
ময়মনসিংহের গৌরীপুরে রোববার (২৩ মার্চ) ভিজিএফ চাল বঞ্চিত হওয়ায় শালিহর ছায়ানীড় আবাসন প্রকল্পের লোকজন উপজেলা পরিষদের সামনে ‘ভিজিএফ'র চাল’ দেয়ার দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করে।
মিছিল শেষে ২নং গৌরীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চাল'র দাবিতে ঘেরাও কর্মসূচি পালন করে। অপরদিকে ডৌহাখলা ইউনিয়ন পরিষদে দিনভর অপেক্ষা করে চাল পায়নি সুবিধাবঞ্চিতরা।
উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শাখা সূত্র জানায়, পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে দুর্যোগাক্রান্ত, দু:স্থ ও অতিদরিদ্রদের মাঝে বিতরণ জন্য ২৫হাজার ৮১১জনের চাল বরাদ্দ পাওয়া গেছে। প্রত্যেক সুবিধাভোগী ১০ কেজি করে চাল পাবেন। এজন্য বরাদ্দ ২৫৮.১১০ টন।
এরমধ্যে ১নং মইলাকান্দা ইউনিয়নের ২ হাজার ৪৭১জন, ২নং গৌরীপুর ইউনিয়নে ২হাজার ৩৩২জন, ৩নং অচিন্তপুর ইউনিয়নে ২হাজার ৪৮২জন, ৪নং মাওহা ইউনিয়নে ২হাজার ২৯৯জন, ৫নং সহনাটী ইউনিয়নে ২হাজার ৭১৯জন, ৬নং বোকাইনগর ইউনিয়নে ২হাজার ৮১০জন, ৭নং রামগোপালপুর ইউনিয়নে ৩হাজার ২২৭জন, ৮নং ডৌহাখলা ইউনিয়নে ২হাজার ৯৩৩জন, ৯নং ভাংনামারী ইউনিয়নে ২হাজার ২০৯জন ও ১০নং সিধলা ইউনিয়নে ২হাজার ৩২৯জন চাল পাবেন।
এদিকে, ২নং গৌরীপুর ইউনিয়নে শনিবার (২২ মার্চ) চাল বিতরণ করা হয়। তবে এ ইউনিয়নের নিজেদের ঘরবাড়িহীন অসহায় হয়ে আশ্রয় নেয়া শালীহর ছায়ানীড় আবাসন প্রকল্পের বাসিন্দা চাল পায়নি। এতে তারা বিক্ষুব্ধ হয়ে রোববার শহরে ও উপজেলা পরিষদের সামনে বিক্ষোভ মিছিল এবং ২নং গৌরীপুর ইউনিয়ন পরিষদ ঘেরাও কর্মসূচি পালন করে।
এ প্রসঙ্গে সমিতির সভাপতি মো. জমশেদ আলী জানায়, এ আবাসন প্রকল্পটি ২নং গৌরীপুর ইউনিয়ন পরিষদে ১নং ও ২নং ওয়ার্ডে অবস্থিত। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘরবাড়ি-ভিটেমাটিহীন অসহায় পরিবারগুলো আশ্রয় নিয়েছে। ওরা নি:স্ব। ২/৩দিন ধারে ঈদের চালের জন্য যোগাযোগ করেছি। চাল না দেয়ায় আবাসনের বাসিন্দারা বিক্ষুব্ধ হয়ে পড়েছেন।
আবাসন প্রকল্পের সাধারণ সম্পাদক মো. সেলিম মিয়া জানান, এখানে যারা বাস করে তারা অতিদরিদ্র শুধু নয়, ছিন্নমূল-দরিদ্র। ওরা চাল পাবে না, তাহলে চাল পাবে কারা? সমাবেশ বক্তব্য রাখেন আবাসনের বাসিন্দা আব্দুল সালাম, মতিউর রহমান, পারভীন আক্তার, শহিদুল ইসলাম, লাইলী আক্তার, সুফিয়া আক্তার, রহিমা আক্তার, ফিরুজা বেগম, শামসুন নাহার, সুরুজ আলী প্রমুখ। তাদের বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত চাল না পাবো, ততক্ষণ পর্যন্ত এ ইউনিয়ন পরিষদের সামনে থেকে আমরা যাবো না।
এ প্রসঙ্গে ২নং গৌরীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. হযরত আলী জানান, আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় লিখিতভাবে ইউপি: প্রশাসনিক কর্মকর্তা (ইউপি সচিব) নিকট চাল বিতরণের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য রেজাউল ইসলাম রিয়াদ জানান, আমাকে মাত্র ১০০ কার্ড দেয়া হয়েছে। সেগুলো বিতরণ করে দিয়েছে। মানুষের যে চাহিদা তার তো পূরণ করা সম্ভব না। ইউনিয়নের প্রশাসনিক কর্মকর্তা কামরুজ্জামান জানান, ইউপি: সদস্যদেরও দেয়া হয়েছে এবং রাজনৈতিক দলের লোকজনকেও দেয়া হয়েছে। আমরা এখন কী; করবো?
অপরদিকে উপজেলার ডৌহাখলা ইউনিয়ন পরিষদের সামনে সূর্যোদয়ের পর থেকে লোকজন এসে ভিজিডি’র চালের জন্য ভিড় করে। রুকনাকান্দার আলেকজান (৬০) জানায়, সকালে এসেছে। শুনেছি,কার্ড দিবে, চাল দিবে। এখন তো কেউ আসে নাই।
চরশ্রীরামপুরের আব্দুল খালেক বলেন, চাল দিবো, সেই জন্য এসেছি। চরঘোড়ামারা গ্রামের আছিয়া খাতুন (৪৫) জানায়, গতবার পাইছি, সবাই বলতাছে চাল দিবো, সে জন্য এসেছি। গয়েসখিলা গ্রামের দোলেনা খাতুন, জাহানারা বেগম জানায়, চাল নিতে আইসি, আগে কার্ড দিবো শুনেছি। এখন কিছুই পাইনি।
দিনশেষে শূন্যব্যাগ হাতে বাড়ি ফিরতে দেখা যায়, তাঁতকুড়া গ্রামের আছমত আলী, সিরাজুল ইসলাম, মামদীপুরের আলেয়া খাতুন, কদিম ডৌহাখলার নুরজাহান, ছোলেমা খাতুন, হাজেরা খাতুনকে।
এ প্রসঙ্গে ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে জানা যায়, এ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এমএ কাইয়ুম একটি হত্যা মামলায় জেলহাজতে রয়েছেন। ইউনিয়ন পরিষদের সচিব মাহতাব উদ্দিনের মুঠোফোনে কল দিলে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর