
রোহিঙ্গা সংকটে ক্ষতিগ্রস্ত কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার হোস্ট কমিউনিটির জন্য বিশেষভাবে বরাদ্দকৃত ‘ভালনারেবল উইমেন বেনিফিট (VWB)’ রেশন কার্ড হঠাৎ করেই কর্তন ও অন্য জেলায় হস্তান্তরের উদ্যোগে বিস্ফোরিত হয়েছে ক্ষোভ। ইতোমধ্যে স্থানীয় জনগণ, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও নাগরিক সমাজ তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।
জানা গেছে, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের পর থেকে জীবনের প্রতিটি স্তরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উখিয়া-টেকনাফের হাজার হাজার পরিবার। চাষাবাদ, গবাদি পশু পালন, নদীতে মাছ ধরা, এমনকি শ্রমবাজার থেকেও বঞ্চিত হতে হয়েছে স্থানীয়দের। এই বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে ২০২০ সাল থেকে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং বিশ্ব খাদ্য সংস্থার (WFP) সহায়তায় চালু হয় ‘ভি ডব্লিউ বি’ কর্মসূচি। এতে প্রতিমাসে ৪০ হাজার নারী-নির্ভর পরিবার পায় ৩০ কেজি করে চাল।
সম্প্রতি এই কার্ড অন্য জেলায় স্থানান্তরের উদ্যোগ নেওয়ায় উখিয়া-টেকনাফের পরিবারগুলোতে সৃষ্টি হয়েছে চরম অনিশ্চয়তা।
একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপসচিব এলিশ শরমিনের স্বাক্ষরে গত ১৭ মার্চ গঠিত একটি ১০ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি যাচাই-বাছাইয়ের নামে কার্যত হস্তান্তর প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এই কমিটি সরেজমিনে ৮ ও ৯ এপ্রিল উখিয়া-টেকনাফ সফর করছে।
জাতীয় সংসদের সাবেক হুইপ ও কক্সবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান চৌধুরী এ বিষয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গাকে মানবিক আশ্রয় দিয়ে স্থানীয়রা নিজেরাই নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। এখন আবার তাদের প্রাপ্ত অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে—এটা অমানবিক।”
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনের নেতা ব্যারিস্টার সাফাত ফারদিন চৌধুরী রামিম হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, “এই রেশন কার্ড বন্ধ করা মানেই হাজার হাজার পরিবারকে অনাহারে ঠেলে দেওয়া। প্রয়োজনে আমরা আন্দোলনে নামবো।”
রাজার পাল ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মীর সাহেদুল ইসলাম রোমান বলেন, “স্থানীয়দের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। এমন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে রাস্তায় নেমে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে।”
এছাড়া সচেতন নাগরিক সমাজ এবং উপকারভোগী পরিবারগুলো বলছে, এই রেশন কার্ড শুধু খাদ্য সহায়তা নয়—এটি একটি ন্যূনতম মর্যাদার প্রতীক। একে কেড়ে নেওয়া হলে সেটা হবে সরকারি বৈষম্যের জ্বলন্ত উদাহরণ।
উল্লেখ্য, রোহিঙ্গা আগমনের পর আন্তর্জাতিক মানবিক সহায়তার প্রায় পুরোটাই কেন্দ্রীভূত হয়েছে ক্যাম্প-অধ্যুষিত রোহিঙ্গাদের মাঝে। অথচ যাদের ঘরবাড়ি, কৃষিজমি ও জীবিকা এই রোহিঙ্গা সংকটে ধ্বংস হয়েছে, সেই হোস্ট কমিউনিটিকে দীর্ঘ মেয়াদে প্রায় অবহেলাই করা হয়েছে। এখন এই রেশন কার্ড কর্তনের প্রক্রিয়া সেই বৈষম্যকে আরও প্রকট করে তুলছে।
সামাজিক বিশ্লেষকদের মতে, এই ধরনের উদ্যোগ হোস্ট কমিউনিটিতে চরম ক্ষোভ ও হতাশা সৃষ্টি করবে, যার ফলে সামাজিক অস্থিরতা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাদের মতে, নীতিনির্ধারকদের উচিত বাস্তবতা মূল্যায়ন করে দ্রুত এই সিদ্ধান্ত বাতিল করা।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর