
ঘরমুখো মানুষের যানজটহীন যাত্রা নিশ্চিত করতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে ট্রায়াড জেনারেশন স্কোয়াড (টিজিএস) বা ত্রয়ী প্রজন্মের দল। ট্র্যাফিক পুলিশের পাশাপাশি তরুণদের এই উদ্যোগে মিটেছে যানজটের সমাধান। দীর্ঘ লাইনে সময় নষ্ট না করে নির্বিঘ্নে নাড়ির টানে বাড়ি ফিরছেন সাধারণ যাত্রীরা। প্রতিদিন ১২ জনের একটি দল ২ভাগে বিভক্ত হয়ে আঞ্চলিক মহাসড়কের ব্যস্ত মোড়ে নিজেদের উজার করে দিচ্ছেন সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি। দীর্ঘ যানজট যেখানে নিত্যদিনের ঘটনা সেখানে যাত্রীরা কোন বাঁধা ছাড়াই পার হচ্ছেন অনায়াসে। আর এতেই প্রশংসায় ভাসছেন টিজিএস সদস্যরা।
টঙ্গী-ঘোড়াশাল-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের গাজীপুর কালীগঞ্জের তুমলিয়া মোড় (কাপাসিয়া মোড়) এলাকা যেন যানজটের স্বর্গরাজ্য। প্রয়োজনের তুলনায় সড়কটি সরু হওয়ায় অল্পতেই দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এর পাশাপাশি মোড় এলাকাতে কাপাসিয়া থেকে আসা একটি সড়ক মিলিত হয়েছে। যে কারণে সংকীর্ণ এই স্থানে চলন্ত সড়কের মাঝেই যাত্রীদের উঠা নামা করতে হয়, আর এতেই বাঁধ বিপত্তি। স্থানীয়রা বেশ কয়েকবার একটি গোল চত্তরের আবেদন করলেও এখন পর্যন্ত তা আলোর মুখ দেখেনি। ফলে যানজট কে মেনে নিয়েই চলছে গণপরিবহণ।
জানা গেছে, টিজিএস সদস্য মো. নাদিমুল ইসলাম ভূঁইয়ার নেতৃত্বে ১২ সদস্যের একটি দল উদ্যোগ নেয় ঘরমুখো মানুষের যানজটহীন যাত্রা নিশ্চিত করার। যেই ভাবা সেই কাজ। সকাল এবং বিকেলে প্রতি শিফটে ৬ জন করে মোট ১২ জনের একটি দল ট্র্যাফিক পুলিশের পাশাপাশি যানজট নিরসনে কাজ করে চলছে। তুমলিয়া মোড় এলাকার যানজট যেখানে ৩-৪ কি.মি এলাকায় ছড়িয়ে পড়তো সেখানে ঈদের আগে হওয়ার পরেও কোন যানজট লক্ষ্য করা যায়নি। সড়কে যানজট না থাকায় মোড় এলাকার ব্যবসায়ীরাও হচ্ছেন লাভবান।
ব্রাহ্মনবাড়িয়াগামী একটি বেসরকারি পরিবহনের চালক মো. রমজান মাঝি বলেন, ঈদের এই সময়টাতে গাড়ির পাশাপাশি যাত্রীদেরও চাপ থাকে বেশি। আমাদের মাথায় চিন্তা থাকে যতদ্রুত গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবো তত আমাদের জন্য লাভ। আমরা আরেকটি ট্রিপ মারতে পারবো। এবার এখন পর্যন্ত যাত্রীদের চাপ কম থাকলেও গাড়ির চাপ বেশি। তুমলিয়া মোড় এলাকায় অন্যান্য সময় যানজট লেগেই থাকতো। এইবারই প্রথম যানজট পেলাম না।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া গামী যাত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, আমি টঙ্গী থেকে উঠেছি ব্রাহ্মণবাড়িয়া যাবো ঈদের ছুটিতে। গাড়িতে উঠেই আতঙ্কে ছিলাম এই মোড়ের যানজটের জন্য। এসে দেখি কোন রকম জটলা নেই। দেখে অনেক ভালো লাগলো। গতবার এখানে প্রায় ৩ ঘন্টা আটকে ছিলাম।
টিজিএস সদস্য মো. নাদিমুল ইসলাম ভূইয়া জানান, তিনি স্কাউটিং এর সাথে জড়িত। তিনি এবং তার সাথে সহযোগী যারা রয়েছেন তারা কিছুদিন ধরেই পর্যবেক্ষণ করেন তুমলিয়া মোড় এলাকাতে ভীষণরকম যানজট তৈরি হচ্ছে। যানজট এতটাই দীর্ঘ যে যাত্রীদের বহু সময় শুধু গাড়িতেই বসে সময় নষ্ট করতে হচ্ছে। যেহেতু সামনে ইদ তাই তারা চিন্তা করলো স্বেচ্ছায় ট্র্যাফিক পুলিশের সাথে ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণে সহযোগিতা করবে। রোযা রেখে এই দীর্ঘসময় কাজ করতে কষ্ট হলেও সাধারণ মানুষের কাজে লাগতে পেরে দারুণ উচ্ছ্বসিত তারা। যে কারণে সাধারণ মানুষের প্রশংসায়ও ভাসছেন সমানভাবে।
কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তনিমা আফ্রাদ বলেন, কালীগঞ্জের কাপাসিয়া মোড়/ তুমলিয়া মোড় এলাকা একটি ব্যস্ততম জায়গা। যেহেতু মোড় এলাকা তাই এখানে বহু যাত্রীর সমাগম হয় এবং যাত্রীরা এখান থেকেই উঠানামা করে থাকে। যাত্রীদের এই ওঠানামাকে কেন্দ্র করে দূরপাল্লার গণপরিবহণগুলোকেও দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। যেহেতু প্রয়োজনের তুলনায় সড়কটি সরু তাই অল্পতেই যানজট তীব্র আকার ধারণ করে। পৌরসভা থেকে নিয়োগপ্রাপ্ত ৩ জন সেই মোড়ে কাজ করলেও তারা সামাল দিতে পারছিল না। টিজিএস সদস্যদের এমন উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়। আমরা তাদের মঙ্গল কামনা করছি।
শাকিল/সাএ
সর্বশেষ খবর