
মুরাদনগরের নেতা কায়কোবাদ ও তার নেতাকর্মীরা যেন মুরাদনগরে আওয়ামী লীগের হুবহু প্রতিচ্ছবি হয়ে দাঁড়িয়েছে। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, মাদক ব্যবসা, বালু সিন্ডিকেট ও সন্ত্রাসের মাত্রা পূর্বের চেয়ে বহুগুণে বেড়েছে।
এইসব সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনার অভিযোগ আজ রবিবার (১৩ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর প্রেসক্লাবে মুরাদনগরের ছাত্র-জনতার ব্যানারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক সংসদ সদস্য কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ এবং তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, মাদক ব্যবসা, বালু সিন্ডিকেট ও কায়কোবাদকে মুরাদনগরে আওয়ামী লীগের মতো রাজনৈতিক প্রতিচ্ছবি হিসেবে অভিযোগ করেন তারা।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন, মুরাদনগর উপজেলা এনসিপির সভাপতি মিনহাজুল হক মিনহাজ, এনসিপি মুরাদনগর এনসিপির উপদেষ্টা জাহের মুন্সি, বাংগরা থানা এনসিপির সভাপতি কামরুল হাছান কেনাল। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক এডভোকেট উবাইদুল হক সিদ্দিকীসহ আরোও অনেকে বক্তব্য রাখেন। এসময় মুরাদনগরে চাঁদাবাজির শিকার কয়েকজন ভুক্তভোগীও বক্তব্য প্রদান করেন।
সংবাদ সম্মেলনে মুরাদনগরের ছাত্র-জনতার নেতারা কায়কোবাদ ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ডের উদাহরণ তুলে ধরেন, যার মধ্যে থানায় হামলা, ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক নেতা হামলা, চাঁদাবাজি, জমি দখল এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভাঙচুরসহ বেশ কিছু গুরুতর অভিযোগ ছিল। এছাড়া তারা কায়কোবাদের নেতৃত্বে মুরাদনগরে সন্ত্রাসী কার্যক্রম ও দুর্নীতির প্রভাব বিস্তৃত হওয়ার কথা উল্লেখ করেন।
নেতারা বলেন, কায়কোবাদ এবং তার অনুসারীরা মুরাদনগরে ফ্যাসিবাদী শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছে এবং এর বিরুদ্ধে মুরাদনগরের জনগণ প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। তারা প্রশাসনের কাছে কয়েকটি দাবী তুলে ধরে, যার মধ্যে চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি ছিল।
তারা আরও বলেন, মুরাদনগরের জনগণ আর এই অপশাসন মেনে নেবে না এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য সবসময় রুখে দাঁড়াবে।
সংবাদ সম্মেলনে তারা ৫ দফা দাবি তুলে ধরেন। প্রথম দাবি ছিল চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, মাদক কারবার এবং বালু সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে জরুরি প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা। দ্বিতীয়ত, কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর বিরুদ্ধে নিরপেক্ষ তদন্ত এবং শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়।
তৃতীয় দাবি ছিল, আওয়ামী লীগের পুরনো দুর্নীতিবাজ ও অপরাধী চক্রকে পুনর্বাসনের চক্রান্ত বন্ধ করার দাবি। চতুর্থ দাবি অনুযায়ী, মুরাদনগরে গুম, হয়রানি, মিথ্যা মামলা ও দমনমূলক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়। সর্বশেষ, গণস্বার্থভিত্তিক, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক প্রশাসন গঠনের লক্ষ্যে সকল রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তিবর্গের মধ্যে ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত নেতারা বলেন, ২০২৪ সালের জুলাইয়ে এক অভূতপূর্ব গণঅভ্যুত্থানে দেশের ছাত্র-জনতা, শ্রমজীবী মানুষ এবং সাধারণ নাগরিকদের সম্মিলিত আত্মত্যাগের মাধ্যমে পতন ঘটে এই ফ্যাসিবাদী শাসনের। এই বিপ্লবে মুরাদনগরের ছাত্র-জনতাও তাঁদের সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছে। রক্তক্ষয়ী এই গণআন্দোলনের মাধ্যমে সবাই আশাবাদী হয়েছিল—মুরাদনগর হবে একটি চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, মাদক ব্যবসা, বালু সিন্ডিকেট ও সন্ত্রাসমুক্ত জনপদ।
কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনকভাবে বলতে হচ্ছে, ৫ই আগস্টের পর যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাতে মুরাদনগরবাসী হতাশ এবং ক্ষুব্ধ। মুরাদনগরের স্থানীয় নেতা কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ এবং তার নেতাকর্মীরা যেন মুরাদনগরে আওয়ামী লীগের হুবহু প্রতিচ্ছবি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এমনকি ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগীদের পুনর্বাসনের পেছনেও কায়কোবাদ এবং তার অনুসারীদের সক্রিয় ভূমিকা রয়েছে। আজ মুরাদনগরে দেখা যাচ্ছে, যেসব আওয়ামী নেতাকর্মীরা এতদিন ধরে দুঃশাসনের প্রতীক ছিলেন, তারা কায়কোবাদের ছত্রছায়ায় নতুন রূপে দাপটের সাথে ফিরে এসেছে। এর ফলাফল, একটি স্বাধীন-উন্নয়নশীল মুরাদনগরের স্বপ্ন আজ হুমকির মুখে।
তবে মুরাদনগরবাসী নীরব নয়। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে জনগণ বুক ঠুকে দাঁড়িয়েছে কায়কোবাদের স্বৈরতান্ত্রিক অপশাসনের বিরুদ্ধে। আজকের মুরাদনগর আর সেই পুরনো, ভীত-সন্ত্রস্ত মুরাদনগর নয়। যারা শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদ পতনের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে, তারা কায়কোবাদের নেতৃত্বাধীন মুরাদনগর বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠনের প্রতিষ্ঠিত নতুন ফ্যাসিবাদ তারা কখনোই মেনে নেবে না।
আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, মুরাদনগরের সাধারণ মানুষ—বিশেষ করে যুবসমাজ ও ছাত্র-জনতা- চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজ, মাদক কারবারি, বালু সিন্ডিকেট ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে এখন আর চুপ থাকবে না। আমরা চাই একটি মুক্ত, ন্যায়ভিত্তিক, গণতান্ত্রিক এবং সুশাসনপূর্ণ মুরাদনগর।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর