
আওয়ামী লীগ পরোক্ষভাবে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের আয়োজিত গাজা ও রাফায় ইসরায়েলের বর্বরোচিত গণহত্যার প্রতিবাদে এক বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন তিনি।
সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের পাসপোর্টে ইসরায়েল ব্যতীত সকল রাষ্ট্র গমনের যে নির্দেশনা ছিল, সেটি তারা প্রত্যাহার করে নিয়েছিল। তার মানে দাঁড়ায়, তারা ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিয়েছিল।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ একদিকে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিয়েছিল, অপরদিকে বাংলাদেশ ও সারা পৃথিবীর মুসলমানদের পক্ষে মায়াকান্নাও কাঁদতো তারা। বিরোধী রাজনৈতিক দলের কর্মী, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে কথা বলা গণতান্ত্রিক শক্তি ও সাধারণ মানুষকে নির্যাতনের জন্য আড়িপাতার যন্ত্র পেগাসাস স্পাইওয়্যার আওয়ামী লীগ ইসরায়েল থেকেই কিনেছিল।
বিএনপির এই নেতা বলেন, শেখ হাসিনা আজ যেখানেই আশ্রয় নিন না কেন, বাংলাদেশের মানুষ সারাজীবন আওয়ামী, ফ্যাসিবাদী, মুসলিমবিদ্বেষী, আলেম বিদ্বেষী, ইসলামবিদ্বেষীদের ধিক্কার জানিয়ে যাবে। কারণ আওয়ামী লীগ ইসরায়েলপন্থিদের সমর্থক ছিল।
এসময় তিনি বলেন, সারা পৃথিবীতে আজকে এক কণ্ঠে উচ্চারিত হচ্ছে- ইসরায়েল ও ইন্দো-মার্কিন ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে। যারা ইসরায়েলকে মদদ দিচ্ছে তাদেরকে সমস্ত মদদ বন্ধ করতে হবে এবং ইসরায়েলের সমস্ত পণ্য আমরা বর্জন করব। তার মানে এই না যে আমরা কোনো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে হামলা করব।
সরকারের ব্যর্থতার সমালোচনা করে সালাহ উদ্দিন বলেন, গতকালকে বাংলাদেশে কিছু স্থাপনায় হামলা হয়েছে আমরা তার নিন্দা জানাই। আমরা বলতে চাই, সরকারের ব্যর্থতা এখানে লক্ষণীয়, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যর্থতা এখানে লক্ষণীয়।তাদের উচিত ছিল আগের থেকে এখানে সতর্কতা অবলম্বন করা। তাহলে বাংলাদেশের নামে এই বদনামটাকে আমাদের নিতে হতো না।
‘গণহত্যার প্রতিবাদে বৃহৎ কর্মসূচি বিএনপি দেবে’ উল্লেখ করে সালাহ উদ্দিন বলেন, আমি আজকে বিএনপির পক্ষ থেকে একটি ঘোষণা দিতে চাই, আমরা ফিলিস্তিনি জনগণের পক্ষে, এই ইসরায়েলি গণহত্যা এবং বর্বর আগ্রাসনের প্রতিবাদে বিএনপির পক্ষ থেকে অতি শিগগিরই সারাদেশে এবং কেন্দ্রীয়ভাবে আমরা একটি বৃহৎ কর্মসূচি ঘোষণা করব।
‘‘আমরা এ দেশের জনগণকে আহ্বান জানাই, পৃথিবীর সমস্ত মুসলিম বিশ্বে যারা আছেন তাদেরকে আহ্বান জানাই, যারা পরাশক্তির একটি অংশ যারা মদদ দিচ্ছে ইজরায়েলিদেরকে তাদেরকে আহ্বান জানাই, এই মুহূর্ত থেকে গণহত্যা বন্ধ করার জন্য আপনাদেরকে পদক্ষেপ নিতে হবে।”
তিনি বলেন, এই ব্যাপারে জাতিসংঘের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। ইসরায়েলিরা কখনো জাতিসংঘের রেজুলেশনের প্রতি সম্মান দেখায়নি, এই ইজরায়েলি সরকার জাতিসংঘের কোনো নির্দেশনা কোনো অনুশাসন আজ পর্যন্ত মানে নাই।
‘‘এই পরাশক্তির দুই-একটা দেশ তারা সমসময় যখনই ফিলিস্তানি মসুলমানদের পক্ষে জাতিসংঘে রেজুলেশন পাস করেছে তারা তার বিরুদ্ধে ভোট ্রপয়োগে করেছেন তা আপনারা সবাই জানেন। তার মানে হচ্ছে, ইজরায়েলির মদদদাতা এই কয়েকটি পরাশক্তিকে তাদের ভূমিকা নিয়ে সারা বিশ্বের মানুষের কাছে জবাবদিহি করতে হবে।”
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপির নির্বাহী কমিটির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল বলেন, ফিলিস্তিনের শান্তিকামী মুসলমানরা নিজেদের আবাসভূমি স্থায়ী করার জন্য আন্দোলন করে আসছিলেন। কিন্তু দখলদার ইসরায়েলের সন্ত্রাসী হামলার মধ্য দিয়ে পঞ্চাশ হাজারেরও অধিক মানুষ নিহত হয়েছে। যার অর্ধেক নারী ও শিশু। এ রকম ধংসযজ্ঞ চলার পরেও যে-সব দেশের রাষ্ট্রপ্রধান প্রতিবাদ জানাননি তাদেরকে আমরা ধিক্কার জানাই। আজ জাতিসংঘসহ সব মানবাধিকার সংগঠন নিশ্চুপ। গাজায় সর্বোচ্চ মানবাধিকার লঙ্ঘিত হলেও তাদের কোনো প্রতিবাদ নেই। আজ থেকে যেখানে আমরা ইসরায়েলি পণ্য পাব সেখানেই বয়কট করব। আজ যদি সারা বিশ্বের মুসলিমরা ঐক্যবদ্ধ হয় তাহলে তাদের সামনে কেউ দাঁড়াতে পারবে না।
সভাপতির বক্তব্যে রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, ফিলিস্তিনে চলমান গণহত্যার প্রতিবাদে নো ওয়ার্ক নো স্কুল কর্মসূচির প্রতি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সংহতি জানিয়েছে। ইসরায়েলের দখলদার বাহিনী কর্তৃক ৫১ হাজারের অধিক নিরীহ ফিলিস্তিন হত্যা করা হয়েছে। ফিলিস্তিনে যে-সব নারী শিশুরা নিহত হয়েছে তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করি। ফিলিস্তিনে ধারাবাহিকভাবে যে গণহত্যা চলছে ছাত্রদল সেটি ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যারা রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে তাদেরকে সাধুবাদ জানাই।
সমাবেশে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছিরের সঞ্চালনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলসহ রাজধানীর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শাখা ছাত্রদল ও ঢাকা মহানগর উত্তর, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রদলের কয়েক হাজার নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। সমাবেশের পর ছাত্রদলের বিশাল মিছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
শাকিল/সাএ
সর্বশেষ খবর
ক্যাম্পাস এর সর্বশেষ খবর