
কুমিল্লার দেবিদ্বারে পরিচয়হীন সেই মানসিক ভারসাম্যহীন (পাগলি) আকলিমা আক্তার(২৬) ও তার এক মাসের নবজাতক কন্যা সন্তান মাহিয়া আক্তারকে ঢাকা মিরপুর শাহ্ আলী আশ্রয় কেন্দ্রে স্থানান্তরের ব্যবস্থা করেন উপজেলা প্রশাসন ও সমাজসেবা কার্যালয়।
শুক্রবার (১১ এপ্রিল) সকাল ১০টায় দেবিদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও বিশেষ আদালতের বিচারক (ম্যাজিস্ট্রেট) মোহাম্মদ আবুল হাসনাত খাঁনের আবেদনের প্রেক্ষিতে এবং সমাজ সেবা অধিদপ্তরের ডিজি আল আমিন জামালীর নির্দেশে ভবঘুরে ওই মানসিক ভারসাম্যহীন আকলিমা আক্তার(২৬) ও তার এক মাসের নবজাতক কন্যা সন্তান মাহিয়া আক্তারকে হস্তারের উদ্দেশ্যে ঢাকা মিরপুর শাহ্ আলী আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়।
এসময় উপস্থিত ছিলেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. রায়হানুল ইসলাম, উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা বরুণ চন্দ্র দে, থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) তাছলিমা সিকদার, মানসিক ভারসাম্যহীন আকলিমা ও তার শিশু কন্যাকে দেখভাল করা ভিক্ষুক আয়শা বেগম, সাংবাদিক ও সমাজসেবা কার্যালয়ের কর্মচারী ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা জানান, আমরা মানসিক ভারসাম্যহীন আকলিমার সন্ধান পাওয়ার পর থেকে গর্ভকালীন সময় পর্যন্ত চিকিৎসা প্রদান, আর্থিক সহায়তা প্রদানসহ নজরদারি রেখেছি। এরই মধ্যে শিশুটি দত্তক নেয়ার জন্য অসংখ্য লোকজনের আবেদনও পেয়েছি। মা ও শিশুর নিরাপত্তা এবং আইনি জটিলতায় সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠিয়ে দিয়েছি। সেখানে সমাজ সেবা অধিদপ্তরের ডিজি মহোদয়ের নিকট শিশুটিকে দত্তক নিতে ইচ্ছুকরা আবেদন করতে পারেন, ডিজি মহোদয় দত্তক দিতেও পারেন অথবা আজিমপুর ‘ছোটমনি নিবাসেও’ হস্তান্তর করতে পারেন।
এ ব্যাপারে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা সহকারী কমিশনার মো. রায়হানুল ইসলাম বলেন, মানসিক ভারসাম্যহীন আকলিমা ও তার শিশু কন্যার নিরাপত্তার স্বার্থে আমরা সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রে স্থানান্তরের ব্যবস্থা করেছি। সেখানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থাসহ শিশু ও তার মা’ মানসিক ভারসাম্যহীন আকলিমার থাকা, খাওয়া, চিকিৎসা এবং শিশুটির ভবিষ্যৎ উন্নয়নে যাবতীয় ব্যবস্থা নেবেন।
উল্লেখ্য, কুমিল্লা দেবিদ্বার উপজেলার ৬ নং ফতেহাবাদ ইউনিয়নের ঘোষঘর গ্রামের জব্বর আলী মূন্সীর বাড়ির আয়শা বেগম(৫০) নামে এক ভিক্ষুকের ঘরে ৪ মাস আশ্রিত থাকার পর বেওয়ারিস ওই মানসিক প্রতিবন্ধী (পাগলিটি) গত ১২ মার্চ দিবাগত মধ্যরাতে এক কন্যা সন্তানের মা হয়েছেন।
ভিক্ষুক আশ্রয়দাতা আয়শা বেগম বলেন, আমার আর্থিক অবস্থা ভালো থাকলে তাদের সরকারি আশ্রয় কেন্দ্রে পাঠাতাম না। নিজ সন্তানের মতোই শিশু ও তার মাকে ৫মাস ধরে লালন পালন করে আসছিলাম। আজ তাদের বিদায় দিতে খুবই কষ্ট হচ্ছে।
এ ব্যাপারে দেবিদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবুল হাসনাত খাঁন বলেন, মহিলাটি অভিভাবকহীন এবং আত্মীয় স্বজনের কোন প্রকার খোঁজ না পাওয়ায় তাকে ভবঘুরে ও নিরাশ্রয় ব্যক্তি (পুনর্বাসন) আইন, ২০১১ অনুসারে সমাজসেবা অধিদপ্তর এর প্রত্যয়িত প্রতিষ্ঠান , মীরপুর-১, রাইনখোলা সরকারি আশ্রয় (অভ্যর্থনা) কেন্দ্রে প্রেরণ করেছি। এক্ষেত্রে মহিলাটির গর্ভকালীন সময় পর্যন্ত সমাজের হৃদয়বান ব্যক্তিবর্গ ও সমাজ সেবার কর্মকর্তাদের মানবিক কর্মকাণ্ডে এগিয়ে আসার জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
শাকিল/সাএ
সর্বশেষ খবর