
ভোলার চরফ্যাশন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৭ জন নার্স থাকা স্বত্বেও আয়া ও ঝাড়ুদার দিয়ে চলছে শিশু কিশোর ও বয়স্কদের চিকিৎসা সেবার কার্যক্রম। এতে চিকিৎসা সেবা বঞ্চিত হচ্ছে হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগীরা। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর চরফ্যাশন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলে আয়া জোসনা বেগম ও রোকেয়া বেগমকে এক শিশু ও নারী রোগীর চিকিৎসা দিতে দেখা গেছে। যদিও আয়াদের দাবী রোগীর স্বজনরা তাদেরকে ডেকে নেন বলেই তারা রোগীর ক্যানোলা, ইনজেকশন ও স্যালাইন পুশ করে দেন।
অভিযোগ আছে, কর্তব্যরত নার্সদের দ্বায়িত্ব অবহেলার কারণেই রোগীরা বাধ্য হয়ে আয়া ও ঝাড়ুদারদেরকে দিয়ে সেবা নিচ্ছেন। তবে নার্সদের দাবী রোগীর তুলনায় নার্স কম থাকার সুযোগে রোগীর স্বজনরা না ঝুঝে আয়াদের শরণাপন্ন হয়ে থাকে। আয়ারা গোপনে অনৈতিক ভাবে এসব অপকর্ম করেছেন। কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানালেও কোন প্রতিকার মেলেনি।
জানা যায়, চরফ্যাশন উপজেলার ৭ লাখ মানুষের জন্য একটি মাত্র চিকিৎসা সেবার জন্য একটি মাত্র স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। চরফ্যাশন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সরকারী ভাবে নিয়োগ প্রাপ্ত ১৭ জন নার্স রয়েছেন। এসব নার্সরা নিজেদের দ্বায়িত্ব অবহেলার কারণে বিপাকে পড়েন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা সেবা প্রত্যাশীরা।
এছাড়াও অনৈতিক সুবিধা না পেয়ে সেবা দিচ্ছেনা দ্বায়িত্ব প্রাপ্ত নার্সরা। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবী উপজেলার মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে ২০২৩ সনে ৫০ শয্যা থেকে ১০০ শয্যায় উন্নতি করা হয়েছে। তবে হয়নি জনবল ও অবকাঠামো উন্নয়ন। এতে মুখ থুবড়ে পরেছে উপজেলার ৭ লাখ মানুষের চিকিৎসা সেবা। এই সুযোগে হাসপাতালে কর্মরত আয়া ও আউট সোর্সিং এ কর্মরত কর্মীরা অপকর্ম করে থাকেন।
রোগীর স্বজন মো. হানিফের অভিযোগ, হাসপাতালে কর্মরত নার্সরা কাজে ব্যস্ত থাকেন। ভর্তিকৃত রুগি হাসপাতালে আসলে তাদেরকে খুঁজে পাওয়া যায়না। এছাড়াও ২শ থেকে ৩শ টাকা ছাড়া রোগীরা সেবা পাননা। এসুযোগে আয়া ও ঝাড়ুদাররা গ্রাম থেকে আসা সহজ সরল মানুষদের ভুল বুঝিয়ে নিজের নার্স পরিচয় দিয়ে ১০০ টাকা নিয়ে একটি স্যালাইন ও ইনজেকশন পুশ করে দেন। গ্রামের মানুষ অল্প টাকা সেবা পেয়ে আয়াদের কাছ থেকেই সেবা নিয়ে থাকেন।
গতকাল মঙ্গলবার হাসপাতাল চিকিৎসা নিতে আসা আবদুল্লাহপুর ইউনিয়নের নারী আসমা বেগম জানান, মঙ্গলবার দুপুরে তিনি তার ১ দিন বয়সী শিশুকে ঠান্ডা জনিত কারণে চরফ্যাসন হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। এসময় নার্সদের কাছে গেলে আয়া জোসনা বেগম নার্স পরিচয় দিয়ে শিশুকে ইনজেকশন পুশ করেন। আয়া জোসনা ইনজেকশন পুশ করে ২০০ টাকা চাইলে তাকে ১০০ টাকা দেয়া হয়। পরবর্তীতে জানতে পারলাম নার্স পরিচয় দেয়া জোসনা হাসপাতালের আয়া।
অপর একজন সেবা প্রত্যাশী জাহানপুর ইউনিয়নের আবুল কাশেম ফরাজী জানান, তিনি ডায়েরীয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। কিন্তু তার স্যালাইন দেয়াড় জন্য কোন নার্সকে খুঁজে পাননি। পরে তিনি দেখতে পান জোসনা নামের একজন আয়া অন্য এক রোগীকে স্যালাইন পুশ করছেন। এতে তিনি নার্সদের দেখা না পেয়ে বাধ্য হয়ে আয়াকে দিয়েই স্যালাইন পুশ করেছেন।
আয়া জোসনা বেগম জানান, আমি আয়া হলেও আমি ক্যানোলা ও স্যালাইন পুশ করতে পারি তাই রোগীরা ও তাদের স্বজনরা অনেক সময় ক্যানোলা ও স্যালাইন পুশ করতে আমাদেরকে ডাকেন তাই আমরা করে থাকি। এতে মানুষের উপকার হয়।
আউট সোর্সিএ কর্মরত ঝাড়ুদার রোকেয়া বেগম জানান, নার্সরা কাজে ব্যস্ত থাকার কারণে রোগীরা আমাদেরকে স্যালাইন ও ইনজেকশন দিতে ডেকে নেন। তাই দিয়ে দেই। তার এসব কাজ করতে পারেন কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, নার্সদের কাছ থেকে আমরা শিখে নিয়েছি। তাই দিয়ে থাকি।
চরফ্যাশন হাসপাতালে দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত নার্স ইনচার্জ অপরজিতা রানী জানান, নার্সরা সঙ্গে থাকলে আয়ারাও কাজ করতে পারে । এছাড়া চরফ্যাশন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জনবল সংকট তাই অনেক সময় আয়ারা কাজ করে থাকেন। টাকা নেয়া প্রসঙ্গে তিনি জানান, অনেক সেবা পেয়ে নার্সদের খুশি হয়ে টাকা দিয়ে থাকেন । টাকা দিয়ে পড়ে যদি কেউ আবার অভিযোগ তুলেন তাহলে তো কিছু করার নাই।
চরফ্যাশন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প : প : কর্মকর্তা ডাঃ শোভন বসাক জানান, আয়ারা এসব কাজ করতে পারেনা। বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর