
গ্রীষ্মের আমেজ বয়ে চলছে। দিন ও রাতে গরমের আঁচ স্পষ্টভাবেই বোঝা যাচ্ছে। সকালে ঘুম থেকে উঠে বাসার বাইরে যাওয়ার আগে, দিনশেষে বাসায় ফিরে কিংবা বাসায় থাকলে দিনের মধ্যাহ্নে সবারই গোসল করা হয়। কেউ কেউ আবার দিনে একাধিকবার গোসল করেন। এসবই গরমে স্বস্তি পেতে শরীর ঠান্ডা রাখার জন্য করা হয়।
গরমে গোসল করলে শরীর ও মন দুটোই বেশ ফুরফুরে থাকে। আর গোসলে যদি ঠান্ডা পানি থাকে, তাহলে যেন প্রশান্তি কয়েকগুণ বেড়ে যায়। ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করলেও এ নিয়ে আবার নানা প্রশ্ন ও দ্বিধা রয়েছে জনমনে। কারও মতে, গরমে ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করা উচিত নয়, আবার কারও মতে ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করলে শরীরের ক্ষতি হয়। কিন্তু প্রকৃত বিষয়টি কী?
স্বাস্থ্যবিষয়ক পরামর্শ প্রদানকারী প্ল্যাটফর্ম হেলথ লাইন এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করলে বিভিন্ন ধরনের উপকার পাওয়া যায়। এর মধ্যে এন্ডোরফিন বৃদ্ধি, বিপাক উন্নত করা, রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি এবং সর্দি-কাশির মতো সাধারণ অসুস্থতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের গুণাগুণ বৃদ্ধি পায়।
ঠান্ডা বলতে ৭০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের কম তাপমাত্রার পানিতে গোসল করায় বোঝায়। এর স্বাস্থ্যগত সুবিধা থাকতে পারে। পানি থেরাপি, অর্থাৎ হাইড্রোথেরাপি শতাব্দী ধরে শরীরের কঠোর পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়ার প্রবণতার সুবিধা নিতে ব্যবহার হয়ে আসছে। তবে কোনো নির্দিষ্ট অসুস্থতা বা সমস্যায় ঠান্ডা পানিতে গোসল করা প্রধান চিকিৎসা নয়। কেবলই লক্ষণ উপশম ও সাধারণ সুস্থতার জন্য ঠান্ডা পানিতে গোসল করা হয়।
বিষণ্নতা ও ব্যথায়: রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (সিডিসি) অনুসারে, প্রতি বছর প্রায় ১ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ বিষণ্নতায় ভুগেন। লক্ষণগুলোর তীব্রতা বা সময়কালের ওপর নির্ভর করে বিভিন্ন ওষুধ ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে বহুল পরিচিত চিকিৎসা পদ্ধতি হচ্ছে হাইড্রোথেরাপি, অর্থাৎ পানি থেরাপি।
২০২৩ সালের এক গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে, ৫ মিনিট ঠান্ডা পানিতে গোসলের পর গোসল করা ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, তারা আগের থেকে তুলনামূলক বেশি সতর্কতা বোধ করছেন, বেশি অনুপ্রাণিত, সক্রিয়, মনোযোগ ও গর্বিত বোধ করছেন। এছাড়া ফাইব্রোমায়ালজিয়ার চিকিৎসায় পানি থেরাপি ব্যবহারের জোরালো প্রমাণ রয়েছে। ক্লিনিক্যাল অনুশীলনে পুল থেরাপির সুপারিশ করা হয়। তবে মনে রাখতে হবে, সবাই ঠান্ডা পানি সহ্যকরতে পারেন না। আবার কিছু মানুষ হালকা গরম পানির থেরাপিতে উপকৃত হয়ে থাকেন।
বিপাক উন্নয়নে সহায়তা: প্রায় সবাই জন্মের সময় বাদামী রঙের চর্বি নিয়ে জন্মগ্রহণ করেন। কিন্তু পরবর্তীতে অধিকাংশ মানুষই সাদা চর্বি অর্জন করে। সাদা চর্বি হচ্ছে সেই চর্বি, যা মানুষের স্বাস্থ্য বৃদ্ধি ও হৃদরোগের মতো অসুস্থতার সঙ্গে যুক্ত। গবেষকরা দেখেছেন, বাদামী চর্বি স্বাস্থ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। চর্বির স্বাস্থ্যকর মাত্রাও নির্দেশ করে যে, সাদা চর্বি স্বাস্থ্যকর স্তরে থাকা উচিত। আর বাদামী চর্বি ঠান্ডা তাপমাত্রার সংস্পর্শে এসে সক্রিয় হয়।
ঠান্ডা পানি মানুষের ওজন কমাতে সহায়তা করার দাবির গবেষণাটি স্পষ্ট নয়। তবে এটি দেখায় যে, ঠান্ডা পানি নির্দিষ্ট হরমোনের মাত্রা স্থিতিশীল রাখতে সহায়তা করতে পারে এবং গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সিস্টেমকেও সহায়তা করতে পারে।
রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে: ঠান্ডা পানি শরীরে পড়ার পর শুরুতে কিছুটা অস্বস্তিকর মনে হতে পারে, আবার প্রাণবন্তও হতে পারে। কেননা, শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রার থেকে ঠান্ডা পানি শরীরকে তার মূল তাপমাত্রা বজায় রাখার জন্য কিছুটা বেশি পরিশ্রম করতে চাপ প্রয়োগ করে। নিয়মিত পান করার ফলে শরীরের রক্ত সঞ্চালন ব্যবস্থা আরও দক্ষ করতে পারে এবং রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করতে পারে।
ঝুঁকি: ঠান্ডা পানি যেকোনো রোগের জন্য আর্শ্চযজনক নিরাময় নয়। মনে রাখতে হবে, মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ওষুধ গ্রহণের বিকল্প চিকিৎসা হিসেবে ঠান্ডা পানিতে গোসল নয়। কেবল হালকা অসুস্থ বোধ করা, সদ্যই হাসপাতাল থেকে ছাড় পাওয়া বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পেলে ঠান্ডা পানিতে গোসল করতে পারেন। তবে চিকিৎসক নিষেধ করলে তা মেনে চলতে হবে। আবার ঠান্ডা পানিতে গোসল করলে কোনো সমস্যা দেখা দিলে বা কারও আগে থেকেই জটিলতা থাকলে, এ ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ঠান্ডা পানি ব্যবহার করা যাবে না।
উপদেশ: ঠান্ডা পানিতে কীভাবে গোসল করবেন, সেটিও গুরুত্বপূর্ণ। স্বাভাবিক গোসলের শেষে ধীরে ধীরে কম তাপমাত্রার পানি ব্যবহার করুন বা পানির তাপমাত্রা কমাতে থাকুন। ২-৩ মিনিট ঠান্ডা পানিতে থাকুন।
শাকিল/সাএ
সর্বশেষ খবর