
কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে ১৯৮তম ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। জামাত শুরুর ৫ মিনিট, ৩ মিনিট ও সবশেষ ১ মিনিট আগে বন্দুকের গুলি ছুঁড়ে নামাজ শুরুর চূড়ান্ত প্রস্তুতি ঘোষণা করা হয়।
সোমবার (৩১ মার্চ) শোলাকিয়ায় জামাত শুরু হয় সকাল ১০টায়। ইমামতি করেন ঈদগাহের নতুন ইমাম মুফতি আবুল খায়ের মোহাম্মদ ছাইফুল্লাহ। নামাজ শেষে মুসলিম উম্মার শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে মোনাজাত করা হয়।
এর আগে ভোর থেকে দলে দলে মুসল্লিরা ঈদগাহের দিকে আসতে থাকেন। সকাল ৯টা নাগাদ বিশালায়তনের ঈদগাহ মাঠ কানায় কানায় ভরে উঠে। তখনও শোলাকিয়ার পথে লাখো মানুষের ঢল।
আয়োজকরা জানান, এবার শোলাকিয়া ঈদগাহে ৪ লক্ষাধিক মুসল্লি ঈদের নামাজ পড়েন। দূরের মুসল্লিদের জন্য শোলাকিয়া স্পেশাল নামে দুটি বিশেষ ট্রেন সার্ভিস চালু করে রেলওয়ে। সকাল ৬টায় ময়মনসিংহ থেকে এবং পৌনে ৬ টায় ভৈরব থেকে যাত্রা শুরু করে ট্রেন দুটি কিশোরগঞ্জ পৌঁছায় সকাল ৮টায়। জামাত শেষে ট্রেন দুটি গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় দুপুর ১২টায়।
ঈদের জামাতকে ঘিরে নেয়া হয় নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা ব্যাবস্থা। চার স্তরের নিরাপত্তা বলয়ে ছিল বিপুল সংখ্যক পুলিশ, র্যাব, সেনাবাহিনী ছাড়াও ৫ প্লাটুন বিজিবি। মাঠে প্রবেশের আগে মুসল্লিদের চারটি নিরাপত্তা চৌকি পার হতে হয়। প্রতিটি প্রবেশ পথে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে দেহ তল্লাশির পর আর্চ ওয়ের ভেতর দিয়ে মুসল্লিদের মাঠে প্রবেশ করতে দেয়া হয়। ৬৮টি সিসি ক্যামেরায় মনিটর করা হয় মাঠের ভেতর ও চারপাশ। ঈদগাহের চারপাশে ৬টি ওয়াচ টাওয়ার বসানো হয়। চারটি শক্তিশালী ড্রোন ক্যামেরা মনিটর করে চারপাশ। প্রস্তুত ছিল বোম ডিসপোজাল ইউনিট ও কাউনআটার টেরিরিজম ইউনিট।
কিশোরগঞ্জ শহরের পূর্ব প্রান্তে নরসুন্দা নদীর তীর ঘেষে অবস্থিত শোলাকিয়া ঈদগাহে যুগ যুগ ধরে ঈদের নামাজে মুসল্লিদের ঢল নামে।
প্রায় আড়াইশো বছরের প্রাচীন শোলাকিয়া ঈদগাহের আয়তন প্রায় ৬ একর। ১৮২৮ সালে শোলাকিয়া ঈদগাহে এক লাখ ২৫ হাজার বা ‘সোয়া লাখ’ মুসল্লি একসঙ্গে ঈদের নামাজ আদায় করেন। সেই থেকে এ মাঠের নাম হয় ‘সোয়া লাখিয়া’, যা এখন শোলাকিয়া নামে পরিচিত। বড় জামাতে এক কাতারে দাঁড়িয়ে এই মাঠে নামাজ পড়লে বেশি সওয়াব পাওয়া যায়, এমন বিশ্বাসে প্রতি বছর ঈদের জামাতে অংশ নেন, দেশ-বিদেশের লাখ লাখ মুসল্লি। বংশ পরম্পরায় এখানে ঈদের নামাজ পড়ছেন অনেকে।
এ বার নতুন পরিস্থিতিতে শোলাকিয়ায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয়দের অভিযোগ ঈমাম নিয়ে বিতর্ক থাকায় গত ১৫ বছর স্থানীয় মুসল্লিদের অনেকে ঈদগাহে নামাজ পড়তে যাননি। সেসময় মাঠের স্থায়ী ইমাম মুফতি আবুল খায়েল মোহাম্মদ সাইফুল্লাকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশ ইসলাহুল মুসলেমিন পরিষদের সভাপতি মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদকে ইমাম নিয়োগ করায় স্থানীয়রা মাঠে নামাজ পড়া বন্ধ করে দেন। এবার দীর্ঘ ১৫ বছর পর শোলাকিয়া ঈদগাহের নতুন ইমাম নিয়োগ দেয়া হয়। প্রথম বারের মতো ঈদগাহের নামকরণ সাইনবোর্ড লাগানো হয়। তাই এবার শোলাকিয়ায় মুসল্লি ছিল গত বছরের তুলনায় বেশি।
কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার হাছান চেীধুরী, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. মাজহারুল ইসলাম, জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক মো. রমজান আলীসহ বিশিষ্টজনেরা এ মাঠে নামাজ পড়েন।
শাকিল/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর