
ঈদের আগের দিন রবিবার (৩০ মার্চ) বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে লক্ষীপাশা চৌরাস্তা এলাকায় নড়াইল জেলা বাস-মিনিবাস ও মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল-মামুন (৪৭) কে পিটিয়ে হত্যা করেন এক কাঁচামাল ব্যবসায়ী। একই দিনে সন্ধ্যার দিকে কালিয়া উপজেলায় দু'পক্ষের সংঘর্ষে তালেব শেখ (৬৫) কে প্রতিপক্ষের লোকজন কুপিয়ে হত্যা করে।
অপরদিকে, ঈদের দিন সোমবার (৩১ মার্চ) বিকেলে লোহাগড়া উপজেলার লাহুড়িয়া ইউনিয়নে দু’পক্ষের সংঘর্ষে অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য আকবার শেখ (৬৫) কে প্রতিপক্ষের লোকজন কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করে।
প্রথম হত্যাকাণ্ড (লোহাগড়া)
রবিবার (৩০ মার্চ) বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে নড়াইলের লোহাগড়া পৌরসভার লক্ষীপাশা চৌরাস্তা এলাকায় নড়াইল জেলা বাস-মিনিবাস ও মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল-মামুনকে (৪৭) পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ঘটনার পর পুলিশ ঘাতক কাঁচামাল ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেছে।
নিহত আব্দুল্লাহ আল-মামুন উপজেলার মল্লিকপুর ইউনিয়নের মহিষাপাড়া গ্রামের ওলিয়ার ফকিরের ছেলে এবং নড়াইল জেলা বাস-মিনিবাস, কোচ, মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়ন (১২৯৫)-এর নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নড়াইল জেলা শহর থেকে কাজ শেষে বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে কাঁচামাল কেনার জন্য আব্দুল্লাহ আল-মামুন লক্ষীপাশা চৌরাস্তা বাজারে কাঁচামাল ব্যবসায়ী ইদ্রিস শেখের দোকানে যান। এ সময় আলু কেনাকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে ইদ্রিস শেখ প্লাস্টিকের গামলা দিয়ে আব্দুল্লাহ আল-মামুনের ঘাড়ে ও মাথায় আঘাত করেন। এতে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।
স্থানীয়রা আহত মামুনকে উদ্ধার করে লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. আবু হাসনাত আব্দুল্লাহ তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ঘটনার পরপরই লোহাগড়া থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে রামপুর এলাকা থেকে ঘাতক ইদ্রিস শেখ (৬০) কে আটক করে।
লোহাগড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আশিকুর রহমান বলেন, "নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নড়াইল আধুনিক সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ঘটনায় পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।"
দ্বিতীয় হত্যাকাণ্ড (কালিয়া)
রবিবার (৩০ মার্চ) সন্ধ্যার দিকে কালিয়া উপজেলার পেড়লী ইউনিয়নের জামরিলডাঙ্গা গ্রামে দু’পক্ষের সংঘর্ষে এক বৃদ্ধ নিহত হন। নিহতের নাম তালেব শেখ (৬৫)। এ ঘটনায় অন্তত আরও ১০ জন আহত হয়েছেন। নিহত তালেব শেখ ওই গ্রামের ইমতিয়াজ শেখের ছেলে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কালিয়া উপজেলার পেড়লী ইউনিয়নের জামরিলডাঙ্গা গ্রামে লস্কর বাড়ি ও শেখ বাড়ির মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধ চলছিল।
রবিবার সন্ধ্যায় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সুইচগেট বাজার এলাকায় দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়ায়। এতে প্রতিপক্ষের দেশীয় অস্ত্রের কোপে শেখ বংশের তালেব শেখ গুরুতর আহত হন।
স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে নড়াইল সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
কালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রাশিদুল ইসলাম জানান, "ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এছাড়া, এ ঘটনায় যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"
তৃতীয় হত্যাকাণ্ড (লোহাগড়া)
ঈদের দিন সোমবার (৩১ মার্চ) বিকেলে লোহাগড়া উপজেলার লাহুড়িয়া ইউনিয়নের পশ্চিমপাড়া গ্রামে দু’পক্ষের সংঘর্ষে এক অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য নিহত হয়েছেন।
নিহতের নাম আকবার শেখ (৬৫)। তিনি ওই গ্রামের মেকরেত শেখের ছেলে। এ ঘটনায় অন্তত আরও ১২ জন আহত হয়েছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, লোহাগড়া উপজেলার লাহুড়িয়া পশ্চিমপাড়া গ্রামে মনিরুল জমাদ্দার ও মিল্টন জমাদ্দার গ্রুপের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল।
রবিবার তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি হয়। এর জেরে সোমবার বিকেলে দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
সংঘর্ষের একপর্যায়ে প্রতিপক্ষের লোকজন আকবার শেখকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে পার্শ্ববর্তী মাগুরা জেলার মোহাম্মদপুর হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান।
এ ঘটনায় উভয় পক্ষের অন্তত ১২ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
লোহাগড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আশিকুর রহমান বলেন, "ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে।"
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর