
মিয়ানমার থেকে নৌকায় পালিয়ে বাংলাদেশে ঢোকার সময় বঙ্গোপসাগরে রোহিঙ্গা বহনকারী একটি নৌকা ডুবে গেছে। এ ঘটনায় বিজিবি ম ২৫ জন রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করেছে, যাদের মধ্যে বেশিরভাগই নারী ও শিশু। তবে এ দুর্ঘটনায় বিজিবির এক সদস্যসহ আরও কয়েকজন রোহিঙ্গা নিখোঁজ রয়েছেন।
শনিবার (২২ মার্চ) ভোরে টেকনাফের শাহ পরীর দ্বীপ পশ্চিম পাড়া এলাকার সংলগ্ন সাগরে এই দুর্ঘটনা ঘটে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সংঘাত বেড়ে যাওয়ায় সেখানকার রোহিঙ্গারা জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করছে।
নিখোঁজ বিজিবির সদস্য একজন সিপাহি। তিনি টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপ বিজিবি বিওপির অধীনে কর্মরত ছিলেন।
বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, নৌকাটি বাংলাদেশের জলসীমায় প্রবেশের চেষ্টা করার সময় অতিরিক্ত যাত্রীর কারণে ভারসাম্য হারিয়ে ডুবে যায়। খবর পেয়ে বিজিবির একটি দল দ্রুত অভিযান চালিয়ে ২৫ জনকে জীবিত উদ্ধার করে। তবে উদ্ধার অভিযানের সময় বিজিবির এক সদস্য পানির স্রোতে ভেসে যান এবং এখনও নিখোঁজ রয়েছেন।
নৌকাডুবির ঘটনা স্বীকার করে টেকনাফ-২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. আশিকুর রহমান গণমাধ্যমে বলেন, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাবোঝাই একটি নৌকাডুবির ঘটনায় এখন পর্যন্ত শিশুসহ ২৫ জন রোহিঙ্গাকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। সাগরে বিজিবির উদ্ধার অভিযান চলছে। এ ঘটনায় বিজিবির এক সদস্যের নিখোঁজের খবর পাওয়া গেছে। তবে তার ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করেননি টেকনাফ-২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক।
এ বিষয়ে টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপের ইউপি সদস্য আবদুল মান্নান বলেন, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা বহনকারী একটি নৌকাডুবির ঘটনা শুনেছি। এ ঘটনায় বিজিবির এক সদস্যসহ বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা নিখোঁজ থাকার খবর পেয়েছি। আমি ঘটনাস্থলে যাচ্ছি।
স্থানীয়রা জানান, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাবোঝাই একটি নৌকা টেকনাফে শাহপরীর দ্বীপ পশ্চিম পাড়া এলাকায় সাগরে ভাসমান দেখেন বিজিবির এক সদস্য। ওই নৌকাতে ওঠেন বিজিবির নিখোঁজ সদস্য। স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ আমিনের মালিকানাধীন মাছ ধরার নৌকায় শাকের মাঝির নেতৃত্বে মাঝিমাল্লারা রোহিঙ্গা বহনকারী নৌকাটি থামানো সংকেত দেয়।
এ সময় উত্তাল সাগরের ঢেউয়ে নৌকাটি ডুবে যায়। তাদের চিৎকারে নারী-শিশুসহ ২৫ জন রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করে স্থানীয় জেলে ও বিজিবি। পরে নিখোঁজ বিজিবির সদস্যসহ রোহিঙ্গাদের সন্ধানে সাগরে তল্লাশি চালানো হয়। তবে ডুবে যাওয়া নৌকায় অর্ধশতাধিক লোকজন ছিল বলে জানিয়েছেন উদ্ধার রোহিঙ্গারা।
নৌকার মালিক মো. আমিন বলেন, মাঝরাতে সাগরে রোহিঙ্গা বহনকারী নৌকা ধরতে যাওয়ার কথা বলে ওই বিজিবির সদস্য আমার নৌকাটি নিয়ে যান। পরে রোহিঙ্গা বহনকারী নৌকাটি কূলে নিয়ে আসার পথে সাগরে ঢেউয়ের স্রোতে ডুবে যায়। এতে ২৫ জনের মতো রোহিঙ্গা জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় বিজিবির এক সিপাহি নিখোঁজ রয়েছেন। তাকে উদ্ধারে সাগরে তল্লাশি চলছে।
টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ পশ্চিম পাড়া নৌঘাটের পাহারাদার আবদুল মান্নান জানান, শনিবার মধ্যরাতে রোহিঙ্গাবাহী নৌকা কূল ঘেঁষে যাওয়ার সময় টহলরত বিজিবির সদস্যরা দেখতে পান। তখন ঘাট থেকে একটি নৌকা নিয়ে তাদের আটকে দেয়। তারপর কীভাবে রোহিঙ্গাবাহী ট্রলার ডুবে যায় সেটা জানি না। তবে এ ঘটনায় ২৫ রোহিঙ্গাকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় বিজিবির এক সদস্যসহ ৪০ জনের মতো রোহিঙ্গা নিখোঁজ রয়েছেন। তাদের খুঁজতে ঘাটের একাধিক নৌকায় সাগরে তল্লাশি চালাচ্ছেন জেলেরা।
নৌকাডুবির ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপ পশ্চিম পাড়া জেলে ঘাটের সাধারণ সম্পাদক আবদুল গফুর বলেন, গভীর রাতে শাহপরীর দ্বীপ পশ্চিম পাড়া বরাবর রোহিঙ্গা বহনকারী একটি নৌকা অনুপ্রবেশের সময় ডুবে যাওয়ার ঘটনা শুনেছি। এ ঘটনায় অন্য নৌকায় উদ্ধার করতে যাওয়া বিজিবির এক সদস্যও নিখোঁজ থাকার খবর জেলেরা অবহিত করেন। এছাড়া বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গাও উদ্ধার করা হয়েছে বলে জেনেছি।
এ বিষয়ে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, রোহিঙ্গা বহনকারী একটি নৌকাডুবির ঘটনা ঘটেছে বলে শুনেছি। এ বিষয়ে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের পর থেকে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা প্রায় ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গা কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে নতুন করে অনুপ্রবেশের চেষ্টা বাড়ছে, যা সীমান্তে উত্তেজনা সৃষ্টি করছে।
শাকিল/সাএ
সর্বশেষ খবর