কিশোরগঞ্জ শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত  নরসুন্দা নদীর তীরে অবস্থিত ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদে ১১ টি লোহার দানবাক্স রয়েছে। ৪ মাস ১২ দিন পর শনিবার (১২ এপ্রিল) সকাল ৭টায় এ দানবাক্সগুলো খুলে ২৮ বস্তা টাকা পাওয়া যায়। 

মসজিদ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য এবং মসজিদ কমপ্লেক্সে অবস্থিত মাদরাসা ও এতিমখানার শিক্ষক-শিক্ষার্থী, পার্শ্ববর্তী আল জামিয়াতুল ইমদাদিয়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থী, রূপালী ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ চার শতাধিক মানুষের এসব বস্তাভর্তি টাকা গণনার কাজে অংশ নিয়েছেন। এবার রমজানের জন্য দানবাক্স খোলার সময় পার হয়ে যাওয়ায় অতিরিক্ত একটি টিনের বাক্স বাড়ানো হয়েছে।

অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও দানবাক্স খোলা কমিটির আহ্বায়ক জেসমিন আক্তার এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও পাগলা মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফৌজিয়া খান ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরি উপস্থিতিতে দানবাক্সগুলো খোলা হয়। এছাড়াও এ সময় বিপুলসংখ্যক সেনাবাহিনী, পুলিশ ও আনসার সদস্য উপস্থিত ছিলেন।

কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও পাগলা মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফৌজিয়া খান জানান, এবার ৪ মাস ১২ দিন পর শনিবার সকালে পাগলা মসজিদের ১১টি দানবাক্স খোলা হয়েছে। এতে ২৮ বস্তা টাকা পাওয়া গেছে। পরে মসজিদের দোতলায় এনে টাকা গণনার কাজ শুরু হয়েছে।

তিন মাস পর পর দানবাক্সগুলো খোলা হলেও এবার পবিত্র রমজান মাসের কারণে ৪ মাস ১২ দিন পর দানবাক্সগুলো খোলা হয়েছে। এবারেও তাই ১টি টিনের ট্রাংক বাড়ানো হয়েছিল। আশা করা যাচ্ছে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হবে।

টাকা গণনার কাজে উপপরিচালক স্থানীয় সরকার মমতাজ বেগম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মিজাবে রহমত, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ নাহিদ হাসান খান, কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাহী অফিসার মো. এরশাদ মিয়া, রূপালী ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) রফিকুল ইসলাম প্রমুখ অংশ নিয়েছেন।

এর আগে ৩ মাস ১৪ দিন পর সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৩০ নভেম্বর পাগলা মসজিদের ১১টি দানবাক্স ও একটি টিনের ট্রাংক খোলা হয়েছিল। তখন ৩ মাস ১৪ দিনে ৮ কোটি ২১ লাখ ৩৪ হাজার ৩০৪ টাকা পাওয়া যায়। এছাড়া দানবাক্সে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালংকার পাওয়া গিয়েছিল।

এর আগে, একই বছরের ১৭ আগস্ট পাগলা মসজিদের ১০টি দানবাক্স খোলা হয়েছিল। তখন ৩ মাস ২৬ দিনে ৭ কোটি ২২ লাখ ১৩ হাজার ৪৬ টাকা পাওয়া যায়। যা অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছিল। 

এর আগে, একই বছরের ২০ এপ্রিল পাগলা মসজিদের ৯টি দানবাক্স খোলা হয়েছিল। তখন রেকর্ড ৭ কোটি ৭৮ লাখ ৬৭ হাজার ৫৩৭ টাকা পাওয়া যায়। যা অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছিল।

এছাড়া দানবাক্সে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালংকার পাওয়া গিয়েছি। এছাড়া ২০২৩ সালে চারবার খোলা হয়েছিল কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দানবাক্স। চারবারে মোট ২১ কোটি ৮৭ লাখ ৮৫ হাজার ১৮১ টাকা পাওয়া যায়। টাকার পাশাপাশি হীরা, বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালংকারও পাওয়া গেছে বিপুল পরিমাণ।

মসজিদের দান থেকে পাওয়া এসব অর্থ সংশ্লিষ্ট মসজিদসহ জেলার বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসা ও এতিমখানার পাশাপাশি বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় হয়। এছাড়া করোনাকালে রোগীদের সেবায় নিয়োজিত শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৮০ জন স্বেচ্ছাসেবককেও অনুদান দেওয়া হয়েছিল এ দানের টাকা থেকে।

মসজিদটিতে এবার আন্তর্জাতিক মানের দৃষ্টিনন্দন ইসলামিক কমপ্লেক্স নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দ্রুতই এর কাজ শুরু হবে। যার নামকরণ হবে ‘পাগলা মসজিদ ইসলামিক কমপ্লেক্স’।

এটি নির্মাণে প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে ১১৫ কোটি টাকা। সেখানে ৬০ হাজার মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারবেন।

মুনতাসির/সাএ