
গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা বিটের আওতাধীন সিনাবহ বাজার ও বাঘাম্বর এলাকায় বন বিভাগের উচ্ছেদ অভিযানকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। আজ রবিবার (৩০ মার্চ) সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪.৩০ পর্যন্ত সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, আনসার ও র্যাবের সমন্বয়ে এই অভিযান পরিচালিত হয়।
অভিযান চলাকালে স্থানীয় দখলদাররা বাধা দিলে সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে দখলদারদের ছোড়া ইটপাটকেলে বন বিভাগের কর্মী মিনহাজ দেওয়ান আহত হন। গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ায় তাঁকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
এ ঘটনায় জড়িতদের ব্যবহৃত একটি প্রাইভেটকার (ঢাকা মেট্রো-শ ০০-০৮৬১) জব্দ করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
ঢাকা বন বিভাগের আয়োজনে পরিচালিত এই অভিযানে অবৈধভাবে দখলকৃত বনভূমি পুনরুদ্ধার করা হয়। বন বিভাগের তথ্যানুযায়ী, ৫ আগস্টের পর থেকে এসব এলাকায় বেআইনিভাবে বসতবাড়ি ও দোকানপাট গড়ে ওঠে, গজারি গাছ কাটা হয় এবং দখল বাণিজ্য চলে।
অভিযানে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বন বিভাগের ডিএফও বশিরুল আল মামুন, এসিএফ ফাহিম মাসুদ, রেঞ্জ কর্মকর্তা, কালিয়াকৈর রেঞ্জের বিট কর্মকর্তা ও অন্যান্য বন বিভাগের কর্মচারীরা। এছাড়া ম্যাজিস্ট্রেট, সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, র্যাব, আনসার বাহিনী এবং উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারাও সহযোগিতা করেন।
বন বিভাগ সূত্র জানায়, অভিযানের আগে দখলদারদের সরে যেতে নোটিশ ও মাইকিং করা হয়েছিল। কিন্তু তারা কর্ণপাত না করায় আজকের উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়।
অভিযানের শুরুতে বাগাম্বর এলাকায় দখলদাররা প্রতিরোধ গড়ে তোলে এবং সংঘর্ষ বাধিয়ে দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বন বিভাগ কয়েকজনকে আটক করলেও পরে ছেড়ে দেয়। অভিযানে চারটি বুলডোজার ব্যবহার করে শতাধিক ঘরবাড়ি ও সিনাবহ বাজারের দোকানপাট গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।
তবে এই অভিযান নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেকেই ঈদের মাত্র একদিন আগে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার কঠোর সমালোচনা করছেন এবং প্রশাসনের সিদ্ধান্তকে অমানবিক বলে উল্লেখ করেছেন। একইসঙ্গে স্থানীয় এলাকাবাসীও এই অভিযানের সময় নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
বিশেষ করে ফেসবুকে অনেকে লিখছেন, বন বিভাগ কেবল গরিব ও দুঃখী মানুষের ওপরই উচ্ছেদ অভিযান চালায়, কিন্তু কোটিপতি শিল্পপতি এবং ক্ষমতাবান ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় না। তারা প্রশ্ন তুলেছেন, বন বিভাগের উচ্ছেদ অভিযান কি শুধুই গরিবদের জন্য? ঈদের আগে এই উচ্ছেদকে অনেকেই ‘জুলুম ও নির্যাতন’ হিসেবে উল্লেখ করে এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।
বন বিভাগ জানিয়েছে, দখলদারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং বনভূমি পুনরুদ্ধারে নিয়মিত অভিযান চলবে।
শাকিল/সাএ
সর্বশেষ খবর