
ছাত্রদলের সভাপতি পরিচয় দিয়ে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) শিক্ষা প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী শিশির পন্ডিতকে হলের রুমে থাকা নিয়ে হয়রানি করার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রদল নেতার বিরুদ্ধে।
অভিযুক্ত ঐ নেতার নাম জাহিদ হাসান। বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা শহীদ আব্দুস সালাম হলের প্রভোস্ট বরাবর এক অভিযোগপত্রে এই হয়রানির কথা জানায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী।
অভিযোগে জানা যায়, ভুক্তভোগীর হলে থাকার বৈধ সিট থাকলেও জাহিদ হাসান নামে ঐ ছাত্রদল নেতা নিজেকে ছাত্রদলের সভাপতি পরিচয় দিয়ে প্রভাব খাটিয়ে নিজের পছন্দের লোক উঠানোর চেষ্টা করে। এই বিষয়ে অন্য ছাত্রদল নেতা কর্মীদের দিয়ে নিজের রুমে ডেকে নিয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে জেরা করারও অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগপত্রে ভুক্তভোগী ঐ শিক্ষার্থী বলেন, “আমি নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা প্রশাসন বিভাগের মাষ্টার্সে অধ্যয়নরত একজন নিয়মিত ছাত্র। আমি ভাষা শহীদ আব্দুস সালাম হলে ৪২৪ নাম্বার রুমে বৈধভাবে সীট প্রাপ্ত শিক্ষার্থী।
হলের এলটমেন্ট ফি সময়মত দিয়ে আমি প্রসিডিওরাল সব কিছু সময়মত করেছি। আমার উঠতে কিছুদিন দেরি হলে ছাত্রদলের কিছু নেতাকর্মী আমাকে জানায় আমার সীট নাকি বাতিল হয়ে গেছে তাই তারা ঐ রুমে নিজেদের জুনিয়র তুলবে। পরবর্তীতে আমি খোঁজ নিয়ে জানতে পারি হল প্রশাসন এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।
উক্ত রুমে হল প্রশাসন কর্তৃক ৫ জন শিক্ষার্থীর এলটমেন্ট থাকলেও সেখানে ৬ টা সীট প্রবেশ করানো হয়েছে। আমি এবং আমার বন্ধু একাডেমিক কাজে কিছুদিন ঢাকা থাকায় আমাদের সীট নিয়েও ষড়যন্ত্র শুরু হয়। আমার অনুপস্থিতিতে আমার এক জুনিয়র রুমে থাকতে গেলে তাকেও বাধার সম্মুখীন হতে হয়। যদিও রুমে এলটমেন্ট না হওয়া আরো অন্য দুজন শিক্ষার্থী থাকলেও তাদের বিষয়ে চেপে গিয়ে আমাদেরকে রুমে থাকতে না দেওয়ার হুশিয়ারি দেওয়া হয়।
ঘটনাচক্রে গত ৯ মার্চ দুপুর ১২.৩৭ মিনিটে আমার মোবাইলে ০১৬৮*****৭৩৭ নাম্বার থেকে একটি কল আসে এবং জাহিদ হাসান নামের একজন নিজেকে ছাত্রদল সভাপতি পরিচয় দিয়ে আমাদের রুমের এই বিষয় নিয়ে আমাকে জেরা করে। যেখানে তিনি হল প্রশাসনের সাথে কোনোপ্রকার সম্পর্ক না থাকলেও আমার এবং আমার বন্ধুর সীট নিয়ে সিদ্ধান্ত দিতে থাকে। এবং ৩০৫ নম্বর রুমে ডেকে নিয়ে একই বিষয় নিয়ে আমাকে ৬/৭ জন ছাত্রদল পরিচয়ে বিভিন্ন বিষয়ে জেরা করে। বর্তমানে আমি এবং আমার বন্ধু এ বিষয়ে ভীষণ উদ্বিগ্ন।”
এ বিষয় নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন জানিয়ে বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য হল প্রশাসন বরাবর অনুরোধ করেছেন ভুক্তভোগী ঐ শিক্ষার্থী।
এই বিষয়ে অভিযুক্ত ছাত্রদল নেতা জাহিদ হাসান বলেন, অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন। আমার কাছে তথ্য এসেছে যে শিশির পন্ডিত এবং তার বন্ধু চাকুরীজীবী হয়ে তারা হলে সীট নিয়েছে এবং সীটে উঠে নাই। হল প্রশাসন একটা নোটিশ দিয়েছে যারা নির্দিষ্ট সময়ে হলে উঠবে না তাদের সীট বাতিল বলে গণ্য হবে। সেক্ষেত্রে প্রভোস্ট মহোদয়ের মৌখিক অনুমতি নিয়ে দুইটা ছেলে ঐ রুমে থাকে।
শিশির পন্ডিতের পরিচয় দিয়ে তার জুনিয়র সেখানে থাকতে আসে৷ বিদ্যমান পরিস্থিতিতে আমি শিশির পন্ডিতকে কল দিয়ে হল প্রভোস্টের সাথে কথা বলতে বলেছি৷ ছাত্রদলের সভাপতি পরিচয়ের বিষয়ে জাহিদ হাসান বলেন, আমি এমন কোনো পরিচয় দি নাই৷ আমি শুধু বলেছি আমি নোবিপ্রবি ছাত্রদল নেতা জাহিদ হাসান।
নোবিপ্রবি ছাত্রদলের বর্তমান কমিটির আহ্বায়ক নূর হোসেন বাবু বলেন, জাহিদ হাসান নামে আমাদের কমিটিতে কোনো নেতা নেই। কেউ যদি ছাত্রদল সভাপতি পরিচয় দিয়ে কোনো অন্যায় কাজ করে তাহলে তাকে আইনের আওতায় আনার অনুরোধ জানাচ্ছি। পাশাপাশি হল প্রশাসনকে এ বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
নোবিপ্রবি ভাষা শহীদ আব্দুস সালাম হলের প্রভোস্ট বডি অভিযোগ পেয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সহকারী প্রভোস্ট বলেন, ছাত্রদলের সভাপতি পরিচয়ে শিক্ষার্থীকে হয়রানির অভিযোগটি আমরা পেয়েছি। এ বিষয়ে আমরা হল প্রশাসন তদন্ত করে ব্যবস্থা নিবো।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর
ক্যাম্পাস এর সর্বশেষ খবর