• ঢাকা
  • ঢাকা, বুধবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৫
  • শেষ আপডেট ৭ ঘন্টা পূর্বে
আব্দুল লতিফ রঞ্জু
পাবনা প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ২৪ মার্চ, ২০২৫, ০৫:৩৪ বিকাল

বাবাকে মানসিক রোগী সাজিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করলেন ছেলে!

ছবি: প্রতিনিধি, বিডি২৪লাইভ

বসতবাড়ির মাত্র ১৯ শতক জমি লিখে না দেওয়ায় হতদরিদ্র নাসির উদ্দিন (৫০) কে মানসিক রোগী সাজিয়ে মানসিক হাসপাতালে ভর্তির অভিযোগ উঠেছে তার স্ত্রী-সন্তানের বিরুদ্ধে। 

পরে ভুক্তভোগীর ভাগ্নের জিডির সূত্র ধরে ৯ দিন পর তাকে মানসিক হাসপাতাল থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। এমনই চাঞ্চল্যকর সিনেমার মতো ঘটনা ঘটেছে পাবনার চাটমোহর উপজেলার বিলচলন ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড দোলং গ্রামে। ভুক্তভোগী নাসির উদ্দিন ওই গ্রামের মৃত আবির মোল্লার ছেলে। তার স্ত্রীর নাম বেদেনা খাতুন (৪৫)।

তাদের দুই মেয়ে ও এক ছেলে সন্তান রয়েছে। তার মধ্যে বড় মেয়ে নাজমা খাতুনের বিয়ে হয়েছে একই উপজেলার বোয়াইলমারী গ্রামের মৃত কিতাব মাস্টারের ছেলে আসাদ হোসেনের সাথে। আর ছোট মেয়ে শামসুন্নাহারের বিয়ে হয়েছে পৌর সদরের আফ্রাতপাড়া মহল্লার মিছা প্রামাণিকের ছেলে জাহিদ প্রামাণিকের সাথে। আর একমাত্র ছেলে মাসুম মোল্লা (২১) সরকারি এডওয়ার্ড কলেজে বিএ (অনার্স) প্রথম বর্ষের ছাত্র।

অভিযোগে জানা গেছে, বিভিন্ন এলাকায় গাছ কাটা ও ঝোড়ার কাজ করে সংসার চালান হতদরিদ্র নাসির উদ্দিন। এছাড়া এক বছর আগে রামনগর গ্রামের মোফাজ্জল সরদারের কাছ থেকে বাৎসরিক ৪৫ হাজার টাকায় জমি লীজ নেন তিনি। সেই জমি আবাদ করে সচ্ছলতা ফেরানোর চেষ্টা করছিলেন। এর মাঝে গত এক মাস আগে বসতবাড়ির ১৯ শতক জমি নাসির উদ্দিনকে লিখে দিতে বলেন তার ছেলে মাসুম। না দেওয়ায় ক্ষুব্ধ ছেলে তার বাবাকে মারধরও করেন।

সেইসঙ্গে লীজ নেওয়া জমির মালিক মোফাজ্জল সরদারকে নাসির উদ্দিনের স্ত্রী সন্তান বলেন তারা আর জমি লীজ নিবেন না। কিন্তু নাসির উদ্দিনের ইচ্ছা তিনি জমি লীজ নিয়ে আবাদ করবেন। কিন্তু তাতে বাধ সাধেন তার স্ত্রী বেদেনা খাতুন ও ছেলে মাসুম এবং জামাই আসাদ। এ নিয়ে দেখা দেয় দ্বন্দ্ব। তখন নাসির উদ্দিনের ভাগনে শরীফুল ইসলাম জানতে পেরে সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করেন। কিন্তু নাসিরের স্ত্রী-সন্তান তাকে ভুল বুঝে সমাধান করতে দেননি। ভুক্তভোগী

ভুক্তভোগী নাসির উদ্দিন বলেন, গত ২২ ফেব্রুয়ারি প্রথমে আমাকে বেঁধে পাবনায় নিয়ে যায় এক ডাক্তারের কাছে। সেখানে আমাকে একটা ইনজেকশন দিয়ে কিছু ওষুধ লিখে নিয়ে বাড়িতে আসে। আমি সেই ওষুধ খাই নাই ভয়ে। ইনজেকশনের ব্যথা এখনও আছে। তারপর আমাকে বাড়ি থেকে বের হতে দেয় না।

এর মধ্যে গত ১২ মার্চ আবারো নাসিরের কাছ থেকে জমি লিখে চান ছেলে মাসুম, স্ত্রী বেদেনা, মেয়ে জামাই। তাতে রাজী না হওয়ায় ১৩ মার্চ ভোররাতে সবার অগোচরে মানসিক রোগী সাজিয়ে হাত-পা, কোমর বেঁধে পাবনা মানসিক হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে ডাক্তার দেখিয়ে পার্শ্ববর্তী বেসরকারি মানসিক হাসপাতাল সুরমা ক্লিনিকে ভর্তি করে রেখে আসে। সুস্থ মানুষ হয়েও স্ত্রী, সন্তান, জামাইয়ের ষড়যন্ত্রে সেখানে ৯ দিন ভর্তি ছিলেন তিনি। তারপর থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন।

