এবং পুলিশের জরুরি আইন শৃঙ্খলা ডিউটি ও বিশেষ অভিযান পরিচালিত হয়। এসময় গোপন সংবাদের মাধ্যমে জানতে পারে যে, পুটিমারী ইউপির ভেড়ভেড়ী ডাউয়ারতল এলাকার সিরাজুল হকের বাড়িতে কয়েকজন প্রতারক ও জাহিদুলের বাড়িতে পলাতক আসামি গাজিনুর ওরফে গাজিসহ কয়েকজন প্রতারক পরস্পর যোগসাজশে ডিজিটাল ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস, মোবাইল ফোন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ইন্টারনেট ব্যবহার করে কানাডিয়ান নকল ভিসার আবেদন, নকল পাসপোর্ট, চাকুরি দেয়ার নামে নকল নিয়োগপত্র-যোগদানপত্র ও বিদেশ গমনের সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র দেয়ার নামে প্রতারণামূলকভাবে বিজ্ঞাপন প্রচার করে প্রবাসী ও বাংলাদেশীসহ অন্যান্যদের নিকট প্রতারণা করে অর্থ গ্রহণ করছে।
এ সংবাদের ভিত্তিতে খোলাহাটি সেনানিবাসের মেজর সালমান তারেক রিফাতের নেতৃত্বে যৌথ বাহিনী ভেড়ভেড়ী ডাউয়ারতল এলাকার সিরাজুল হকের বাড়িতে অভিযান চালায়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে প্রতারকরা কৌশলে পালিয়ে যায়। এসময় পার্শ্ববর্তী জাহিদুল ইসলামের টিনের ঘর হতে মোবাইল ডিভাইস ব্যবহার করে প্রতারণা করার সময় সিরাজুল হক সুজার পুত্র মমতাজ আলী মেডেল (২২), তোফাজ্জল হোসেনের পুত্র তুহিন ইসলামকে (২১) গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত মেডেলের কাছ থেকে ২ টি স্মার্ট ফোন, ১ টি বাটন ফোন, সেলফি স্ট্যান্ড উদ্ধার করা হয়। একই সময় তার দেখানো মতে একটি ট্রাঙ্ক হতে প্রতারণা করা নগদ ২ লক্ষ ৬ হাজার ৪ শত ৯০ টাকা, একটি মাইক্রোফোন, বিভিন্ন বৈদ্যুতিক ১৫ গজ তার, একটি পাওয়ার ব্যাংক উদ্ধার করা হয়। পরে জাহিদুলের বাড়িতে যৌথবাহিনী অভিযান চালায়। যৌথবাহিনীর উপস্থিতি টের পেয়ে পলাতক আসামি গাজিনুর ওরফে গাজিসহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজন প্রতারক পালিয়ে যায়। পরে পলাতক আসামি গাজির বসত ঘর তল্লাশি করে মোবাইলে প্রতারণা করার সময় গাজির স্ত্রী সুমাইয়া আক্তারকে গ্রেফতার ও তার কাছ থেকে ১টি স্মার্ট ও ১ টি বাটন ফোন উদ্ধার করা হয়। তার দেখানো মতে বিছানার নীচ থেকে একটি হালখাতার কার্ডে ২৯টি বিদেশি মোবাইল নম্বর লেখা কাগজ, এর কিছু নম্বরের পাশে মালোয়শিয়া ও সৌদি লেখা আছে, রবি সিমের ২৫ টি খালি প্যাকেট উদ্ধার করা হয়। তাদের মোবাইলে কানাডিয়ান ভুয়া ভিসা আবেদন, কানাডিয়ান ভুয়া ভিসা, ভুয়া পাসপোর্ট, ভুয়া নিয়োগ-যোগদানপত্র, বিদেশগমনে নকল কাগজপত্র পাওয়া যায়। গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পারে যে, ভেড়ভেড়ী ডাউয়ারতল গ্রামের মুশকুরের পুত্র জনি, খয়বতের পুত্র আহাদ আলী, মজিবরের পুত্র শাহপরান, আসাদ, মাহাবুলের পুত্র নিলু, ছাত্তারের পুত্র জবেদুন, আঃ রহিমের পুত্র আঃ হাদি, রায়হান এ প্রতারণার সাথে জড়িত রয়েছে।
এজাহারে বলা হয় গ্রেফতারকৃত আসামিদের মোবাইল ফোন হতে প্রচারিত বিজ্ঞাপন, কানাডিয়ান ভুয়া ভিসার আবেদনপত্র, কানাডিয়ান ভুয়া ভিসা, ভুয়া পাসপোর্ট, চাকুরি দেয়ার নামে নকল নিয়োগপত্র, চাকুরিতে যোগদানপত্র সহ বিদেশ গমনের সংশ্লিষ্ট নকল কাগজপত্র মোবাইল ফোনে রক্ষিত থাকায় যাচাই বাছাই করে এজাহার করতে বিলম্ব হয়েছে। এসআই কাজি রিপন বাদী হয়ে কিশোরগঞ্জ থানায় একটি সাইবার নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করেছে। এ মামলায় জাহিদুল ইসলামের পুত্র গাজিনুর ওরফে গাজিকে আসামি করে আরও ৮/১০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। মামলা নং-২৩, ১৮/০৩/২৫।
কিশোরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জানায়- গ্রেফতারকৃতদের সাইবার নিরাপত্তা আইনে মামলা পূর্ব জেলা কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।
শাকিল/সাএ
সর্বশেষ খবর