
করমুক্ত ও নগদ প্রণোদনার সুযোগ নিয়ে বিদেশ থেকে এক ব্যবসায়ী ৭৩০ কোটি টাকা রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় হিসেবে দেশে এনেছেন। গত সোমবার এক অনুষ্ঠানে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান এমন চমকপ্রদ তথ্য দেওয়ার পর বেশ আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়।
তবে কে এই ব্যবসায়ী, কীভাবে এত টাকা আনলেন এসব কিছুই বলেননি এনবিআর চেয়ারম্যান। ঐ বক্তব্যের পর এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঘটনাটি চার বছর আগের। প্রতীক গ্রুপের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ ফারুকী হাসান এই অর্থ দেশে আনেন। তিনি ঢাকার কর অঞ্চল-৫ এর একজন করদাতা। এই বিপুল অর্থ ওয়েজ আর্নাস হিসেবে তার কর নথিতে দেখিয়েছেন। প্রবাসী আয়ের ওপর কর না থাকায় তিনি বিদেশ থেকে আনা ঐ অর্থের ওপর কোনো কর দেননি।
এনবিআর কর্মকর্তারা জানান, নরিনকো ইন্টারন্যাশনাল করপোরেশন, চায়না শিপবিল্ডিং ও অফসোর ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানি এ তিন চীনা প্রতিষ্ঠান থেকে ৯ বছর ধরে বিপুল এই অর্থ প্রবাসী আয় হিসেবে দেশে এসেছে। এ বিপুল পরিমাণ অর্থ কেন প্রবাসী আয়ের আওতায় করমুক্ত রেখে ছেড়ে দেওয়া হলো, তা নিয়ে এনবিআরের কর গোয়েন্দা ইউনিট এখন তদন্ত করছে। ইতিমধ্যে সৈয়দ মোহাম্মদ ফারুকী হাসান ও তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যাংক হিসাব স্থগিত করা হয়েছে।
তবে এ বিষয়ে গতকাল প্রবাসে থাকা প্রতীক গ্রুপের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ ফারুকী হাসান সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, বৈধ আয়ের অর্থই তিনি দেশে এনেছেন। নিয়ম মেনে সেই অর্থ আয়কর নথিতেও দেখিয়েছেন। এ জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে তিনি প্রত্যয়ন সনদও পেয়েছেন।
তিনি জানান, চীনের সরকারি বিভিন্ন জাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের হয়ে এজেন্ট ও পরামর্শক হিসেবে কাজ করেন তিনি। ২০১১ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত চীনের সরকারি বিভিন্ন জাহাজ নির্মাতাপ্রতিষ্ঠান থেকে বাংলাদেশ জাহাজ কিনেছে। এসব জাহাজ বিক্রয়ের ক্ষেত্রে তিনি এজেন্ট ও পরামর্শক সেবা দেন। তার বিনিময়ে ১৩ বছরে ৭৩০ কোটি টাকার সমপরিমাণ অর্থ এজেন্ট ও পরামর্শ মাশুল পেয়েছেন। এই আয়ের ওপর চীনে করও পরিশোধ করেছেন। পরে সেই অর্থ প্রবাসী আয় হিসেবে বাংলাদেশে এনেছেন। তবে এ জন্য প্রবাসী আয়ের বিপরীতে নগদ প্রণোদনা প্রাপ্য হলেও তিনি তা নেননি।
সৈয়দ মোহাম্মদ ফারুকী হাসানের বাড়ি লক্ষ্মীপুরে। ২০০১ সালে পাড়ি দেন কানাডায়। পরে দেশে ফিরে এসে ব্যবসা শুরু করেন। এক সময় তিনি কানাডার অন্টারিও আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন তিনি। তবে এখন কোনো পদ নেই। বেশ কয়েক বছর আগে রাজনীতি ছেড়ে পুরোপুরি ব্যবসায় মনোযোগী হয়েছেন বলেও তিনি সাংবাদিকদের জানান।
রার/সা.এ
সর্বশেষ খবর