
আতা গাছে তোতা পাখি ডালিম গাছে মৌ’- এমন করে ভাঙা ভাঙা গলায় ছড়া পড়তে পারে। খেলনা নিয়ে খেলতে পারে। বয়স ৩৪ বছর হলেও মিলি আক্তারের উচ্চতা ২৮ ইঞ্চি। বাচ্চাদের মতো বিভিন্ন খেলনা নিয়ে কাটে তার সময়।
বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম গুলিশাখালী গ্রামের নজরুল ও ইয়াসমিনের সংসারে দ্বিতীয় সন্তান মিলি আক্তার। ৩৪ বছর বয়সেও মিলি আক্তারের উচ্চতা ২৮ ইঞ্চি। এখনো বাচ্চাদের মতো তার খেলার সঙ্গী জুসের খালি বোতল ও প্লাস্টিকের কিছু হাড়ি-পাতিলের সামগ্রী। দামি কোনো খেলনা কিনে দেওয়ার মতো সক্ষমতা নেই তার পরিবারের।
মোরেলগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম গুলিশাখালী গ্রামের বাসিন্দা মিলি আক্তারের জন্ম ১৯৯২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি। মিলি তার মায়ের গর্ভে থাকা অবস্থায় বাবা নজরুল ইসলাম নিরুদ্দেশ হয়ে আর ফেরেননি। জীবিকার তাগিদে ছোট্ট মিলিকে দুই বছর বয়সে নানা-নানির কাছে রেখে সৌদি আরব চলে যান মা ফরিদা ইয়াসমিন।
সেখানে কাটে তার একটানা ২৭ বছর। বাড়ি ফিরে দেখেন তার মিলির বয়স ঠিক বেড়েছে কিন্তু শরীরের উচ্চতা বাড়েনি। হরমোনজনিত কারণে ৩৪ বছরের মিলির শারীরিক উচ্চতা হয়েছে মাত্র (২৮ ইঞ্চি) ২ ফুট ৪ ইঞ্চি।
ক্ষুদ্র মিলির প্রতিদিনের জীবনযাপন রাত ১১টায় সবার সঙ্গে ঘুমাতে যান। সকালে ঘুম থেকে উঠে নিজেই দাঁত ব্রাশ, গোসল সেরে নেন। তবে বেশিরভাগ সময়ই ছোট ভাইয়ের কাছেই থাকেন তিনি। মিলির মা মোসা. ফরিদা ইয়াসমিন অসুস্থ। মাঝেমধ্যে নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে অপচ্ছন্দের কিছু হলে চট করে রেগে যান মিলি। মোবাইলে গেম খেলা, গান শোনা, নাচ করা তার ইচ্ছা। মিলি মাছ, মাংস, পিঠা, ফলের মধ্যে আপেল ও কমলা খেতে বেশ পছন্দ করেন।
মায়ের কাছে বিভিন্ন সময়ে তার দাবি আমাদের এরকম ছোট ঘর কেনো? সিঁড়ি দিয়ে দোতলা ঘর হবে কবে, সে সিঁড়ি বেয়ে ওঠা নামা করবে। গাড়িতে চড়বে, গবাদি পশু গরুর লালন পালন করার ইচ্ছা তার। এমনকি মিলি বলেন, মা আমার বিয়ে হবে না।
মিলি আক্তারের মা মোসা. ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, ৫ মাস বয়সে মিলিকে গর্ভে রেখে এবং সাড়ে ৩ বছর বয়স মেয়ে পলি আক্তারকে ওর বাবা ফেলে রেখে চলে যায়। অভাবের সংসারে অনেক যুদ্ধ করে বড় মেয়েকে কোনোমতে লেখা পড়া করিয়ে বিয়ে দিয়েছি। মিলি জন্ম থেকেই ওকে কোনো চিকিৎসা ও ভালো খাবারও দিতে পারিনি। নিজে আবার বিয়ে করে এই দুই মেয়েকে নিয়ে সিলেট জেলার গোয়াইনঘাটা উপজেলার বর্তমান স্বামীর বাড়িতে ছিলাম।
বর্তমান স্বামীকে নিয়ে নিজের জন্মস্থানে ফিরে এসেছি। এ ঘরে একমাত্র কলেজপড়ুয়া ছেলে রয়েছে। অর্থের অভাবে ব্যাহত হচ্ছে ছেলের পড়ালেখা। বসত ভিটা বলতে শুধু ৪৪ শতক জমিই আমার সম্বল।
তিনি বলেন, সরকারি সাহায্য বলতে সমাজসেবা অধিদপ্তরের প্রতিবন্ধী কার্ডই একমাত্র ভরসা। মেয়ের গরু আর ছাগল পালনের শখ এখনো মেটাতে পারিনি। প্রত্যন্ত গ্রামে আমাদের বসবাস তাই কখন কার কাছে গেলে কী সাহায্য পাওয়া যায় তাও জানি না। বেঁচে থাকতে মেয়ের জন্য তিনবেলা দু’মুঠো খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকার ব্যবস্থা করে যেতে পারলেই শান্তি পেতাম। এজন্য দেশের বিত্তবান এবং সরকারের কাছে সহযোগিতা চান তিনি।
মিলি আক্তারের বড় বোনের স্কুলপড়ুয়া ছেলে মো. রাহাত বলেন, ছোটবেলা থেকেই আমরা এক সঙ্গে থাকি। আমাকে মাঝে মাঝে প্রশ্ন করে, তুমি বড় হও কিন্তু আমি বড় হই না কারণ কি? এসব কথা বলতে গেলে তার মন খারাপ হয়ে যায় তখন চুপ করে বসে থাকে। মিলি আক্তারের প্রতিবেশী আব্দুর রব হাওলাদার বলেন, ছোট থেকেই মিলিকে যেমন দেখছি এখনো তেমনই! তার বয়স এখন ৩৪ কিন্তু এখনো সে বাচ্চাদের মতো।
এই মিলির ভবিষ্যৎ কি? আমি সরকার এবং ধনী ব্যক্তিদের কাছে প্রতিবেশী হিসেবে মিলির জন্য যথাসাধ্য সহযোগিতা করার জন্য আহ্বান করছি। মোরেলগঞ্জে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাবিবুল্লাহ বলেন, মিলি আক্তারের জন্যে আমরা যথাসাধ্য সহযোগিতা করবো।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর