
প্রায় তিনশত বছরের ঐতিহ্যবাহী টটুয়ার মেলা হতে সরকার প্রতি বছর রাজস্ব আয় করে থাকে। কিন্তু গত তিন বছর দরপত্র আহ্বান না করায় মেলা উদ্যাপন কমিটি ঐতিহ্যবাহী টটুয়ার মেলার আয়োজন করে অর্ধ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
এতে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারিয়েছে সরকার। পূজা ও মেলা উদ্যাপন কমিটি অন্তিম সময় মেলার আবেদন করে যাতে প্রশাসন দরপত্র আহ্বানের কোন সুযোগ না পায়। এ কৌশল করে গত তিন বছর মেলার আয়োজন করে অর্ধ কোটি টাকা তুলে নিজেরাই পকেটস্থ করেছে।
চলতি বছরও একই স্টাইলে মেলার আয়োজন করে সরকারকে রাজস্ব থেকে বঞ্চিত করার পায়তারা চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তাদের কৌশলে মেলা ঠিকই হবে, দোকান প্রতি চাঁদাও নিবে, তাদের পকেটে টাকাও ঢুকবে, শুধু রাজস্ব দিবে না সরকারকে।
সূত্র জানায়, ঐতিহ্যবাহী টটুয়ার মেলাটি প্রায় তিনশত বছর ধরে কিশোরগঞ্জ উপজেলার মেলাবর টটুয়ার ডাঙ্গায় অনুষ্ঠিত হয়। প্রতি বছর মেলাটির নিলাম দরপত্র আহ্বান করা হয় এবং এ থেকে সরকার রাজস্ব পেয়ে থাকে। সর্বশেষ ২০১৯ সালে মেলাটির দরপত্র আহ্বান করা হলে মোখলেছুর নামে একজন ব্যক্তি ৩ লক্ষ ২৭ হাজার টাকায় ইজারা নেয়।
সে বছর মেলাটি থেকে সর্বশেষ রাজস্ব পায় সরকার। এরপর দেশে করোনা শুরু হলে ২০২০ ও ২০২১ সালে মেলাটি হয়নি। গত ২০২২ সাল থেকে মেলাটি আবার চালু হলেও গত তিন বছর নিলাম দরপত্র আহ্বান করা হয়নি।
এতে সরকার প্রায় ১০ লক্ষ টাকা রাজস্ব হারিয়েছে। ফলে এ টাকাগুলো সরকারের ফান্ডে না ঢুকে, পকেটস্থ হয়েছে আয়োজনকারীদের। অপর দিকে গত তিন বছর নিলাম ছাড়াই ঐতিহ্যবাহী টটুয়ার মেলার আয়োজন করে একটি চক্র প্রায় অর্ধ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এতে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারান সরকার।
অন্যদিকে অনুমতি ও ইজারা ছাড়া মেলা আয়োজন করায় বিপাকে পড়ে প্রশাসন। এ বছরও চক্রটি সরকারকে রাজস্ব থেকে বঞ্চিত করতে কৌশল হিসেবে শেষ সময় মেলার অনুমতির জন্য আবেদন করেছে। যাতে প্রশাসন ইজারার জন্য দরপত্র বিজ্ঞপ্তি প্রকাশসহ অন্যান্য প্রক্রিয়া করতে না পারে।
সূত্র জানায়- অন্তিম সময় এসে মেলার অনুমতির আবেদন করলে প্রশাসন ইজারা দেয়ার জন্য দরপত্র বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করার সময় পায় না, কারণ দরপত্র বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ, দরপত্র মূল্যায়নসহ দরপত্র প্রক্রিয়া করতে বেশ ক’দিন সময় লাগে। ফলে ইজারা ছাড়াই পূজা উদ্যাপন কমিটি ঠিকই মেলার আয়োজন করে ফ্রি স্টাইলে চাঁদাবাজি করে লাখ লাখ টাকা তুলে নেয়। অন্তিম সময়ে মেলার অনুমতির জন্য আবেদন দিলে প্রশাসনের পক্ষে ইজারা দেয়া সম্ভব হবে না এ কৌশলটি কয়েক বছর ধরে চক্রটি করে আসছে। ফলে মেলা ঠিকই হবে, দোকান প্রতি টাকাও উত্তোলন হবে, শুধু রাজস্ব হারাবে সরকার।
টটুয়ার ডাংগার এলাকাবাসী জানান- প্রায় তিনশত বছর ধরে টটুয়ার মেলা অনুষ্ঠিত হয়। শ্রী শ্রী অন্নপূর্ণা পূজা ও বউ মেলা উপলক্ষ্যে পূর্ব পুরুষদের সময় থেকে মেলাটি হয়ে আসছে। মেলায় প্রায় হাজার ছোট বড় দোকান বসে। বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা হতে বাহারি পণ্যের সমাহার নিয়ে ব্যবসায়ীরা মেলায় দোকান দেয়। আসবাবপত্র, ট্রাঙ্ক, স্টিলের পণ্য, বড় বড় মাছ, কৃষি কাজের যন্ত্রপাতি, কৃষিপণ্য, খেলনা, কসমেটিক্স, হরেক রকম খাবারসহ বিভিন্ন পণ্যে ভরে উঠে মেলার মাঠটি।
এছাড়া সার্কাস, পুতুল নাচ, মোটরসাইকেল খেলা, শিশুদের বিনোদনের বিভিন্ন ব্যবস্থাও থাকে। ফলে সরকারিভাবে নিলাম দিয়ে মেলাটি ইজারা দেয়া হয়। কিন্তু গত তিন বছর ধরে অদৃশ্য কারণে ইজারা দেয়া হয়নি। এতে একটি চক্র মণ্ডবের কথা বলে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তারা ফ্রি স্টাইলে প্রতিটি দোকানে ২০ থেকে ১৫ হাজার টাকা চাঁদা তুলেছে। কমিটি প্রায় তিন বছরে অর্ধ কোটি টাকা চাঁদাবাজি করেছে। তাদের প্রভাবের কারণে কেউ কোন কথা বলতে পারেনি। ইজারার মাধ্যমে মেলাটি হলে আইন শৃঙ্খলা স্বাভাবিক থাকাসহ কেউ চাঁদাবাজি করতে পারবে না বলে মনে করছে এলাকাবাসী।
বড়ভিটা ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ফজলার রহমান বলেন, ঐতিহ্যবাহী টটুয়ার মেলাটি কয়েক বছর ধরে ইজারা হয়নি। এ বছরও হবে কিনা জানি না, তবে মেলাটি ইজারা দেয়া হলে সরকার রাজস্ব পাবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মৌসুমী হক আমার দেশকে জানান, এ বিষয়ে আমি জানতাম না। কয়েকদিন আগে পূজা উদ্যাপন কমিটির নামে দুই দিনব্যাপী টটুয়ার মেলা অনুমতির জন্য আবেদন করে। তখন আমি ফাইলপত্র দেখে আবেদনটি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পাঠিয়েছি। এখন পর্যন্ত কোন অগ্রগতি পাইনি।
তিনি আরও জানান, তারা যে মেলা করবে সে বিষয়ে আমাদের আগে কিছু বলেনি। একদম অন্তিম সময় এসে আবেদন দিয়েছে। আগে অবগত করলে আমাদের তরফ থেকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হত। গত তিন বছর কেন ইজারা দেয়া হয়নি আমার জানা নেই।#
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর