
সকল জরা-জীর্ণতাকে পেছনে ফেলে সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে বর্ণিল আয়োজনের মাধ্যমে উচ্ছ্বাস ও আনন্দের সাথে বাংলা নববর্ষ-১৪৩২ কে বরণ করে নিয়েছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়।
দিবসটি উপলক্ষ্যে ১ বৈশাখ ১৪৩২ সোমবার (১৪ এপ্রিল ২০২৫) সকালে ‘নববর্ষের ঐকতান ফ্যাসিবাদের অবসান’ শীর্ষক প্রতিপাদ্যকে ধারণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে আনন্দ শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়।শোভাযাত্রায় শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী, নানা বয়সের দর্শনার্থীরা স্বত:স্ফূর্ত অংশগ্রহণ করেন।
নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে থেকে শুরু হয়ে আনন্দ শোভাযাত্রাটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও আশ-পাশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে প্রশাসনিক ভবনের সামনে এসে শেষ হয়। বৈশাখি সাজে শোভাযাত্রায় বাদ্যের তালে তালে এগিয়ে চলে, হাতে হাতে ছিল বাহারি মুখোশ। চরকি, টেপা পুতুল আর পাখির শিল্পকাঠামো শোভাযাত্রাকে দেয় বাঙালির চিরায়ত আবহ।শোভাযাত্রা শেষে গাহি সাম্যের গান মঞ্চে উপস্থিত সকলের উদ্দেশ্যে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম।
উপাচার্য তার বক্তব্যে বলেন, ‘প্রত্যেক জাতির সাংস্কৃতিক জীবনে নানা ধরনের উৎসব পালিত হয়ে থাকে, আমরাও নানা উৎসব পালন করে থাকি। বাংলা নববর্ষ আমাদের প্রাণের উৎসব। সকল ধর্ম ও বর্ণের মানুষের সর্বজনীন উৎসব। আমাদের প্রাণের মিলন মেলা বৈশাখি উৎসব। বৈশাখি মেলা ও উৎসব বাঙালির নিজস্ব সম্পদ।’
নববর্ষের ইতিহাস উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘বাংলা বর্ষপঞ্জি প্রচলিত হওয়ার পর নববর্ষ পালন শুরু হয়েছে। ৯৬৩ হিজরি ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দে বাদশা আকবর সিংহাসনে বসার হিজরি বছরকে গণনায় নিয়ে যে ফসলি হিজরি প্রবর্তন করা হয়, তাই কালক্রমে বাংলার সনে রূপান্তরিত হয়। পহেলা বৈশাখ পুরাতন আবর্জনা দূর করে নতুন জীবনকে আহ্বান করে।
নববর্ষ উৎসবে পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে নতুন করে বন্ধন দৃঢ় হয়। ক্ষুদ্রতা ও সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে আমরা বৃহত্তর জীবন চেতনায় উদ্বুদ্ধ হই। একইসঙ্গে জাতি হিসেবে আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ে। যে ইতিহাস অনেকটা আমরা নাগরিক জীবনে হারিয়ে ফেলতে শুরু করেছিলাম। নববর্ষের মাধ্যমে আমাদের প্রাণে নতুন করে তা সঞ্চার হয়। আমরা মনে করি সাংস্কৃতিক জাতি বা জাতি রাষ্ট্র গঠনে আমাদের ঐক্যবদ্ধ রাখতে শক্তি যোগায়। শুভ ইচ্ছা, শুভ সংকল্প সকল বাধা কাটিয়ে এগিয়ে চলার প্রেরণায় নতুনভাবে উদ্দীপিত করে।’
এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর ড. জয়নুল আবেদীন সিদ্দিকী, কলা অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ইমদাদুল হুদা, বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদের ডিন প্রুফের ড. এ. এইচ. এম কামাল, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মো. বখতিয়ার উদ্দিন, চারুকলা অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. তপন কুমার সরকার, আইন অনুষদের ডিন মুহাম্মদ ইরফান আজিজ, রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর ড. মো. মিজানুর রহমান, প্রক্টর ড. মো. মাহবুবুর রহমান, বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও পহেলা বৈশাখ ১৪৩২ উদ্যাপন কমিটির আহ্বায়ক প্রফেসর ড. মো. হাবিব-উল-মাওলা (মাওলা প্রিন্স), চারুকলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও পহেলা বৈশাখ ১৪৩২ উদ্যাপন কমিটির সদস্য-সচিব নগরবাসী বর্মন সহ শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
আনন্দ শোভাযাত্রা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের গাহি সাম্যের গান মঞ্চের পাশে অনুষ্ঠিত বৈশাখি মেলার উদ্বোধন করেন উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম। মেলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ শিক্ষার্থী ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মোট ২৬টি স্টল বসানো হয়েছে। পরে দুপুরে গাহি সাম্যের গান মঞ্চে উন্মুক্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। একই মঞ্চে সন্ধ্যারপর শুরু হয় বৈশাখের গান, লোকগান ও লোকনৃত্য। সবশেষে রাতে কিচ্ছাপালার মধ্য দিয়ে শেষ হয় বাংলা নববর্ষ বরণের অনুষ্ঠানমালা।
এর আগে চৈত্রসংক্রান্তি ১৪৩১ উদ্যাপন উপলক্ষ্যে (১৩ এপ্রিল ২০২৫) রবিবার বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে ঘুড়ি এবং সন্ধ্যার পর ফানুস উড়ানো উৎসবের উদ্বোধন করেন উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর
ক্যাম্পাস এর সর্বশেষ খবর