
ভোলার খায়েরহাট ৩০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে চিকিৎসক ও নার্সের সংকটে চিকিৎসাসেবা প্রবলভাবে ব্যাহত হচ্ছে। তিন মাস ধরে বন্ধ সেখানে রোগী ভর্তি বন্ধ রয়েছে। নেই কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষার যন্ত্র।
ছোটখাটো বিষয় ছাড়া চিকিৎসা হয় না জরুরি বিভাগেও। তিন উপজেলার মধ্যবর্তী খায়েরহাটে হাসপাতাল হওয়ায় পাঁচ ইউনিয়নের প্রায় দেড় লাখ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার কথা থাকলেও তা মিলছে না। বাধ্য হয়ে রোগীদের চিকিৎসা নিতে ভোলা সদর হাসপাতালে যেতে হয়। এতে বেড়েছে তাদের ভোগান্তি।
জানা গেছে, ভোলা সদর উপজেলার দক্ষিণ দিঘলদী, দৌলতখান উপজেলার দক্ষিণ জয়গনগর, উত্তর জয়নগর, বোরহানউদ্দিন উপজেলার কুতুবা ও গঙ্গাপুর ইউনিয়নসহ আশপাশের প্রায় দেড় লক্ষাধিক মানুষের চিকিৎসাসেবার ভরসাস্থল খায়েরহাট ৩০ শয্যার হাসপাতাল। বর্তমানে চিকিৎসক ও নার্স সংকটে বন্ধ হওয়ার মুখে হাসপাতালটি।
সরেজমিন গিয়ে জানা যায় খায়েরহাটের ১০ শয্যার হাসপাতালটিকে আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসহ ২০১৭ সালের ২৮ অক্টোবর ৩০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। এরপর পুরোদমে হাসপাতালটি থেকে স্বাস্থ্যসেবা পেয়েছেন সেখানকার বাসিন্দারা।
প্রথমদিকে হাসপাতালটি ভালোভাবে সেবা দিলেও দুই বছর ধরে ধীরে ধীরে এখানে জনবল সংকট দেখা দেয়। সম্প্রতি এ সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। গত ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে চিকিৎসকশূন্য হয়ে পড়েছে হাসপাতালটি।
হাসপাতালটিতে নয়জন চিকিৎসকের পদের বিপরীতে মাত্র একজন ডেন্টাল চিকিৎসক কর্মরত রয়েছেন এবং তিনি একইসঙ্গে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া বর্তমানে বোরহানউদ্দিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন চিকিৎসককে খায়েরহাট হাসপাতালে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে সিনিয়র স্টাফ নার্সদের ১৩টি পদের মধ্যে ১০টি পদ শূন্য। যার কারণে চিকিৎসক ও নার্স সংকটে পুরোপুরি মুখথুবড়ে পড়েছে জরুরি বিভাগ, আন্তবিভাগসহ সব বিভাগের চিকিৎসা কার্যক্রম। গত তিন মাসে হাসপাতালে একজন রোগীও ভর্তি করতে পারেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। যা নিয়ে রীতিমতো ক্ষোভে ফুঁসছেন এলাকাবাসী।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. খালেক মিয়া (৪৫) জানান, চিকিৎসক ও নার্স সংকটের কারণে খায়েরহাট ৩০ শয্যা হাসপাতালে গত ১৯ নভেম্বরের পর থেকে আন্তবিভাগে একজন রোগীও ভর্তি করাতে পারেনি। এখানকার বেশির ভাগ মানুষ দরিদ্র, সরকারি এ হাসপাতালই তাদের শেষ ভরসা। এখানকার কোনো মানুষ অসুস্থ হলে তাদের এখন ভোলা সদর হাসপাতাল অথবা বরিশালে নিতে হয়, যা অত্যন্ত ব্যয়বহুল।
নবজাতক সন্তানকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছেন মানজিয়া আক্তার। তিনি বলেন হাসপাতালে আসার পর জানতে পারলাম এখানে কোন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই।
সাদেক ফরাজি নামে এক রোগী বলেন, ‘মেঝেতে পরে গিয়ে বুকে ও কোমরে ব্যথা পেয়েছি। খায়েরহাট হাসপাতালে গেলে ডাক্তার বলেছেন এক্স-রে ছাড়া কিছু বলা যাবে না। এখানে পরীক্ষার যন্ত্রপাতি না থাকায় ভোলা সদর হাসপাতালে গিয়ে পরীক্ষা করাতে বললেন ডাক্তার।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হেলপিং হ্যান্ড সোশ্যাল ফোরামের সভাপতি রাইসুল আলম বলেন, ‘এই হাসপাতালে কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো হয় না। চিকিৎসক আন্দাজের ওপর ওষুধ দেন। ফলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে রোগ ভালো হয় না। আমরা চাই, সব সংকট দূর করে হাসপাতালটি আমাদের চিকিৎসাসেবায় পুরোদমে চালু করা হোক।’
খায়েরহাট ৩০ শয্যা হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ডা. আরেফিন রশিদ বলেন, ‘প্রয়োজনীয় জনবল সংকটের কারণে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে। তার পরও যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। জনবল সংকট কেটে গেলে আন্তবিভাগও চালু হবে।
ভোলা সিভিল সার্জন ডা. মো. মনিরুল ইসলাম জানান খায়েরহাট ৩০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সসহ সব সমস্যা সমাধানে লিখিতভাবে কর্তৃপক্ষকে জানানোর পর একজন চিকিৎসককে নিয়োগ দেওয়া হয়। তবে তিনি এখনো যোগদান করেননি।
বর্তমানে ওই হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে। এটি দ্রুত সমাধানের চেষ্টা চলছে। পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগ হলে সব সংকট কেটে যাবে।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর