
ঘড়ির কাটায় তখন সকাল সাড়ে নয়টা। অন্য শিক্ষার্থীরা যখন পরীক্ষা দিতে হাসিমুখে কেন্দ্রে প্রবেশ করছিলো, ঠিক এমন সময় রিয়াদ হাসান (১৬) নামে এক এস.এস.সি পরীক্ষার্থীকে বহন করা একটি অ্যাম্বুলেন্স এসে থামে পরীক্ষা কেন্দ্রের সামনে। মাথায় ব্যান্ডেজ করা রিয়াদকে ধরে স্বজন ও সহপাঠীরা পৌঁছে দেন পরীক্ষার নির্ধারিত কক্ষে। মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) এমন দৃশ্য দেখা গেছে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার এস. এস. সি পরীক্ষা কেন্দ্র চরনিখলা উচ্চ বিদ্যালয়ে।
রিয়াদ ঈশ্বরগঞ্জ পৌর এলাকার পাইভাকুরী আব্দুল খালেক উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এবার এস.এস.সি পরীক্ষার্থী। মঙ্গলবার ছিলো তার ইংরেজি ১ম পত্রের পরীক্ষা। আহত রিয়াদ ঈশ্বরগঞ্জ পৌর এলাকার শিমরাইল গ্রামের মতিউর রহমানের ছেলে। পরীক্ষা শেষ হলে স্বজনরা ফের রিয়াদকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
এদিকে পরীক্ষা শেষে মঙ্গলবার বেলা ১ টার দিকে আহত রিয়াদ, তার বাবা ও তিন ভাইয়ের উপর অতর্কিত হামলাকারীদের গ্রেফতার করে দ্রুত বিচার দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছে রিয়াদের সহপাঠীরা।
ভুক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানা যায়, রিয়াদের ভাই রমজান আলী (২৬) পাশের ধামদী গ্রামের সিরাজুল ইসলামের কাছে পাওনা টাকা চায়। এনিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে রমজান আলীকে মারধর শুরু করে সিরাজ ও তার লোকজন। রমজানকে মারধরের খবর পেয়ে তাকে বাঁচাতে বাবা মতিউর, তিন ভাই-রাজু মিয়া (২৭), রিয়াদ হাসান (১৬), সজিব মিয়া (৩২) ছুটে আসেন।
এসময় তাদেরকেও লাঠিসোঁটা দিয়ে পিটুনির পর ধারালো অস্ত্রে গুরুতর জখম করে সিরাজ ও তার লোকজন। গত ১৩ এপ্রিল (শনিবার) আনুমানিক রাত সাড়ে ১১টার দিকে ধামদী গ্রামে ওই ঘটনাটি ঘটে।
এসময় স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। এতে রাজু মিয়া ও রিয়াদ হাসান গুরুতর আহত হয় এবং তাদের বাবা মতিউর রহমানের অবস্থা আশঙ্কাজনক। গুরুতর আহত রাজু মিয়া ও রিয়াদ হাসান বর্তমানে ময়মনসিংহ মেডিকেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। বাবা মতিউর রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। অপর দুই ভাই রমজান আলী ও সজিব মিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরে যান।
এদিকে এঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করে তাদের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেয়।
রিয়াদের সহপাঠী (এসএসসি পরীক্ষার্থী) তামান্না আক্তার, জাহিদুল হাসান, প্রীতি, সজিব ও ইতি জানায়, আমাদের বন্ধু রিয়াদ, তার বাবা ও তিন ভাইয়ের ওপর হামলাকারী সকল কিশোরগ্যাং সদস্য ও সন্ত্রাসীদের দ্রুত গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। না হলে আরো কঠিন কর্মসূচি দিবে বলে জানান তারা।
আহত রাজু মিয়া জানান, সিরাজুল ইসলামের কাছে পাওনা টাকা চাওয়ায় সে দলবল নিয়ে প্রথমে তার ভাই রমজান আলীর উপর হামলা চালায়। রমজানের চিৎকার শুনে তাকে বাঁচাতে যেতেই বাবা সহ তাদের ৪ ভাইকে গুরুতর জখম করে। আমার ছোট ভাই কি দোষ করেছিল? সে এবছর এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে তাকেও ছাড় দিলো না। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই। আমার বাবার জন্য দোয়া চাই।
এদিকে ঘটনার দিন রাতেই ভোক্তভোগী রমজান আলী (২৭) বাদী হয়ে ১০জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা আরও ৪-৫ জনকে আসামি করে ঈশ্বরগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
ঘটনার পর ওইদিন রাতেই অভিযান চালিয়ে মামলার এজহারভুক্ত সাত নম্বর আসামি ইমন মিয়া (২২) কে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
এ বিষয়ে জানতে আসামি সিরাজুল ইসলাম সহ তাদের একাধিক নম্বরে যোগাযোগ করলেও নম্বরগুলো বন্ধ পাওয়া যায়।
এ ব্যাপারে ঈশ্বরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ ওবায়দুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে থানায় মামলা রুজু করা হয়েছে। ঘটনার পর ওইদিন রাতেই অভিযান চালিয়ে এক আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকী আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর