
“পথ নবজাতকরা আপনজন, হবে না কোনো বিভাজন' এ শ্লোগানকে সামনে রেখে দেশের পরিত্যক্ত নবজাতকদের উদ্ধার এবং তাদের নিরাপদ আশ্রয় নিশ্চিতকরণে আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করেছে 'ড: মুজিব নিউবর্ন ফাউন্ডেশন'।
বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) জাতীয় প্রেসক্লাবের দ্বিতীয় তলায় জহুর হোসেন চৌধুরী হলে বিশ্ব পথশিশু দিবস ২০২৫ উপলক্ষ্যে এই আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়। তবে অদূর অতীতে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হলেও এ প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার ডা. মো. রহমান বেশ কয়েক বছর আগে থেকেই ব্যক্তি উদ্যোগে এ কার্যক্রমটি পরিচালনা করে আসছিলেন।
ইতিমধ্যে তিনি ৪১ জন পরিত্যক্ত নবজাতককে উদ্ধার করে জরুরি চিকিৎসা সেবা দিয়ে সুস্থ করে তুলেছেন। তাদের অনেককে নিঃসন্তান দম্পতির হাতে তুলে দিয়ে জীবনের অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছেন। পরবর্তীতে তার ব্যক্তিগত এ মানবিক কার্যক্রমকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে সমাজের বিশিষ্টজনদের সঙ্গে নিয়ে এ ফাউন্ডেশনটি গড়ে তুলেছেন।
সাত সদস্য বিশিষ্ট এ প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি নিজে দায়িত্ব পালন করছেন। সেক্রেটারি জেনারেলের গুরু দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছেন বাংলাদেশ নবজাতক হাসপাতালের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহমুদা সুলতানা আসমা। ডা. মুজিব নিউবর্ন ফাউন্ডেশনের ট্রেজারার মনোনীত হয়েছেন একই হাসপাতালের পরিচালক শায়খা সুহাদা।
প্রতিষ্ঠানটির চারজন এক্সিকিউটিভ মেম্বার হলেন- আশুলিয়া ওমেন এন্ড চিলড্রেন হাসপাতালের অ্যাকাডেমিক পরিচালক ও পেডিয়াট্রিক বিভাগের প্রধান প্রফেসর ডা. সুফিয়া খাতুন, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. হুমায়ুন কবীর মঞ্জু, বাংলাদেশ ব্যাংকের ইন্টারনাল অডিট বিভাগের যুগ্ম পরিচালক (অবসরপ্রাপ্ত) আমেনা খাতুন এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম পরিচালক (ব্যাংক ইনসেপশন ডিপার্টমেন্ট) আবুল কাশেম।
ডা. মুজিব নিউবর্ন ফাউন্ডেশনের মূল লক্ষ্য হলো বাংলাদেশে পরিত্যক্ত নবজাতকদের উদ্ধার করা, যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা করা এবং তাদের জন্য একটি নিরাপদ আশ্রয় নিশ্চিত করা। পাশাপাশি পরিত্যক্ত নবজাতকদের দুরবস্থা সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং তাদের প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানে সমাজকে উদ্বুদ্ধ করতে এ প্রতিষ্ঠানটি অঙ্গীকারবদ্ধ।
সরকারের কাছে ডা. মুজিব নিউবর্ন ফাউন্ডেশনের চাওয়া:- ১২ এপ্রিলকে জাতীয় পথ নবজাতক দিবস ঘোষণা করা। যাতে এ দিবসটিকে সামনে রেখে প্রতিবছর অসহায় পথ নবজাতকদের জন্য বিশেষ কার্যক্রম গ্রহণ করা যায়। একই সঙ্গে সরকারি উদ্যোগে 'নিউবর্ন হাব' গড়ে তোলার দাবি জানায় এ প্রতিষ্ঠানটি। যাতে যে কোনো বাবা-মা তাদের জন্ম দেওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত সন্তানকে নিজের নাম-পরিচয় গোপন রেখে সেখানে রেখে যেতে পারেন।
একই সঙ্গে মাতুয়াইলের শিশু-মাতৃ স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট-এ একটি বিশেষায়িত পণনবজাতক ইউনিট চালু করে সেখানে পথ নবজাতক পরিচর্যার সুযোগ তৈরির দাবি জানায় ডা. মুজিব নিউবর্ন ফাউন্ডেশন। যেখানে উন্নত এনআইসিইউ সুবিধা, পর্যাপ্ত সংখ্যক প্রশিক্ষিত ডাক্তার ও নার্স এবং সংক্রমণ প্রতিরোধ ব্যবস্থা থাকবে।
এছাড়া পথ নবজাতকদের জন্য হিউম্যান মিল্ক স্টোরেজ চালু করা জরুরি বলে মনে করে ডা. মুজিব নিউবর্ন ফাউন্ডেশন। কেননা নবজাতকের জন্য মায়ের বুকের দুধ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু ফেলে যাওয়া নবজাতকদের এ সুবিধা থাকে না। তাই, হিউম্যান মিল্ক স্টোরেজ সেন্টার চালু করে সেখানে নিরাপদভাবে সংরক্ষিত বুকের দুধ সরবরাহ করা জরুরি বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
এসব দাবি নিয়ে আগামী ১২ এপ্রিল ২০২৫, শনিবার বিশ্ব পথশিশু দিবস উপলক্ষ্যে ডা. মুজিব নিউবর্ন ফাউন্ডেশন রাজধানী ঢাকায় এক সচেতনতা র্যালির আয়োজন করবে। এতে দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও মানবাধিকার কর্মীগণ স্বতঃস্ফূর্ত অংশ নেবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা প্রকাশ করেন।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর