
নিখোঁজের তিন দিন পর নিরব শেখ (১৭) নামে এক কিশোরের কোমরে শিকল দিয়ে বালুর বস্তা বাঁধা মরদেহ উদ্ধার হয়েছে। রোববার সকালে রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার রতনদিয়া ইউনিয়নের মাধবপুর এলাকার পদ্মা নদীর কোল থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে কালুখালী থানার পুলিশ। সে একই ইউনিয়নের হরিণবাড়িয়া গ্রামের দিনমজুর জিয়ারুল শেখের ছেলে।
নিরবের পারিবারিক সূত্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নিরব বাড়ির পাশে মাধবপুর বাজারে যায়। রাতে বাড়িতে না ফেরায় পরিবারের সদস্যরা খোঁজাখুঁজি শুরু করে। পরের দিনও কোনো সন্ধান না পেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খোঁজ চেয়ে পোস্ট দেওয়া হয়। এর কিছুক্ষণ পর নিরবের বাবার কাছে একটি অচেনা নম্বর থেকে ফোন করে ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। টাকা না দিলে নিরবকে হত্যা করা হবে হুমকি দেওয়া হয় যে। মুক্তিপণ দেওয়ার জন্য পাংশা উপজেলার একটি ব্রিজের কাছে যেতে বলা হয়। এরপর থেকেই সেই নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। নিখোঁজের ঘটনায় শনিবার নিরবের বাবা কালুখালী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। রোববার সকালে স্থানীয় জেলেরা মাছ ধরতে গিয়ে নদীতে একটি মরদেহ ভাসতে দেখে পুলিশে খবর দেন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মরদেহ উদ্ধার করে।
স্থানীয়রা জানায়, রোববার সকালে ইকরাম নামে এক জেলে পদ্মা নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে উপুড় হয়ে ভাসমান একটি মরদেহ দেখতে পান। এরপর এলাকাবাসী গিয়ে নিশ্চিত হয় এটি নিখোঁজ নিরবের মরদেহ। নিরবের কোমরে শিকল দিয়ে একটি বালুর বস্তা বাঁধা ছিল। যাতে মরদেহ পানিতে ডুবে থাকে। তবে মরদেহ ফুলে ফেঁপে পানির ওপরে ভেসে ওঠে।
নিরবের বাবা জিয়ারুল শেখ জানান, তার তিন ছেলে। তিন বছর আগে ছোট ছেলে জন্মের সময় তার স্ত্রী মারা যায়। অভাব অনটনের সংসারে নিরব নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করতে পেরেছে। পরে সাভারের একটি কারখানায় কাজ করত। বেতন নিয়মিত না পাওয়ায় সে কিছুদিন আগে বাড়ি ফিরে আসে। গত বৃহস্পতিবার রাতে বাজারে গিয়ে আর ফেরেনি। এখন ছেলের লাশ দেখতে হলো। নিরব কারও সঙ্গে কোনো ঝগড়া-বিবাদে জড়িত ছিল না। তিনি আরও জানান, ফেসবুকে নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পর তার নম্বরে ফোন করে মুক্তিপণ চাওয়া হয়েছিল। কারা কী উদ্দেশ্যে চেয়েছিল তা তিনি ধারণাও করতে পারছেন না।
কালুখালী থানার ওসি মোহাম্মদ জাহিদুর রহমান জানান, গত শনিবার নিরবের বাবা কালুখালী থানায় জিডি করেন। ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ার পর মুক্তিপণও চাওয়া হয়েছিল বলে জেনেছেন। এ সকল বিষয় তারা তদন্ত করছিলেন। এরই মাঝে নিরবের মরদেহ উদ্ধারের খবর পান। কারা কেন এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে জোরালোভাবে তার তদন্ত চলছে। খুব শিগগিরই অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হবে। মুক্তিপণ চাওয়ার বিষয়টিও গুরুত্ব সহকারে দেখছে পুলিশ।
শাকিল/সাএ
সর্বশেষ খবর