
সৌন্দর্যের লীলাভূমি ‘সাগরকন্যা’ খ্যাত কুয়াকাটা। সমুদ্র সৈকতে দাঁড়িয়ে দেখা যায় সূর্যোদয়-সূর্যাস্তের অপরূপ দৃশ্য, লাল কাঁকড়ার সাথে অবিরাম ছোটাছুটি, বালুকাবেলায় প্রিয়জনের সাথে হাঁটাহাঁটি, দিগন্তজোড়া আকাশ আর সমুদ্রের নীল জলের তরঙ্গায়িত ঢেউ ও উড়ে যাওয়া সাদা গাঙচিলের দল, মাছ শিকারের জন্য যাওয়া লড়াকু জেলেদের চলাচল। সৈকতের এক পাশে বিশাল সমুদ্র আর অন্য পাশে রয়েছে নারিকেল গাছের সারি, পরিচ্ছন্ন বেলাভূমি, অনিন্দ্য সুন্দর সৈকত এবং ম্যানগ্রোভ বন, যা কুয়াকাটাকে দিয়েছে ভিন্ন মাত্রা।
কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের অপরূপ মনোমুগ্ধকর নৈসর্গিক সৌন্দর্যের টানে প্রতিবছরই ঈদুল ফিতরের ছুটিতে পর্যটকদের ঢল নামে। সমুদ্র পাড়ের এই নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে ঈদের ছুটিতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন লক্ষ লক্ষ পর্যটক। চাইলে আপনিও আপনার পরিবার নিয়ে চলে আসতে পারেন এই ঈদে। এবারের ঈদেও পর্যটকদের বরণ করে নিতে পর্যটনকেন্দ্র, হোটেল-মোটেল ও রেস্তোরাঁগুলো প্রস্তুত করা হয়েছে। তবে আশানুরূপ অগ্রিম বুকিং না পাওয়ায় কিছুটা হতাশ ব্যবসায়ীরা।
কুয়াকাটায় প্রায় ২০০টি আবাসিক হোটেল রয়েছে, যেখানে ৩০ হাজারের বেশি পর্যটক থাকতে পারেন। সাধারণত ঈদের আগে ৭০-৮০% অগ্রিম বুকিং হয়ে যায়, তবে এবার তা ৪০-৫০% এর বেশি হয়নি। কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ইব্রাহিম ওয়াহিদ জানান, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার বুকিং কম।
হোটেল সিকদার রিসোর্ট অ্যান্ড ভিলাসের এজিএম আল-আমিন আপন জানান, “ঈদের পর ২০% ছাড় দিয়ে বুকিং নেওয়া হচ্ছে, এতে ৫০% কক্ষ আগেই ভাড়া হয়ে গেছে। তবে গত বছরের তুলনায় এখনও বুকিং কম।”
সরেজমিনে দেখা গেছে, কুয়াকাটার আবাসিক হোটেলগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে, রেস্তোরাঁগুলো ঐতিহ্যবাহী খাবার তৈরির প্রস্তুতি নিয়েছে। ট্যুর অপারেটরদের আশা, ঈদের ছুটিতে পর্যটকদের আনাগোনা বাড়বে এবং তারা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আসল রূপ উপভোগ করতে পারবেন।
আচার ব্যবসায়ী রাসেল রুম্মান বলেন, "রমজানে বিক্রি কম থাকলেও ঈদের পর পর্যটকদের আনাগোনায় বেচাকেনা বাড়বে। দেশের বিভিন্ন জেলার সঙ্গে কুয়াকাটার সংযোগ সহজ হওয়ায় এবার আরও বেশি পর্যটক আসতে পারেন।"
ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব কুয়াকাটা (টোয়াক) সেক্রেটারি জেনারেল জহিরুল ইসলাম বলেন, "সপ্তাহজুড়ে প্রতিদিন ৩০-৪০ হাজার পর্যটক আসতে পারেন। যারা অগ্রিম বুকিং দিয়েছেন, তারা সাশ্রয়ীভাবে ভ্রমণের সুযোগ পাবেন।"
ঈদের ছুটি পেয়েই সমুদ্রের টানে ছুটে আসা একদল তরুণের সঙ্গে দেখা মেলে প্রতিবেদকের। সেই তরুণদের মধ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও নাট্যশিল্পী সাব্বির আহমেদ জিয়ামের সঙ্গে কথা হয় প্রতিবেদকের। জিয়াম বলেন, “পৃথিবীর দুটি মাত্র অঞ্চলে একই স্থানে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত দেখা যায়। বাংলাদেশের সেই স্থানটি হলো কুয়াকাটা। বিশাল সমুদ্রের নীল জলরাশি দোলনার মতো যখন দুলে দুলে তীরে আসতে থাকে, তখন পূর্ব আকাশে সূর্যের হালকা রক্তিম বৃত্তের আলোতে আলোকিত হয়ে পাল্টে যায় কুয়াকাটার সমুদ্রের নীলাভ জল। লাল বর্ণের সূর্যটা অল্প সময়ের মধ্যেই পূর্ণ বৃত্তে রূপ নেয়। সদ্য জাগা রক্তিম সূর্য, নিচে সমুদ্রের নীল জল, দীর্ঘ বেলাভূমি আর সমুদ্রতটের পাশের ঘন সবুজ ঝাউবনের সমন্বয়ে কুয়াকাটা সৈকত হয়ে ওঠে শিল্পীর আঁকা কোনো ছবি। আর এই অপরূপ সৌন্দর্যকে কাছ থেকে দেখতে কে মিস করতে চায় বলুন? তাই ছুটি পেয়েই বন্ধুদের নিয়ে চলে এসেছি সাগরকন্যার বুকে।”
কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার মো. হাবিবুর রহমান জানান, ঈদে ব্যাপক পর্যটক সমাগম হবে বলে পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে টহল জোরদার করা হয়েছে। হোটেল-রেস্তোরাঁয় তদারকি, সৈকতে নজরদারি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর