
কুমিল্লার বুড়িচংয়ে যৌতুকের টাকা পরিশোধ করতে না পারায় সুমাইয়া আক্তার (২৩) নামে এক প্রবাসীর স্ত্রী (দুই সন্তানের জননী)কে শারীরিক নির্যাতন চালিয়ে কেরির বড়ি জোর খাইয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে শশুড়বাড়ির বিরুদ্ধে।
এ ঘটনায় নিহতের বাবার বাড়ির পরিবার বুড়িচং থানায় একটি অভিযোগ করেন। (১০ এপ্রিল ২০২৫) বৃহস্পতিবার দুপুরে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন থানার ভারপ্রাপ্ত ওসি আজিজুল হক।
নিহতের মা মমতাজ বেগম ও বোন রিনা আক্তার জানায়, বুধবার সকাল ৮টার দিকে বুড়িচং উপজেলার পীরযাত্রাপুর ইউনিয়নের গোসাইপুর এলাকায় মোসলেম উদ্দিনের বাড়িতে এ ঘটনাটি ঘটে। নিহত সুমাইয়া আক্তার দুবাই প্রবাসী রাসেল মিয়ার স্ত্রী ও একই ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের মৃত ফরিদ মিয়ার মেয়ে। এ ঘটনার পর অভিযুক্ত শাশুড়ী মাজেদা বেগম, নূর মোহাম্মদ, ননস ময়না আক্তার নিহতের শিশু ছেলে আরাফ ও শিশু মেয়ে খাদিজাকে নিয়ে পালিয়ে যায়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নিহতের শশুড় বাড়ির লোকজন ঘর তালা দিয়ে পালিয়ে গেছে।
নিহতের বোন রিনা আক্তার ও চাচা মনু মিয়া জানায়, গোসাইপুর এলাকার মৃত মোসলেম উদ্দিনের ছেলে মো. রাসেলের সাথে বিয়ে দেন সুমাইয়াকে। তাদের একটি সন্তান হওয়ার পর যৌতুকের তিন লক্ষ টাকা দাবি করেন। সুমাইয়া বাবার বাড়ি আর্থিকভাবে দুর্বল থাকায় টাকা দিতে পারেনি। সুমাইয়ার দ্বিতীয় সন্তান জন্ম হওয়ার পরেও টাকার জন্য শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালিয়ে আসছিল। গত মঙ্গলবার রাতে সুমাইয়া তার মাকে মোবাইলে কল দিয়ে জানায়, তাকে মেরে দেবর নূর মোহাম্মদ দুবাই চলে যাবে। তার শাশুড়ী, দেবর, ননস ও ননসের স্বামী মিলে পরিকল্পনা করে রেখেছে। বুধবার সকালে বাবার বাড়িতে খবর যায় সুমাইয়া কেরির বড়ি খেয়েছে।
এমন সংবাদ পেয়ে শশুড় বাড়িতে গিয়ে অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করে তাকে চিকিৎসার জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানকার কর্তব্যরত ডাক্তার অবস্থার আশঙ্কাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে মৃত্যু হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পথে মৃত্যুর আগে সুমাইয়া জোর করে কেরি বড়ি খাইয়ে হত্যার পরিকল্পনা বিষয়টি বলে গেছে। সুমাইয়ার স্বীকারোক্তির ভিডিও ফুটেজটি প্রতিনিধির কাছে রয়েছে।
মৃত্যুর পর আত্মীয়-স্বজন নিহতের মরদেহ বুড়িচং থানায় নিয়ে আসে। পরে থানা পুলিশ মরদেহ তাদের হেফাজতে নেয় ও লাশের ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করেন। এ ঘটনার পর থেকে শশুড় বাড়ির লোকজন রফাদফার মাধ্যমে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
বুড়িচং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিজুল হক বলেন, নিহতের পরিবার থানায় অভিযোগ করেছে। তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। লাশের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর বিস্তারিত বলা যাবে।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর