
পদ্মা কন্যা খ্যাত রাজবাড়ি জেলা। এ জেলার উপর দিয়ে বয়ে গেছে প্রমত্তা পদ্মা ও গড়াই নদী। জেলার দু’টি নদীর মধ্যে শুধু মাত্র কালুখালী উপজেলার সাওরাইল ইউনিয়নের পাতুরিয়া বালু মহাল সরকারিভাবে বিক্রি হয়েছে। হাইকোর্টের নির্দেশে পদ্মা নদীর বালু মহালগুলো বিক্রি হয়নি। কিন্তু আইনের কোন তোয়াক্কা না করে একটি প্রভাবশালী চক্র প্রকাশ্যে দিবালোকে স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাংশা উপজেলার হাবাপুরের ৩ টি স্পটে নিয়মিত রাত নামলেই শুরু হয় চলে ফজর পর্যন্ত। সদর উপজেলার ধাওয়াপাড়া পদ্মা নদীর জেগে উঠা চরে চাষ হচ্ছিল বিভিন্ন ফসলের। ওই ফসলি জমি থেকে প্রকাশ্যে দিবালোকে মাটি ও বালু কেটে বিক্রি করছে প্রভাবশালী চক্র। রাজবাড়ি সদর প্রশাসন একবার মোবাইল কোর্টের অভিযানে জরিমানা করলেও আগের মতো বালু ও মাটি বিক্রি চলছে। কালুখালী উপজেলার সাওরাইল ইউনিয়নের পাতুরিয়া গড়াই নদীর বালু মহাল গত ৫ আগস্ট পর্যন্ত ইজারা ছাড়াই প্রকাশ্যে বালু উত্তোলন ও বিক্রি হলেও একটি টাকাও সরকারি কোষাগারে জমা হয়নি। সর্বশেষ ২ মাসের জন্য পহেলা বৈশাখ পর্যন্ত ওই বালু মহালটি ইজারা প্রদান করা হয়েছে। আগামী বছরের জন্যও ইজারা দেওয়া হয়েছে। তবে এ বালু মহালের পাশেই অবৈধ ভাবে গড়াই নদীর ইসলামপুর চর থেকে প্রকাশ্যে ভেকু দিয়ে শত শত ট্রাকে করে বালু বিক্রি করা হচ্ছে। বালিয়াকান্দি উপজেলার কোনাগ্রাম গড়াই নদীর চরে অবৈধ ভাবে ভেকু দিয়ে বালু কেটে ট্রাকে বিক্রি করা হচ্ছে। এছাড়াও গড়াই নদীর বিভিন্ন স্থানে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে এসব বালু কেটে বিক্রি করা হচ্ছে। পাংশা উপজেলার হাবাসপুর, গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ফেরি ঘাট সহ বিভিন্ন স্থানে অবৈধ ভাবে বালু কেটে বিক্রি করা হচ্ছে।
সরেজমিন রাজবাড়ি সদর উপজেলার ধাওয়াপাড়া ফেরিঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ২টি ভেকু দিয়ে বালু ও মাটি কেটে ট্রাক ভর্তির কাজ চলছে। একটিতে স্তূপ করে রাখা বালু ও অপরটি মাটি কেটে ট্রাক ভর্তি করছে। ১০-১২টি ট্রাক দাঁড়িয়ে আছে। ট্রাক ভর্তি করে নিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন এলাকায়। এসময় কয়েকজন পাটকাঠির তৈরি ঘরের নিচে বসে আছেন। সেখানে গিয়ে জানতে চাওয়া হয়, কে কাটছে বালু ও মাটি। এসময় শিহাব শিকদার নামে একজন বলেন, বড় ভাই মালেক শিকদার বালু কাটছেন। প্রতি ট্রাক ১২শত টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। কীভাবে কাটছেন জানতে চাইলে বড় ভাইয়ের সাথে কথা বলার জন্য বলেন। এখানে প্রতিদিন ২ থেকে আড়াই শত ট্রাকে ৩ লক্ষাধিক টাকার বালু ও মাটি বিক্রি করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে আব্দুল মালেক সিকদারের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
বালিয়াকান্দি উপজেলার নারুয়া ইউনিয়নের কোনাগ্রাম গড়াই নদীর চর থেকে প্রকাশ্যে ভেকু দিয়ে বালু বিক্রি করা হচ্ছে। এখান থেকে বালু কেটে ট্রাকে করে বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করা হচ্ছে। ভেকুর চালকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখানে বেশি দিন আমরা বালু কাটছি না। এটা বাকসাডাঙ্গীর এছো কাটছে। কোন কথা থাকলে তার সাথে বলেন। তবে প্রতিদিন ৫০-৬০ ট্রাক কাটা হচ্ছে বলেও প্রকাশ করেন।
স্থানীয়রা বলেন, অবৈধ ভাবে গড়াই নদীর এ চর নিয়ে বিরোধে হত্যার মতো ঘটনা ঘটেছে। এখন জোড় করেই অন্য গ্রামের লোক এসে প্রতিদিন শত শত ট্রাকে বালু কেটে নিয়ে যাচ্ছে। এতে প্রতিদিন ২-৩লক্ষ টাকার বালু নিচ্ছে। প্রশাসনের লোক আসলে কিছু সময় বন্ধ থাকে, চলে গেলে আবার শুরু হয়। আমাদের এখানে বসবাস করা কষ্টের হয়ে পড়ছে।
কালুখালী উপজেলার সাওরাইল ইউনিয়নের ইসলামপুর গড়াই নদীর চরে থেকে ভেকু মেশিন দিয়ে শত শত ট্রাকে করে বালু বিক্রি করা হচ্ছে। এখানে বালু কাটছেন বাবর বিশ্বাস। গ্রামের মধ্যে হওয়ায় ও প্রভাবশালীর কারণে তার এ বালু কর্তনে কেউ বাধা দিতে সাহস পায় না। প্রশাসন এখানে আসে না।
স্থানীয়রা বলেন, এখানেও প্রতিদিন শত শত টাকা বালু কেটে বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতিদিন ২-৩ লক্ষ টাকার বালু বিক্রি হচ্ছে। বালুর ট্রাক চলার কারণে ঘর বাড়িতে থাকা কষ্টকর হয়ে পড়েছে।
বালু কর্তনকারী বাবর বিশ্বাস পরিচয়ে বলেন, আরে ভাই আমরা প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই বালু কাটছি। কি করবো, বালু কেটে যা বিক্রি হচ্ছে পোলাপানের খরচ চালানো মুশকিল।
রাজবাড়ি সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মারিয়া হক বলেন, ধাওয়াপাড়া পদ্মা নদীতে বালু কেটে বিক্রির অভিযোগে মোবাইল কোর্টের অভিযানে জরিমানা করা হয়। তাকে সতর্ক করা হয়েছে। এরপরও বালু কেটে বিক্রি করছে, খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিবো।
বালিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী অফিসার চৌধুরী মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, বালু কর্তন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। খোঁজ নিয়ে দেখছি, যদি কাটে তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কালুখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মহুয়া আফরোজ বলেন, খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
শাকিল/সাএ
সর্বশেষ খবর