
যাকাত দেওয়ার জন্য কোনো ব্যক্তি যদি কিছু কিনে রাখে এবং হকদারকে তা বুঝি দেয়ার আগে চুরি হয়ে যায়, তাহলে সেই ব্যক্তির করণীয় কী?
কিনে রাখা এবং চুরি হয়ে যাওয়ার কারণে কী যাকাত আদায় হয়ে যাবে নাকি পুনরায় সেই বস্তু কিনে বা সেই পরিমাণ যাকাত আদায় করতে হবে?
এ বিষয়ে ইসলামী আইন ও ফেকাহশাস্ত্রবিদদের মতামত হলো—
যাকাতের জন্য কিনে রাখা বস্তু চুরি হওয়ার কারণে যাকাত আদায় বা মাফ হয়ে যাবে না। কারণ, যাকাতের নিয়তে কোনো বস্তু বা টাকা নিজের কাছে পৃথক করে রাখলেও তা নিজের মালিকানাতেই থেকে যায়। তাই কোনো কারণে তা খোয়া গেলে নিজের সম্পদ খোয়া গেছে বলেই ধর্তব্য হবে।
আর যাকাত আদায় হওয়ার জন্য যাকাতের উপযুক্ত ব্যক্তি বা তার প্রতিনিধির হাতে তা পৌঁছে দেওয়া আবশ্যক। এর আগে যাকাত আদায় হয় না। অতএব যাকাতের জন্য কিনে রাখা বস্তু হারিয়ে যাওয়ার কারণে যাকাত আদায় হবে না; বরং পুনরায় যাকাত আদায় করতে হবে। (আলবাহরুর রায়েক ২/২১১; আল কাউসার, আদ্দুররুল মুখতার ২/২৬৯)
যাকাত যাদের দেবেন
যার কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ আছে— এমন স্বাধীন ও পূর্ণবয়স্ক মুসলিম নর-নারী জাকাত আদায় করবে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন—
وَأَقِيْمُوْا الصَّلَاةَ وَاٰتُوْا الزَّكَاةَ وَمَا تُقَدِّمُوْا لِأَنْفُسِكُمْ مِّنْ خَيْرٍ تَجِدُوْهُ عِندَ اللهِ اِنَّ اللهَ بِمَا تَعْمَلُوْنَ بَصِيرٌ
‘তোমরা নামাজ কায়েম করো, যাকাত আদায় করো। আর তোমরা নিজেদের জন্য যে উত্তম আমল করে থাকো তার প্রতিদান মহান আল্লাহর কাছে পাবে। তোমরা যা কিছু করছো নিশ্চয়ই আল্লাহ তা দেখছেন। (সূরা বাকারা, আয়াত :১১০)
আল্লাহ তায়ালা জাকাত ব্যয়ের খাতগুলো সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন। গরিব-দুঃখীর স্বার্থের প্রতি খেয়াল রেখেই জাকাতের খাতগুলো নির্ধারণ করা হয়েছে।
যাকাতের সম্পদ ব্যয়ের খাত মোট আটটি। খাতগুলো হলো—
এক. গরিব-ফকির— যাদের নেসাব পরিমাণ সম্পদ নেই। দুই. মিসকিন— যাদের কোনো সম্পদ নেই। তিন. ইসলামি রাষ্ট্রের সরকারকর্তৃক জাকাত, সদকা, ওশর ইত্যাদি উসুল করার কাজে নিয়োজিত ব্যক্তি। চার. ইসলামের দিকে ধাবিত করার জন্য জাকাত দেওয়া। তবে এ খাতটি বর্তমানে আর প্রযোজ্য নয়। পাঁচ. নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদের বিনিময়ে স্বাধীন হওয়ার চুক্তিতে আবদ্ধ দাস-দাসী। ছয়. পর্যাপ্ত পরিমাণ মাল না থাকার দরুণ ঋণ পরিশোধে অক্ষম ঋণী ব্যক্তি। সাত. যোদ্ধা, যারা যুদ্ধের অস্ত্র যোগাতে অক্ষম অথবা টাকার কারণে হজের কাজ পূর্ণ করতে অক্ষম বা ইলম হাসিল ও দ্বীনি দাওয়াতের কাজে নিয়োজিত গরিব মানুষ। আট. সফর অবস্থায় অভাবগ্রস্ত মানুষ।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর