• ঢাকা
  • ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১০ এপ্রিল, ২০২৫
  • শেষ আপডেট ৭ মিনিট পূর্বে
শাহীন মাহমুদ রাসেল
কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ০৯ এপ্রিল, ২০২৫, ০২:৩৪ দুপুর
bd24live style=

থেমে গেল রওশন আরার লড়াই, পৈতৃক জমি ছিনিয়ে নিল চার জনকে

প্রতীকী ছবি

কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং পশ্চিমপাড়ায় জমি সংক্রান্ত বিরোধে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের রেশ ধরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন রওশন আরা (৩৮)। তিনি সংঘর্ষে নিহত আব্দুল মান্নানের বড় বোন। এ নিয়ে এক চিলতে জমিই কেড়ে নিলো একে একে চারটি তাজা প্রাণ।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে মঙ্গলবার রাত ১টা ১৫ মিনিটে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন রওশন আরা। মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন তার স্বামী মো. শাহজাহান। তিনি জানান, "ঘটনার দিনই স্ত্রীকে গুরুতর অবস্থায় কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামে নেওয়া হয়। সেখানে আইসিইউতে দুইদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে অবশেষে না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন তিনি।"

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, রওশন আরার শরীরে একাধিক স্থানে ছুরি ও কুড়াল দিয়ে আঘাত করা হয়েছিল। মাথায় গুরুতর আঘাতের চিহ্ন ছিল।

এর আগে গত ৬ এপ্রিল বিকেলে জমিজমা নিয়ে আপন চাচাতো ভাইদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় একই পরিবারের সদস্যরা। ঘটনার দিনই নিহত হন মাওলানা আব্দুল্লাহ আল মামুন (৩৮), মো. আব্দুল মান্নান (৩৬) এবং মান্নানের বড় বোন শাহিনা আক্তার (৩৮)। রওশন আরার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে মৃতের সংখ্যা গিয়ে ঠেকলো চারজনে।

নিহত মাওলানা মামুন ছিলেন কুতুপালং বাজার জামে মসজিদের খতিব এবং জামায়াতে ইসলামির স্থানীয় নেতা। একদিকে ধর্মীয় নেতৃত্ব, অন্যদিকে রক্তের সম্পর্ক—সব কিছুই ম্লান হয়ে গেছে হিংসা আর সহিংসতার তীব্রতায়।

স্থানীয়রা জানান, আব্দুল মান্নান কয়েক বছর আগে পৈতৃকসূত্রে পাওয়া ২০ কড়া জমি বিক্রি করেন। সেই জমি বুঝিয়ে দিতে গেলে বাধা দেন মামুনের পরিবার। শুরু হয় বাকবিতণ্ডা, এরপরই রূপ নেয় নারকীয় সংঘর্ষে।

এদিকে এই মর্মান্তিক ঘটনার পর এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া। শুধু নিহতদের পরিবার নয়, পুরো কুতুপালং পশ্চিমপাড়ার মানুষ মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে। অনেকেই এই ঘটনায় শুধু পারিবারিক দ্বন্দ্ব নয়, সামাজিক ও প্রশাসনিক ব্যর্থতাকেও দায়ী করছেন।

কুতুপালং উচ্চ বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক  বলেন, “এটা নিছক জমির বিরোধ নয়, এটি আমাদের সামাজিক অবক্ষয়ের প্রতিফলন। আজ ভাই ভাইকে কুপিয়ে মারছে। আমরা কী ধরনের সমাজে বাস করছি? আগে পরিবারে যেকোনো বিরোধ বসে মীমাংসা হতো, এখন সেটা রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে গড়াচ্ছে।”

স্থানীয় সমাজকর্মী ও নারী উন্নয়নকর্মী রাশেদা পারভীন বলেন, “একই পরিবারের চারজনের মৃত্যু কোনো সাধারণ ঘটনা নয়। এখানে নারীরাও নিহত হয়েছেন, ছুরি–কুড়াল দিয়ে এভাবে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা প্রমাণ করে, আমাদের সহিংসতা কতটা নিষ্ঠুর হয়ে উঠেছে। এর দায় শুধু পরিবারের নয়—স্থানীয়ভাবে যারা সালিশ বা মধ্যস্থতা করতে পারতেন, তারা কোথায় ছিলেন?”

স্থানীয় যুবক সাইফুল আলম বলেন, “আমরা আগেও এই জমি নিয়ে বিরোধের কথা শুনেছি। চেষ্টা করেছিলাম বিষয়টা স্থানীয়ভাবে সমাধান করতে, কিন্তু দেরি হয়ে গেছে। আমি মনে করি, যাদের গাফিলতিতে বিষয়টা এতদূর গড়িয়েছে, তাদের জবাবদিহির আওতায় আনা দরকার।”

কুতুপালং বাজার বণিক সমিতির সভাপতি মো. নুরুল হক বলেন, “এই ঘটনায় এলাকার ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উচিত দ্রুত দোষীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা। একইসঙ্গে ভবিষ্যতে যেন এমন ঘটনা না ঘটে, সে জন্য প্রশাসনের পাশাপাশি সমাজের সবার সতর্ক হওয়া জরুরি।”

উখিয়া উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান রাসেল চৌধুরী বলেন, “জমিটা বহুদিন ধরেই বিরোধের কেন্দ্র ছিল। মাঝেমধ্যে কথাকাটাকাটি হতো, কিন্তু কেউ ভাবেনি যে বিষয়টা এভাবে রক্তগঙ্গায় গড়াবে। ওরা তো আপন ভাই-বোন—এইভাবে একজন আরেকজনকে খুন করতে পারে, সেটা ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে।”

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. জাহিদুল করিম বলেন, “গ্রামীণ সমাজে জমিকে কেন্দ্র করে বিরোধ নতুন কিছু নয়। কিন্তু আইন-শৃঙ্খলার দুর্বলতা, স্থানীয় পর্যায়ে সালিশি ব্যবস্থার ভাঙন, এবং পারিবারিক যোগাযোগ ও মূল্যবোধের অবক্ষয় এই ধরনের ঘটনার জন্ম দেয়। এই ঘটনাটি তারই এক করুণ চিত্র।”

উল্লেখ্য, এ ঘটনায় উখিয়া থানায় পৃথক দুটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো। এক মুঠো মাটির জন্য, রক্তে রঞ্জিত হলো একটি পরিবার। ভাইয়ের হাতে ভাই, বোনের রক্তে লেখা হলো পারিবারিক বিষাদের এক নির্মম অধ্যায়।

শাকিল/সাএ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পাঠকের মন্তব্য:

BD24LIVE.COM
bd24live.com is not only a online news portal. We are a family and work together for giving the better news around the world. We are here to give a nice and colorful media for Bangladesh and for the world. We are always going fast and get the live news from every each corner of the country. What ever the news we reached there and with our correspondents go there who are worked for bd24live.com.
BD24Live.com © ২০২০ | নিবন্ধন নং- ৩২
Developed by | EMPERORSOFT
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ info@bd24live.com
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
ইমেইলঃ office.bd24live@gmail.com