নাসির উদ্দিনের ভাগনে শরীফুল ইসলাম বলেন, নিখোঁজ মামার সন্ধান চেয়ে বিভিন্নভাবে চেষ্টা করেছি। তার স্ত্রী-সন্তানের কাছে জানতে চাইলে তারা কিছু বলে না। পরে বাধ্য হয়ে গত ১৯ মার্চ চাটমোহর থানায় একটি নিখোঁজ জিডি করি। পরে পুলিশ জানতে পারে পাবনায় সুরমা ক্লিনিকে মানসিক রোগী হিসেবে ভর্তি রয়েছেন নাসির উদ্দিন।

তাকে উদ্ধার করতে পুলিশ ও স্থানীয়রা ক্লিনিকে গেলে কর্তৃপক্ষ প্রথমে কোনো পাত্তা দেয়নি। পরে পুলিশ নাসির উদ্দিনের জবানবন্দি নিয়ে নিশ্চিত হয় তিনি মানসিক রোগী নন। ভয়ে তার স্ত্রী-সন্তানও তাকে হাসপাতাল থেকে ছাড়িয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দেয় পুলিশকে। কিন্তু ২১ মার্চ বাড়ি থেকে পালানোর চেষ্টা করে স্ত্রী বেদেনা খাতুন ও ছেলে মাসুম। টের পেয়ে এলাকাবাসীর সহায়তায় তাদের আটক করি। এরপরও ওইদিনই তাদের সাথে করে পাবনায় সুরমা ক্লিনিকে গিয়ে নাসির উদ্দিনকে উদ্ধার করে নিয়ে আসা হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রত্যক্ষদর্শী রেজাউল করিম, ফজলুর রহমান, মহসিন মোল্লা সহ এলাকাবাসী অনেকে জানান, ‘নাসির উদ্দিন নিখোঁজ হওয়ার পর সবাই ধীরে ধীরে সব জানতে পারে। এটা একটা অমানবিক ঘটনা। সামান্য জমির জন্য বাবাকে কি কোনো ছেলে এভাবে পাগল সাজিয়ে মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করে রাখতে পারে। এরা অমানুষ। সবাইতো নাসির উদ্দিনের সাথে কথা বলছে, কারো তো মনে হলো না তিনি পাগল। এমন বউ-ছেলের শাস্তি হওয়া উচিত।’

অভিযুক্ত নাসির উদ্দিনের ছেলে মাসুম মোল্লা বলেন, ‘আমার বাবা রাতে ঘুমায় না। মধ্যরাতে ঘরের বাইরে এখানে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকে। আবার কথাবার্তাও অসংলগ্ন বলেন। এর আগেও ডাক্তার দেখাইছি। ডাক্তার বলছেন, তার মাথায় সমস্যা আছে। আবার মানসিক হাসপাতালে নিয়ে ডাক্তার দেখাই। সেখানেও তাকে দেখে ওষুধ লিখে দেন ও হাসপাতালে ভর্তি করার পরামর্শ দেন। পরে সরকারি হাসপাতালে সীট না থাকায় পাশের ক্লিনিকে ভর্তি করি। এখানে আমাদের নামে যেসব কথা আব্বা বলছেন তা সঠিক নয়।’

নাসির উদ্দিনের স্ত্রী বেদেনা খাতুন বলেন, ‘ডাক্তার বলছে তার মাথায় সমস্যা আছে। আমাকেও যখন তখন যা তা ভাষা খারাপ করে উলটা পালটা কথা বলে। জমি লিখে নেওয়ার কোনো বিষয় নয়। তখন ছেলে জামাই মিলে ডাক্তার দেখিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনি মুখামুখি করছিলেন জন্য তাকে বাধা হয়েছিল। এখন তিনি যদি সুস্থ হন ভাল কথা।’

এ বিষয়ে চাটমোহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মঞ্জুরুল আলম বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর নিজে সবার সাথে কথা বলে বিষয়টি বোঝার চেষ্টা করেছি। তখন সন্দেহ হওয়ায় পুলিশ অফিসারকে ক্লিনিকে পাঠিয়ে আসলে নাসির উদ্দিন মানসিক রোগী কি না জানার চেষ্টা করি। সেখান থেকে নিশ্চিত হই তিনি মানসিকভাবে অসুস্থ নন। 

ওসি আরো বলেন, এছাড়া হাসপাতালের প্রেসক্রিপশনের ছবি তুলে আমার পরিচিত বন্ধু ডাক্তারকে পাঠিয়ে জানতে পারি ওই ওষুধও মানসিক রোগীর ওষুধ নয়।

আর নাসির উদ্দিনকে উদ্ধার করে আনার পর তার ইচ্ছামতো যেখানে তিনি নিরাপদ মনে করেন সেখানে থাকতে বলা হয়েছে। আসলে নাসির উদ্দিনের জামাই আমাদের ভুল বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন।

মুনতাসির/সাএ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পাঠকের মন্তব্য:

BD24LIVE.COM
bd24live.com is not only a online news portal. We are a family and work together for giving the better news around the world. We are here to give a nice and colorful media for Bangladesh and for the world. We are always going fast and get the live news from every each corner of the country. What ever the news we reached there and with our correspondents go there who are worked for bd24live.com.
BD24Live.com © ২০২০ | নিবন্ধন নং- ৩২
Developed by | EMPERORSOFT
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ info@bd24live.com
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
ইমেইলঃ office.bd24live@gmail.com