
কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনা থানার ওসি মো. মনোয়ার হোসেনকে প্রত্যাহারের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও থানা ঘেরাও করেছে স্থানীয় লোকজন। বুধবার (১৬ এপ্রিল) দুপুরে এ কর্মসূচিতে কয়েক হাজার মানুষ অংশ নেয়। ইটনার বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতার ব্যানারে এ বিক্ষোভ মিছিল ও থানা ঘেরাও হলেও এতে উপজেলা বিএনপি এবং এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণ বেশি ছিল। আয়োজকদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগ ও এর দোসরদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন ও ষড়যন্ত্রে ওসি’কে ফাঁসানো হয়েছে।
তারা বলছে, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর হিসেবে পরিচিত ছাত্রলীগ করা কথিত এক সমন্বয়কের ষড়যন্ত্র ও পরিকল্পিত ফোনালাপের অডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফাঁস করে জনবান্ধব ওসিকে বদলি করা হয়। তাকে অবিলম্বে পুনর্বহাল করতে হবে।
দুপুরে ইটনা মধ্যবাজার থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়। পরে থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভকারীরা। সেখানে আধা ঘণ্টা ঘেরাও কর্মসূচি চলে। এ সময় বিক্ষোভকারীরা ওসি মনোয়ারের পুনর্বহাল চেয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেয়। সেখান থেকে মিছিলটি উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন সড়কে গিয়ে অবস্থান নেয়। বেলা ২টার দিকে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে ইটনা উপজেলা বিএনপির সভাপতি এসএম কামাল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকুজ্জামান ঠাকুর স্বপন, সিনিয়র সহ-সভাপতি ও উপজেলার জয়সিদ্ধি ইউপি চেয়ারম্যান মো. মনির উদ্দিন, সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক পলাশ রহমান ও উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক আজাদুর রহমান সুজন বক্তব্য রাখেন।
বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, ১২৮ বস্তা ভিজিএফের চাল উদ্ধারের ঘটনায় গত ২০ মার্চ রাতে ইটনা উপজেলার বাদলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আদিলুজ্জামান ভূঁইয়াকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। তার এই গ্রেপ্তারের পর আওয়ামী দোসররা ইটনা থানার ওসি মো. মনোয়ার হোসেনকে সরাতে নানাভাবে তৎপর হয়ে ওঠে।
এই তৎপরতার অংশ হিসেবে সমন্বয়ক দাবিদার আফজাল হোসেন শান্ত নিজে থেকে ওসি মনোয়ার হোসেনকে ফোন করে কলরেকর্ড ফাঁসের নাটক সাজান। তারা বলেন, ৫ আগস্ট পরবর্তী পরিস্থিতিতে ইটনা থানায় ওসি হিসেবে মনোয়ার হোসেন যোগদান করেন। যোগদানের পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নসহ জনমনে পুলিশের প্রতি আস্থা ফেরাতে তিনি আন্তরিকভাবে কাজ করেন। এসবের মাধ্যমে তিনি থানা এলাকায় একজন জনবান্ধব পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।
এ সময় তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার মামলায় আসামি গ্রেপ্তারসহ আওয়ামী দোসরদের অপকর্ম প্রতিরোধে সোচ্চার ছিলেন। এতে ওসি মনোয়ার হোসেনের উপর আওয়ামী দোসর ও তাদের সুবিধাভোগীরা ক্ষিপ্ত ছিল। তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী ফোন রেকর্ডের নাটক সাজানো হয় এবং ওসি মনোয়ারকে বদলি করা হয়েছে।
এদিকে ওসি মো. মনোয়ার হোসেনকে প্রত্যাহারের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও থানা ঘেরাও কর্মসূচির একটি লাইভ ভিডিও নিজের ফেসবুক টাইমলাইনে শেয়ার করে আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন বদলিকৃত ওসি মনোয়ার হোসেন। স্ট্যাটাসে তিনি যে অভিযোগে তাকে তাৎক্ষণিক বদলি করা হয়েছে, সে বিষয়ে তদন্তের মাধ্যমে দোষী সাব্যস্ত করে তাকে শুধু বদলি নয় বরং বরখাস্ত করলে তিনি খুশি হতেন, কেননা এতে বাংলাদেশ পুলিশের ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ন থাকত বলে উল্লেখ করেছেন।
বুধবার বিকাল ৩টা ২০ মিনিটে দেওয়া ফেসবুক স্ট্যাটাসে ওসি মনোয়ার লিখেছেন, “কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে আমি ছিলাম আপনাদের পাশে। দয়া করে কোনো বিক্ষোভ বা কোনো সমাবেশ করবেন না। যে অভিযোগে আমাকে তাৎক্ষণিক বদলি করা হয়েছে, সে বিষয়ে তদন্তের মাধ্যমে দোষী সাব্যস্ত করে আমাকে শুধু বদলি নয় বরং বরখাস্ত করলে আমি খুশি হতাম, কেননা এতে বাংলাদেশ পুলিশের ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ন থাকত। যাই হোক, আমি বিশ্বাস করি বাংলাদেশ পুলিশ তথা রাষ্ট্র একদিন না একদিন এ বিষয়ে অবশ্যই তদন্ত করবে। ততদিন পর্যন্ত আপনারা ধৈর্য ধরুন, নয়তো অশুভ চক্র নতুন করে আবার আমাকে বিপদে ফেলবে। সবাই ভালো থাকুন।
আমি আমার কর্মকালীন সময়ে শত চেষ্টা করেছি, রাতকে দিন করেছি, দিনকে করেছি রাত, মাইলের পর মাইল পায়ে হেঁটেছি, কনকনে শীতে স্পিডবোটে ছুটে চলেছি শত শত নটিক্যাল মাইল, শত বাধা পেরিয়ে সমাজে লুকিয়ে থাকা ভদ্রবেশী মুনাফেকদের এড়িয়ে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে কাজ করার জন্য। কারণ আমি শহীদ পরিবারেরই একজন।
আপনাদের এখানে এসে কাজের সুবাদে পিতৃতুল্য ইটনা-মিঠামাইন-অষ্টগ্রামের মহামানবের সান্নিধ্য পেয়েছি—এ আমার জীবনের পরম প্রাপ্তি। ঐকান্তিক চেষ্টা সত্ত্বেও কিছুই করতে পারি নাই ইটনাবাসীর জন্য, এজন্য আমি ইটনার লক্ষ মানুষের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।”
এ প্রসঙ্গে বদলিকৃত ওসি মনোয়ার বলেন, সরকারি চাকরি বদলির চাকরি। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বদলির আদেশ দিয়েছেন, সে অনুযায়ী আমি দায়িত্ব হস্তান্তর করেছি। আমি ইটনায় থাকা অবস্থায় চেষ্টা করেছি মানুষকে সেবা দিতে। কোনো ধরনের অনিয়মের সঙ্গে জড়িত হইনি।
এ ব্যাপারে কিশোরগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী বলেন, “আমি জেনেছি উনারা মিছিল করেছে। থানা ঘেরাও হয়নি। ওসি'র ফেসবুক স্ট্যাটাসের বিষয়টি জানি না। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখব।”
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর