
চাটমোহর পৌর শহরের অদূরে অবস্থিত বোঁথড় গ্রামে শুরু হয়েছে ঐতিহ্যবাহী চড়ক পূজা ও তিন দিনব্যাপী মেলা। প্রতিবছর চৈত্র সংক্রান্তির আগের দিন শুরু হয় এই উৎসব। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে হাজারো মানুষের ঢল নামে এই আয়োজনে। দেশ-বিদেশ থেকেও ভক্ত ও পূণ্যার্থীরা আসেন অংশ নিতে।
চড়ক পূজা ও মেলা পরিচালনা কমিটি জানিয়েছে, এ বছরও তারা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে উৎসব আয়োজনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন।
পাটে ধূপ দেওয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয় উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন এই চড়ক পূজার আনুষ্ঠানিকতা। রোববার মন্দির-সংলগ্ন পুকুর থেকে উত্তোলন করা হয় চড়ক গাছ। এরপর মন্দিরে মহাদেবের বিগ্রহ স্থাপনের মাধ্যমে পূজা শুরু হয়, যা চলবে আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত।
পূজা উপলক্ষে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ঘরে ঘরে চলছে অতিথি আপ্যায়নের আয়োজন। তবে, এই পূজা ও মেলার সূচনা সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য ইতিহাস না থাকলেও অনেকে মনে করেন, সিন্ধু সভ্যতা থেকেই এর প্রচলন। আবার কেউ কেউ বলেন, এর সূত্রপাত হয় বান রাজার আমল থেকে।
স্থানীয়রা জানান, হাজার বছর ধরে হিন্দু সম্প্রদায়ের ঐতিহ্য বহন করে আসছে চড়ক পূজা ও মেলা। একটি চড়ক গাছকে কেন্দ্র করে চৈত্র মাসের শেষ সপ্তাহে বসে এই মেলা। এক সময় বৈশাখজুড়েই চলতো মেলার নানা আয়োজন। সেই সময় বোঁথড় গ্রামটি রঙে, আলোয়, মানুষের পদচারণায় উৎসবের রূপ নিত। যাত্রাপালা, সার্কাস, নাগরদোলা, ঘোড়াদোলা, পুতুল নাচসহ নানা বিনোদনমূলক আয়োজন মেলার অন্যতম আকর্ষণ ছিল।
বর্তমানে সেই জাঁকজমকতা কিছুটা কমলেও মেলার মূল আধ্যাত্মিক গুরুত্ব অটুট রয়েছে। এখনও রয়েছে চড়ক গাছ, পাঠ ঠাকুর, ও বিগ্রহ মন্দির। তিন দিনব্যাপী এই উৎসবে অংশ নিতে এখনো দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ভক্তরা আসেন।
চাটমোহরের বাসিন্দা রনি রায় বলেন, “অনেক ভক্ত মনের বাসনা পূরণে মানত করেন। কেউ পাঁঠাবলি দেন, কেউ কবুতর উৎসর্গ করেন, কেউ আবার চালুনে পূজার অর্ঘ্য সাজিয়ে মন্দিরের চারপাশে ঘুরে সেটি দান করেন। এই সময় আত্মীয়-স্বজনরাও ভিড় করেন, গ্রামে চলে উৎসবের আমেজ।”
বোঁথড় মহাদেব মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক কিংকর সাহা বলেন, “হাজার বছরের পুরনো এই পূজায় প্রতিবছর দেশ-বিদেশের পূণ্যার্থীরা অংশ নেন। আমাদের এলাকায় এখন উৎসবের আনন্দ বইছে। মেলা সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে সবার সহযোগিতা চাই।”
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর