
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান সাবেক স্বৈরাচারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি পালানোর পরপরই বাংলাদেশ নিয়ে গুজব ছড়ানো শুরু করে ভারতের সংবাদমাধ্যম ও দেশটির রাজনীতিবিদরা। সর্বপ্রথম গুজবটি ছিল সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষদের দলবেঁধে ভারতে যাওয়ার চেষ্টার বিষয়টি। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী গুজব ছড়ানোয় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।
ওই সময় দেশটির সংবাদমাধ্যমে বলা হয়, নির্যাতনের শিকার হয়ে সীমান্ত পার হওয়ার জন্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কয়েক লাখ মানুষ জড়ো হয়েছেন। তবে পরবর্তীতে এটি ভুয়া হিসেবে প্রমাণিত হয়। দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ জানায়, দলে দলে ভারতীয়দের বাংলাদেশ থেকে পালানোর কোনো ঘটনা ঘটেনি। গত ২ ডিসেম্বর প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু এক প্রতিবেদনে সত্যতা স্বীকার করে বলে, ‘সরকার পরিবর্তনের পর বাংলাদেশে গণহারে দেশান্তর’ হওয়ার বিষয়টির কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তারা আরও জানায়, গত ছয় বছর অবৈধভাবে বাংলাদেশ থেকে ভারতে যে পরিমাণ মানুষ যাওয়ার চেষ্টা করেছে, ২০২৪ সালেও সংখ্যাটি প্রায় একই ছিল।
এবার আবারো শেখ হাসিনাকে নিয়ে উত্তাল ভারতীয় গনমাধ্যম। ভারতীয় সকল বড় গনমাধ্যমের দাবী সোমবার দলীয় নেতাদের সঙ্গে এক ভার্চুয়াল বৈঠকে শেখ হাসিনা জানান, শীঘ্রই দেশে ফিরবেন ও আওয়ামী লীগ সমর্থকদের উপরে অত্যাচারের বিচার করবেন। আলোচনার এক পর্যায়ে শেখ হাসিনা বলেন, চিন্তা করবেন না, আমি আসছি।
সোমবার প্রায় ঘণ্টাখানেক দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করেন। সেই বৈঠক সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারও করা হয়। সেখানেই আওয়ামী লীগ কর্মী সমর্থকদের উদ্দেশ্যে হাসিনা বলেন, অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে আওয়ামী লীগের কর্মী, পুলিস, আনসারের উপরে হামলা করা হল। মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক, সংস্কৃতিক কর্মীরাও বাদ যাননি। একটা বিভত্স পরিস্থিতির সৃষ্টি হল। আমার একটা বিশ্বাস আছে যে আল্লাহ বাঁচিয়ে রেখেছে এই জন্য়ই যে এই যে অন্যায় যারা করছে তাদের বেছে বেছে শাস্তি দেওয়া হবে। বাংলাদেশে সন্ত্রাসীদের কোনও ঠাঁই হবে না। তাদের বিতাড়িত করে শান্তি ফিরিয়ে আনা হবে।
দেশ ছাড়ার পর থেকেই বহুবার ভার্চুয়ালি দলের কর্মী সমর্থকদের সাহস জুগিয়েছেন শেখ হাসিনা। তিনি দেশ ছাড়ার পর বেছে বেছে আওয়ামী লীগের নেতা, কর্মী, সমর্থকদের উপরে হামলা হয়েছে। তাদের বাড়িঘর ভাঙা হয়েছে তাদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এতসবের মধ্য়েও তাদের সাহস জুগিয়েছেন শেখ হাসিনা। সোমবারের বৈঠকে বক্তব্য রাখার এক পর্যায়ে তিনি বলেন, 'চিন্তা করবেন না, আসতেছি আমি।' তবে এই বিষয়ে এখনো কোনোকিছু জানায় নি দেশের কোনো মিডিয়া।
এদিকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সব ধরনের বিদ্বেষমূলক বক্তব্য গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারে নিষেধাজ্ঞার আদেশ প্রকাশ করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে দুই বিচারপতির স্বাক্ষরের পর এ আদেশ প্রকাশ করা হয়। আদেশের অনুলিপি বিটিআরসিসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। শেখ হাসিনা লন্ডনে ভার্চুয়ালি যে বক্তব্য দিয়েছেন তা বিদ্বেষমূলক কি না, তা খতিয়ে দেখে সরকারকে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন প্রসিকিউশন।
এছাড়া এর আগে শেখ হাসিনার সব ধরনের বিদ্বেষমূলক বক্তব্য গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে শেখ হাসিনা আগে যত বিদ্বেষমূলক বক্তব্য দিয়েছেন তা সব মাধ্যম থেকে সরাতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) নির্দেশ দেন আদালত।
বাঁধন/সিইচা/সাএ
সর্বশেষ খবর