
ভোলার চরফ্যাশনে উপকূলের মিঠাপানি অধ্যুষিত মেঘনা-তেঁতুলিয়ার অভয়াশ্রমে জাটকা সংরক্ষণের অভিযান কাগজে কলমে থাকলেও বাস্তবে নেই। নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন সময়ে অবাধে নিধন হচ্ছে জাটকা ইলিশ।
মঙ্গলবার মৎস্য কর্মকর্তার আয়োজনে জাটকা সংরক্ষণ অভিযান সপ্তাহ পালন করা হলেও বাস্তবে অভয়াশ্রমে দেখা মেলেনি কোন অভিযান। নেই কোন ঝটকা সংরক্ষণের প্রচারণা। নাম মাত্র জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহের মিটিং দিয়ে দ্বায়িত্ব শেষ করেই ঘুমাচ্ছেন কর্মকর্তারা। কর্মকর্তারা নিরব ভূমিকায় থাকায় ইলিশ শিকারে মেতে আছেন জেলেরা।
যদিও মৎস্য কর্মকর্তা জাটকা সংরক্ষণ অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে দাবি করলে দেখাতে পারেনি কোন জেল জরিমানার প্রমাণ পত্র।
যদিও মৎস্য প্রশাসনের বিরুদ্ধে ঘাটে ঘাটে মাছধরার সুযোগ দিয়ে জেলেদের থেকে ‘উপরি’ নেয়ার অভিযোগ আছে। প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে জেলেরা নির্বিঘ্নে নিষিদ্ধ জোনে ইলিশসহ সকল ধরনের মাছ শিকার, বিক্রি, পরিবহণ ও মজুদ অব্যাহত রেখেছেন।
জানা যায়, মেঘনা ও তেঁতুলিয়ার মৎস্য অভয়াশ্রমে ইলিশ রক্ষায় প্রতিবছরের মতো এবারও পহেলা মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত দুই মাস তেঁতুলিয়া নদীর ১শ’ কি.মি. এবং মেঘনা নদীর ৯০ কিলোমিটার এলাকায় সব ধরনের মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে সরকার। কর্তৃপক্ষের নজরদারি না থাকায় নিষেধাজ্ঞার প্রথমদিন থেকেই মাছ শিকারে বেপরোয়া জেলেরা। নদীতে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশের ছড়াছড়ির পাশাপাশি বাজারমূল্য বেশী থাকায় জেলেরা মাছ শিকার থেকে পিছু হটছে না।
সরজমিনে সামরাজ, বকসী, কচ্চপিয়া, বেতুয়া, নতুন স্লুইস, ঘোষেরহাট, গাছিরখালসহ বেশ কিছু মৎস্য ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, চরফ্যাশন উপজেলার উপকূলের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে জেলেরা ইলিশসহ নানান প্রজাতির মাছ শিকারে মেতে রয়েছেন। জোয়ার-ভাটার সময় মেনে নদীতে জাল ফেলছেন এবং জাল তুলে হাক-ডাক দিয়ে ঘাটে মোহাজনের আড়তে শিকার করা মাছ ডাক দিয়ে বিক্রি করছেন। ঘাটের আড়ত থেকে প্যাকেট হয়ে ওই সব মাছ স্থানীয় বাজারে যাচ্ছে। যার বড় অংশ নিরাপদ পরিবহণ ব্যবস্থার মাধ্যমে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন শহরেও চালান হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুলারহাট থানার গাছিরখাল ঘাটে জেলেরা জানান, জেলেরা দৈনিক আয় নির্ভর জীবন যাপন করছেন। নিষিদ্ধ সময়ে খাদ্য সহায়তা পান না জেলেরা। এজন্য জীবিকার প্রয়োজনে স্থানীয় প্রভাবশালী ফরিয়াদের সাথে চুক্তি ভিত্তিক মাছ শিকার করছেন তারা। মৎস্য অফিসের কর্মকর্তাদের উপরি বাবদ তার ছোট নৌকায় ৫০০টাকা ও বড় ট্রলারে ১০০০টাকা দিয়ে থাকেন। ওই টাকা দিয়েই তারা মাছ শিকারে যান।
সামরাজ ঘাটের জেলে আবদুর রব জানান, নিষেধাজ্ঞায় স্থানীয় ঘাটের লোকজন প্রশাসনকে ম্যানেজের নামে নৌকা ও ট্রলার থেকে চাঁদা নিয়ে থাকেন। তাই তারা অবাধে মাছ শিকার করতে পারছেন। প্রশাসনের কর্মকর্তারা অভিযানে আসার আগেই তারা খবর পেয়ে যান। তাই তাদের মাছ শিকারে কোন অসুবিধা হয়না।
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার অপু জানান, জেলেরা যাতে অভয়াশ্রমে মাছ শিকার করতে না পারে, সেজন্য প্রশাসনের যথাযথ মনিটরিং চলছে। তবে জনবল ও অভিযানের বরাদ্দ না থাকায় জোরদার অভিযান করা যাচ্ছেনা। তবে ঘাটে কারা জেলেদের কাছ থেকে সুবিধা দেয়ার নামে টাকা নিচ্ছে তা আমার জানা নাই।
শাকিল/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর