
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি বাহিনীর নৃশংস হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষা ও ল্যাব সহ সকল ধরনের একাডেমিক কার্যক্রম বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে। রবিবার (৬ এপ্রিল) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সাধারণ শিক্ষার্থী প্যাডে ক্লাস পরীক্ষা বর্জনের এ ঘোষণা দেয় যবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা।
ঘোষণা পত্রে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলেন, বিশ্বব্যাপী ৭ই এপ্রিল, সোমবারের ধর্মঘটের আহ্বানে সাড়া দিয়ে আমরা- "কোনো ক্লাস নয়, কোনো ল্যাব নয়, প্রতিদিনকার স্বাভাবিক কাজ নয়" এই আন্দোলনে অংশ নিচ্ছি। একটি জনগোষ্ঠীকে যখন বোমাবর্ষণ, ক্ষুধার্ত করে রাখা ও নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার চেষ্টা চলছে, তখন আমরা নীরব থাকতে পারি না। গণহত্যা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত, আমাদের ধর্মঘট অব্যাহত থাকবে।
যবিপ্রবি জেনেটিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী জালিস মাহমুদ বলেন, ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা, বাইতুল মাকদিসের ভূমি, কুখ্যাত ঐতিহাসিক বেলফোর ডিক্লারেশনের মধ্য দিয়ে দখলদার ইজরাইলের হাতে জিম্মি। লক্ষ লক্ষ নারী-শিশু, বৃদ্ধ-যুবকের রক্তের উপর দাঁড়িয়ে। আজ ৬ এপ্রিল, ২০২৫ পর্যন্ত বিগত ৫৪৬ দিন যাবত দখলদার ইসরাইলি গণহত্যায় গাজায় এ পর্যন্ত ৫০,৬৬৯ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হয়েছে। যার মধ্যে শিশু ১৯,৪৯২ জন ও নারী ১৪,০০২ জন। আহতের সংখ্যা ১,১৫,২২৫ জন এবং নিখোঁজ সংখা ১৬,০০০ জন। গত ১৮ মার্চ থেকে গাজায় প্রতিদিন গড়ে ১০০ জন করে শিশুকে হত্যা করেছে দখলদার ইসরাইল। আজ গাজা মানবেতিহাসের সবচেয়ে ভয়ঙ্করতম জেনোসাইডের শিকার। হেন কোনো মানবতাবিরোধী অপরাধ নেই যা সম্ভবত গাজায় চালানো হয়নি। বাচ্চাদের ডেডবডি আকাশে উড়ছে, পুরো শহরকে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করা হয়েছে। ছবি ও ভিডিওগুলো দেখলে, যে কোনো পাষাণ হৃদয়ের মানুষের অন্তর আঁৎকে উঠবে, ট্রমাটাইজড হয়ে পড়বে। এতোকিছুর পরেও দখলদার ইসরাইলের উপর তথাকথিত মানবতার ফেরিওয়ালা যুক্তরাষ্ট্রের কোনো স্যাঙ্কশন নেই, বিশ্বের মোড়লরা এটা নিয়ে তেমন চিন্তিত না, ইসরাইলকে টেরোরিস্ট বলা হচ্ছে না, এমনকি আরব রাষ্ট্রগুলোও ফিলিস্তিনের পাশে দাঁড়াচ্ছে না, সো কল্ড UN কোনো স্টেপ নিচ্ছে না।
আমেরিকা প্রকাশ্যে সব ধরনের অস্ত্র দিয়ে এই গণহত্যায় সাহায্য করতেছে। আমাদের হৃদয়গুলো আজ কেঁদে ওঠে। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় পশ্চিমা মোড়লদের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে মানুষ রাস্তায় নেমেছে, তারা প্রতিবাদ জানাচ্ছে গণহত্যার। ফিলিস্তিনের মজলুম অবরুদ্ধ মানুষগুলো আমাদেরকে তারা ৭ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে GLOBAL STRIKE for GAZA–শিরোনামে ধর্মঘটের আহ্বান জানিয়েছে, সারা দুনিয়া যেন তাদের পাশে দাঁড়ায়।
সত্যি বলতে, আমরা বাংলাদেশী শিক্ষার্থীরা কিভাবে ফিলিস্তিনের পাশে দাঁড়াতে পারি সেজন্য উদগ্রীব। ফিলিস্তিনি মজলুমদের আহবানে সাড়া দিয়ে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী, আমরাও এই ধর্মঘট বাস্তবায়নের জন্য সচেষ্ট হয়েছি। আমরা হয়তো ফিলিস্তিনিদেরকে সরাসরি কোন সহায়তা করতে পারছি না, তাদের উপর চালিত গণহত্যা থেকে তাদেরকে উদ্ধার করতে পারছি না, কিন্তু আমরা জুলাই গণঅভ্যুত্থানে দেখেছি, আমাদের শিক্ষার্থী-জনতার কাছে তো কোন অস্ত্র ছিল না, বিপরীতে স্বৈরাচার পতিত সরকারের প্রশাসন ও দোসরদের হাতে ছিল ভয়ানক অস্ত্র। তাদের হেন কোন অস্ত্র আমাদের উপর ব্যবহার করতে বাকি রাখেনি। তবুও তো পতিত স্বৈরাচারকে পালিয়ে যেতে হয়েছে। এখানে অনুঘটকের ভূমিকা পালন করেছে আমাদের সাহস, গণমানুষের বিস্ফোরণ, বিশ্বাস, শহীদদের রক্ত ও সর্বোপরি সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছা ও সাহায্য। মানুষ যখন তার আয়ত্ত্বের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে প্রচেষ্টা চালায় তখন সৃষ্টিকর্তাও মজলুমদেরকে সহায়তা করেন।
তাই অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মত যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও ৭ এপ্রিল GLOBAL STRIKE for GAZA বাস্তবায়ন করার জন্য আমরা ঘোষণা করছি No classes, No labs, No business as usual.। এটাকে আমরা আমাদের দায়িত্ব বলে মনে করি, যেখানে বিশ্বের এক প্রান্তের মানুষের জীবন, বাড়িঘর বোম্বিং করে ধ্বংস করে দেয়া হচ্ছে, তাদের উপর ইথনিক ক্লিনজিং করা হচ্ছে, তাদের কাছে খাদ্য পৌঁছুতে দেয়া হচ্ছে না এভাবে করে তাদেরকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হচ্ছে, সেখানে আমরা বিশ্বকে জানান দিতে চাই তোমরা যদি এই গণহত্যাকে বন্ধ না করো, আমরা আমাদের কাজ বন্ধ করে ধর্মঘট পালন করছি, তোমাদেরকে বয়কট করছি। বাংলাদেশের আপামর জনতাকে আহ্বান জানাই, তারা যেন ইসরাইলি কোনো পণ্য ব্যবহার না করেন, সম্পূর্ণরূপে ওদের প্রোডাক্ট বয়কট করেন।
আর প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আমরা আহ্বান জানাই, ফিলিস্তিনের মজলুম মানবতাকে রক্ষার জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করুন, দখলদার ইসরাইলের সাথে সকল ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করুন। বিশ্বের দরবারে ফিলিস্তিনের কণ্ঠস্বর হোন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ এন্ড মেরিন বায়োসায়েন্স বিভাগের ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী তিলোকতমা মেহেরিন পায়েল বলেন, আমরা যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গাজার উপর ইসরায়েলের চলমান বর্বরতা, হত্যাযজ্ঞ ও নিষ্ঠুর আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও ঘৃণা জানাই। শিশু হাসপাতাল, ত্রাণকেন্দ্র ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও নির্বিচারে বোমাবর্ষণ—ইসরায়েলের এই নৃশংসতা কখনোই আপোস করার নয়! এটি শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক সংঘাত নয়, এটি একটি পরিকল্পিত গণহত্যা। এই গণহত্যার প্রতিবাদে ৭ই এপ্রিল কোনো ক্লাস, ল্যাব বা একাডেমিক কার্যক্রমে আমরা অংশগ্রহণ করবনা। নির্যাতিত মানুষের পক্ষে নীরব থাকা অন্যায়। আমরা প্রতিবাদ করি, সংযুক্ত হই, এবং শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলি। গণহত্যা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত, আমরা বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে যাবো ফিলিস্তিনের নির্যাতিত মানুষের পক্ষে, নিষ্পাপ শিশুদের পক্ষে। এটি শুধু গাজার মানুষের লড়াই নয় এটি আমাদের গোটা বিশ্বের লড়াই!
শাকিল/সাএ
সর্বশেষ খবর
ক্যাম্পাস এর সর্বশেষ খবর