
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) উপ-উপাচার্য (প্রো-ভিসি) পদে আওয়ামী পন্থি শিক্ষককে নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন গন-অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান।
এসময় তিনি প্রো-ভিসি নিয়োগ নিয়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম-আহ্বায়ক নুসরাত তাবাসসুমের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ও উল্লেখ করেন।
বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে এক পোস্টের মাধ্যমে চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য তুলে ধরেন রাশেদ খান।
ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেন, গণঅভ্যুত্থানের পরে পিএসসি থেকে বাধ্যতামূলক অবসরে যাওয়া খাদ্য মন্ত্রণালয়ের আওয়ামী সুবিধাভোগী সাবেক সচিব মোছাম্মৎ নাজমানারা খানমের স্বামী সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থি শিক্ষক ড. সাইফুল ইসলামকে যবিপ্রবিতে প্রো-ভিসি হিসেবে নিয়োগের চেষ্টা করে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের কেউ কেউ। এই ঘটনায় নাম এসেছে এনসিপির নেত্রী নুসরাত তাবাসসুমের। যবিপ্রবির একজন শিক্ষক বিষয়টি আমাকে অবহিত করে এবং নুসরাত তাবাসসুমের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে অবহিত করলে আমি বিষয়টি শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে অবহিত করি এবং তথ্য প্রমাণ পাঠায়।
এই ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতা, ঢাবি শিবিরের সাবেক সভাপতি রাফে সালমান রিফাত সরাসরি সদ্য সাবেক শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ স্যারের সাথে কথা বলেন। স্যার সে সময় বলেন, তোমরা সমন্বয়করা কেন এক হয়ে কাজ করতে পারছো না? এটার জন্য তো সমন্বয়ক নুসরাত তাবাসসুম কাজ করছে। সেসময় রাফে সালমান রিফাত নুসরাতকে কল করে জিজ্ঞেস করে, তোমরা কেন আওয়ামীপন্থি শিক্ষক নিয়োগের জন্য সুপারিশ করছো। রিফাতের সাথে আলাপচারিতায় নুসরাত রেগে যায়!
ফেসবুক পোস্টে তিনি আরো লিখেন, কিছুদিন আগে একজন ব্যক্তি আমাকে বলে ভাই, আওয়ামী লীগের আমলে একজন শিক্ষক বঞ্চিত ছিল। তার সবকিছু মোটামুটি ঠিক আছে, রাষ্ট্রপতিরও অনুমোদন আছে। শুধু শিক্ষা সচিব সাইন করলেই হয়ে যায়। এরপর তিনি শিক্ষকের নাম ও প্রতিষ্ঠান খোলেন। যেহেতু নিয়োগটি বন্ধ করার জন্য আমার প্রচেষ্টা ছিল। এক্ষেত্রে নাম বলার সাথে সাথে আমি চিনতে পারি।
এরপর আমি একটু কৌশল অবলম্বন করে ঘটনার আদ্যোপান্ত জানার চেষ্টা করি। ব্যক্তিটি আমাকে বলেন, আপনি একটু বিষয়টা দেখেন, প্রয়োজনে ৩০ লাখ টাকার চেক অগ্রিম দিবো। আপনি বললে, আমি আপনার কাছে চেক নিয়ে আসতে পারি।
আমি তাকে বলি, এসব কাজ তো আমি করিনা। আর কেউ বঞ্চিত থাকলে তো এই সরকারের আমলে এমনিতেই প্রমোশন পাবে। এরপর চিন্তা করি, বিষয়টির রহস্য অনুসন্ধান একটু কাজ করি যে, কারা কারা এর সাথে জড়িত! আমি তাকে বলি, শিক্ষকের নাম্বার আমাকে দেন, আর আমাকে কল দিতে বলেন।
পরের দিন সেই শিক্ষকের সাথে আমার কথা হয়। আমি তাকে জিজ্ঞেস করি, এটা নিয়ে কারা কাজ করছে? কাজটি কতদূর এগিয়েছে, আমার আগে বিস্তারিত জানা দরকার।
তিনি বলেন, সমন্বয়ক নুসরাত তাবাসসুম বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। আমার একজন কাছের লোক তার সাথে যোগাযোগ করেছে। আমি সেই শিক্ষককে বলি, সমন্বয়করা তো এখন সরকারের কাছে গুরুত্বপূর্ণ, তারা হয়ত পারবে। এসময় তিনি বিষয়টি নিয়ে তদন্ত হলে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবেন বলেও জানান।
বর্তমানে তিনি (নুসরাত তাবাসসুম) দেশের বাইরে অবস্থান করায় ক্ষুদে বার্তায় তার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি কোন উত্তর দেননি।
তবে তিনি নিজের ব্যক্তিগত আইডি থেকে ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে জানান, দুয়েক মাস আগে (আমার সঠিক মনেও নাই!!) যশোর প্রযুক্তির কয়েকজন শিক্ষার্থী (এই পোস্টের আমি যোগাযোগ করলে তারা নাম প্রকাশে অস্বস্তি জানায়) আমার কাছে এসে বলে তাদের শিক্ষা উপদেষ্টার কাছে আবেদন আছে, তারা গণস্বাক্ষর সমেত দরখাস্ত এনেছে।
যেহেতু তাদের প্রত্যক্ষ ভাবে আন্দোলনে অংশ নিতে দেখেছি তাই তাদের আবেদনের জন্য আমি উপদেষ্টা সাহেবের পিএস (কিংবা এপিএস! আমার ঠিক মনে নেই তবে ইন্টারনেট ঘেঁটে নাম্বার বের করেছিলাম) মারফত তাদের একটা অ্যাপয়েন্টমেন্ট করে দিই।
উল্লেখ্য, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন গণতান্ত্রিক শিক্ষক পরিষদের নেতা অধ্যাপক ড. এ এফ এম সাইফুল ইসলামকে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) প্রো-ভিসি বানানোর চেষ্টা নিয়ে গণমাধ্যমে তথ্য আসলে তার তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ করেন যবিপ্রবির সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এসময় হাজারের অধিক শিক্ষার্থীর গণস্বাক্ষর নিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ে পাঠান তারা।
অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম আওয়ামী সরকারের আমলের আলোচিত সাবেক সচিব ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুমের স্বামী। অভিযোগ রয়েছে, ২০১৮ সালের নির্বাচনের সময় সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার হিসেবে ভোট কারচুপির মূল কারিগর ছিলেন ড. সাইফুল ইসলামের স্ত্রী নাজমানারা খানুম।
এছাড়া আওয়ামী শাসন আমলে ২০১২ সালে স্ত্রী ড. নাজমানারা খানুমের লবিংয়ে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান বলে অভিযোগ রয়েছে অধ্যাপক সাইফুল ইসলামরে বিরুদ্ধে। তিনি সিকৃবিতে আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন গণতান্ত্রিক শিক্ষক পরিষদের নেতা ছিল।
আওয়ামী পন্থি শিক্ষকদের প্যানেল থেকে দুই দুইবার সিকৃবির সিন্ডিকেট সদস্য (২০১৪-১৬ ও ২০২২-২৪ সাল) নির্বাচিত হন তিনি। এছাড়াও ২০১৫-২০১৭ সালে কৃষি অনুষদের ডিনের দায়িত্ব পালন করেন ড. সাইফুল।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর