
নিত্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন কাজে আমরা প্রতিদিন মোবাইল ফোন ব্যবহার করি। মোবাইল ফোনের ব্যাটারির চার্জ দ্রুত শেষ হয়ে যাওয়া এবং ব্যাটারির চার্জ ধারণক্ষমতা কমে যাওয়া এখন নিয়মিত সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।তবে, বেশ কিছু পদ্ধতি অনুসরণ করলে আমাদের মোবাইল ফোনের ব্যাটারির স্বাস্থ্য ভালো রাখতে পারি। অর্থাৎ, সতর্কতার সহিত কিছু নিয়ম মেনে মোবাইল ফোন ব্যবহার করলে ফোনের ব্যাটারি হেলথ দ্রুত কমে যাওয়া থেকে রক্ষা করা যায়।ফোনের ব্যাটারি হেলথ ভালো এমন স্মার্টফোন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দাম সম্পর্কে জানা যাবে MobileDokan এর ওয়েব সাইট ভিজিট করে। এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বাংলাদেশের মধ্যে সকল মোবাইল ফোন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সঠিকভাবে তুলে ধরা হয়।
এখানে মোবাইল ফোনের ব্যাটারি ভালো রাখার উপায় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আপনার ফোনের ব্যাটারি নিয়ে চিন্তিত হলে, শেষ অব্দি পড়ুন।
মোবাইল ফোনের ব্যাটারি ভালো রাখতে করণীয়
আপনার মোবাইল ফোনের ব্যাটারির স্বাস্থ্য যদি ভালো রাখতে চান, দীর্ঘ সময় ব্যাটারি ব্যাকআপ পেতে চান, তাহলে বেশ কিছু ধাপ অনুসরণ করতে হবে। এগুলো অনুসরণ করে ফোন ব্যবহার করলে ব্যাটারির চার্জ দ্রুত শেষ হবেনা এবং ব্যাটারি হেলথ সহজে কমে যাবেনা।
এতে করে, দীর্ঘ সময় যাবত আমরা আমাদের ফোনটি ব্যবহার করতে পারবো ব্যাটারি হেলথ কমে যাওয়া বা নষ্ট হওয়ার চিন্তা ছাড়াই। ফলে, নতুন ব্যাটারি ক্রয় করতে হবেনা। যেসব পদ্ধতি অনুসরণ করে ব্যাটারি হেলথ ভালো রাখা যায় সেগুলো নিম্নরূপ।
ব্যাটারি সেভিং টিপস
মোবাইল ফোনের চার্জ দ্রুত শেষ হওয়ার একটি প্রধান কারণ হলো কিছু অপ্রয়োজনীয় সেটিংস চালু রাখা এবং অ্যাপ ব্যাকগ্রাউন্ডে চলতে থাকা। ব্যাটারির চার্জ সাশ্রয় করার জন্য আপনার ফোনের স্ক্রিনের ব্রাইটনেস কমিয়ে রাখুন অথবা অটো ব্রাইটনেস ফিচারটি অন করে রাখুন। প্রয়োজন না হলে ওয়াই-ফাই, ব্লুটুথ এবং জিপিএস বন্ধ করে দিন।
পুরনো ব্যাটারি সময়ের সাথে সাথে তার কার্যক্ষমতা হারায়। এছাড়াও, একসাথে অনেক অ্যাপ ব্যবহার করলে, ব্যাকগ্রাউন্ডে অ্যাপ চালু থাকলে, এবং দুর্বল নেটওয়ার্কের কারণে ফোন বেশি পাওয়ার কনজিউম করে । হাই রেজোলিউশনের ভিডিও দেখা বা গেম খেলার সময়ও ব্যাটারি দ্রুত শেষ হয়। এছাড়া, একসাথে অনেক বেশি ছবি তোলা বা ভিডিও করলেও ব্যাটারির চার্জ দ্রুত শেষ হয়।
ঘরের বাইরে গেলে ফোনের ব্রাইটনেস বেশি দিতে হয়। এক্ষেত্রে ফোন বেশি ব্যবহার করলে দ্রুত চার্জ শেষ হয়। তাই, বাইরে গেলে ব্যাটারি সেভিং মোড অন করে রাখুন। অটো ব্রাইটনেস মোড সেট করলে এবং প্রয়োজন ছাড়া কোনো অ্যাপ ব্যাকগ্রাউন্ডে অন না রাখলে ব্যাটারির চার্জ সেভ করতে পারবেন।
আপনার ফোনে যদি এমন কোনো অ্যাপ থাকে যা আপনি নিয়মিত ব্যবহার করেন না, তবে সেগুলো আনইনস্টল করে দিন। ব্যাকগ্রাউন্ডে চলতে থাকা অ্যাপগুলো ব্যাটারির চার্জ দ্রুত শেষ করে। টাস্ক ম্যানেজার ব্যবহার করে অপ্রয়োজনীয় অ্যাপগুলো বন্ধ করে দিন বা সেটিংস থেকে আনইনস্টল করে দিন।
ব্যাটারি লাইফ বাড়ানোর উপায়
মোবাইল ব্যাটারির সঠিক পরিচর্যা করলে এর হেলথ ভালো থাকে। ফোনকে সরাসরি সূর্যের আলো বা অতিরিক্ত তাপে রাখবেন না। ফোন চার্জে থাকা অবস্থায় গেম খেলা বা ভিডিও দেখা থেকে বিরত থাকুন। চেষ্টা করুন আপনার ফোনের ব্যাটারি ২০% এর নিচে নামতে না দেওয়া এবং ৮০% এর উপরে চার্জ না করা।
অতিরিক্ত গরম বা ঠান্ডা তাপমাত্রা মোবাইল ফোনের ব্যাটারির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। দীর্ঘ সময় ধরে সরাসরি সূর্যের আলোতে ফোন ব্যবহার করা বা গরম স্থানে ফোন রেখে দেওয়া উচিত নয়। একইভাবে, অতিরিক্ত ঠান্ডা স্থানেও ফোন রাখা উচিত নয়। স্বাভাবিক তাপমাত্রায় ফোন ব্যবহার করলে ব্যাটারির স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
এছাড়া, ফোনের ব্যাটারির আয়ু বাড়ানোর জন্য কিছু কৌশল অবলম্বন করতে পারেন। এগুলো হচ্ছে —
• অতিরিক্ত গরম বা ঠান্ডায় ফোন ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।
• ফোনের সফটওয়্যার নিয়মিত আপডেট করুন।
• থার্ড-পার্টি ব্যাটারি সেভিং অ্যাপ ব্যবহার না করাই ভালো।
• যেকোনো অ্যাপ ব্যবহার করার পর অ্যাপটি ব্যাকগ্রাউড থেকে ক্লোজ করে দিন।
এছাড়া, নেটওয়ার্ক কম রয়েছে বা একদম নেটওয়ার্ক নেই এমন স্থানে সিম অফ করে রাখুন বা এয়ারপ্লেন মোড অন করে রাখুন। কারণ, যখন যথেষ্ট নেটওয়ার্ক পাবেনা, ফোন চেষ্টা করবে নেটওয়ার্ক সিগন্যাল পাওয়ার জন্য। এতে করে ফোনটি অনেক গরম হওয়া শুরু করবে এবং ব্যাটারি কনজিউম করবে বেশি। এভাবে চলতে থাকলে ব্যাটারি লাইফ কমে যায়।
মোবাইল চার্জিং নিয়ম
মোবাইল ফোন চার্জ করার সঠিক নিয়ম জানা থাকলে ব্যাটারির লাইফ বাড়ানো যায়। ফোনকে রাতভর চার্জে বসিয়ে রাখার প্রয়োজন নেই। যখন ব্যাটারি ২০% এর কাছাকাছি আসে তখন চার্জ দিন এবং ৮০% পর্যন্ত চার্জ হলেই চার্জার থেকে সরিয়ে ফেলুন। ফাস্ট চার্জিং টেকনোলজি ব্যবহার করলে খেয়াল রাখবেন যেন আপনার ফোন এবং চার্জার উভয়তেই এই টেকনোলোজি থাকে। শুধু ফোন অথবা শুধু চার্জারে ফাস্ট চার্জিং টেকনোলজি থাকলে তা কাজে দিবেনা।
ফোনের চার্জিং পোর্ট পরিষ্কার রাখুন এবং ক্ষতিগ্রস্ত চার্জার ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। অপটিমাইজড ব্যাটারি চার্জিং অপশনটি চালু রাখুন (যদি আপনার ফোনে থাকে), এটি আপনার ব্যাটারিকে অতিরিক্ত চার্জ হওয়া থেকে রক্ষা করবে। কিছু ফোনে এই ফিচারটি একটি অ্যাডভান্স দেয়া থাকে। এটি অন করলে আপনি সেট করতে পারবেন যে কত পার্সেন্ট চার্জ হলে চার্জ হওয়া বন্ধ হবে।
ডিসপ্লের সেটিংস পরিবর্তন
ফোনের ডিসপ্লে সেটিংস পরিবর্তন করে আপনি ব্যাটারির চার্জ সাশ্রয় করতে পারেন। অটো ব্রাইটনেস অপশনটি বন্ধ করে আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী স্ক্রিনের উজ্জ্বলতা সেট করুন। লাইভ ওয়ালপেপার ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন, কারণ এগুলো ব্যাটারির উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে। ডার্ক মোড ব্যবহার করলে (যদি আপনার ফোনে থাকে) ব্যাটারির চার্জ কিছুটা হলেও সাশ্রয় করা সম্ভব।
নোটিফিকেশন কন্ট্রোল
বিভিন্ন অ্যাপের নোটিফিকেশন অন থাকলে তা নিয়মিতভাবে নোটিফিকেশন সেন্ড করার মাধ্যমে ফোনের স্ক্রিন অন করে এবং ব্যাটারি খরচ করে। তাই অপ্রয়োজনীয় অ্যাপের নোটিফিকেশন বন্ধ করে দিন। শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় অ্যাপগুলোর নোটিফিকেশন চালু রাখুন।
অ্যাপ ইনস্টল করার সময় যেসব অ্যাপ থেকে নোটিফিকেশন পেতে চান না, সেগুলোতে পারমিশন দিবেন না। ইতোমধ্যে ইনস্টল করা অ্যাপগুলোর নোটিফিকেশন বন্ধ করতে পারবেন সেটিংস থেকে।
সফ্টওয়্যার আপডেট
আপনার মোবাইল ফোনের অপারেটিং সিস্টেম এবং অ্যাপগুলো নিয়মিত আপডেট করুন। অনেক আপডেটে ব্যাটারি ম্যানেজমেন্টের উন্নতি করা হয়। যার ফলে ব্যাটারির কার্যক্ষমতা বাড়ে। তাই যখনই কোনো আপডেট আসে, তা ইনস্টল করতে ভুলবেন না।
ফোনের সফটওয়্যার আপডেট আসলে আপডেট করে নিবেন। নতুন ফোনের ক্ষেত্রে ১/২ বছর নিয়মিত সফটওয়্যার আপডেট আসে। আপডেট আসলে আপডেট করে নিবেন। এছাড়া, প্লে স্টোর থেকে যেসব অ্যাপের আপডেট আসবে, সেগুলো আপডেট করে নিবেন।
এক্সট্রিম পাওয়ার সেভিং মোড ব্যবহার
কিছু স্মার্টফোনে এক্সট্রিম পাওয়ার সেভিং মোড বা সুপার পাওয়া সেভিং মোড নামক একটি অপশন থাকে। যখন ফোনের চার্জ খুব কম হবে এবং আপনি দীর্ঘ সময় পর্যন্ত ফোন ব্যবহার করতে চান, তখন এই মোডটি ব্যবহার করতে পারেন। এই মোডে শুধুমাত্র জরুরি কিছু ফাংশন চালু থাকে এবং বাকি সবকিছু বন্ধ করে দেওয়া হয়, ফলে ব্যাটারির চার্জ অনেকক্ষণ পর্যন্ত টিকে থাকে।
জরুরি কিছু ফাংশনের ক্ষেত্রে কল করা, ম্যাসেজ করার মতো ফাংশনগুলো চালু থাকে। ফলে, প্রয়োজনের সময় ফোনটি অনেক সময় যাবত ব্যাকআপ দিবে।
জিপিএস সেটিংস
জিপিএস বা লোকেশন সার্ভিস ফোনের ব্যাটারির একটি বড় অংশ খরচ করে। যখন আপনার লোকেশন জানার প্রয়োজন হয় না, তখন জিপিএস বন্ধ করে রাখুন। কিছু অ্যাপ ব্যাকগ্রাউন্ডে আপনার লোকেশন ট্র্যাক করতে থাকে, যা ব্যাটারির চার্জ দ্রুত শেষ করে। তাই অ্যাপের লোকেশন পারমিশন নিয়ন্ত্রণ করুন এবং প্রয়োজনের বাইরে লোকেশন সার্ভিস বন্ধ রাখুন।
অর্থাৎ, আপনার যখন প্রয়োজন হবে, শুধু তখনই জিপিএন সেটিংসটি অন করুন। কাজ শেষ হয়ে গেলে জিপিএস অফ করে দিন। এতে করে প্রতিদিন ব্যাটারি ব্যাকআপ ভালো পাবেন এবং দীর্ঘ সময় ব্যবহারে ব্যাটারির হেলথ ভালো থাকবে।
অরিজিনাল চার্জার ব্যবহার করুন
মোবাইল ফোনের সাথে আসা অরিজিনাল চার্জার ব্যবহার করা সবচেয়ে ভালো। অন্য কোনো চার্জার ব্যবহার করলে তা ফোনের ব্যাটারির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। বিশেষ করে কম দামি বা নন-ব্র্যান্ডেড চার্জার ব্যবহার করা উচিত নয়। এতে করে ব্যাটারি ধীর গতিতে চার্জ হয় এবং ব্যাটারির উপর খুবই খারাপ প্রভাব পড়ে।
অনেক সময় কমদামী বা নকল চার্জার ব্যবহার করার কারণে ফোনের ব্যাটারি এবং ফোন ব্লাস্ট হয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে থাকে।
পাওয়ার ব্যাংক ব্যবহার করুন
যদি বাইরে কোথাও ঘুরতে যান বা এমন কোথাও যান, যেখানে গেলে ফোন চার্জ করার মতো চার্জিং পোর্ট পাওয়া যাবেনা বা বিদ্যুৎ পাওয়া যাবেনা, সেসব জায়গায় যাওয়ার আগে একটি পাওয়ার ব্যাংক সাথে নিন। এতে করে, ফোনের চার্জ কমে গেলে পাওয়ার ব্যাংক ব্যবহার করে ফোনটি আবারও ফুল চার্জ করে নিতে পারবেন।
পাওয়ার ব্যাংক সাথে নিয়ে যেকোনো জায়গায় যাওয়া উত্তম কাজ। প্রয়োজনের সময় ফোনের চার্জ শেষ হওয়া থেকে বাঁচতে পারবেন এই পদ্ধতি অনুসরণ করে।
শেষ কথা
মোবাইল ফোনের ব্যাটারি ভালো রাখার উপায় নিয়ে এই পোস্টে বিভিন্ন টিপস শেয়ার করা হয়েছে যা MobileMaya এর ওয়েবসাইট থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। কিছু সতর্কতা মেনে মোবাইল ফোন ব্যবহার করলে ব্যাটারির চার্জ দীর্ঘ সময় থাকে এবং ব্যাটারি লাইফ ভালো থাকে। পোস্টে উল্লিখিত পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করে আপনার ফোনের ব্যাটারি হেলথ ভালো রাখতে পারবেন।
সর্বশেষ খবর
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এর সর্বশেষ খবর