• ঢাকা
  • ঢাকা, শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৫
  • শেষ আপডেট ৫৩ সেকেন্ড পূর্বে
রাশেদুল ইসলাম রাশেদ
গাইবান্ধা প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ১৭ এপ্রিল, ২০২৫, ০২:১৯ দুপুর
bd24live style=

সুন্দরগঞ্জের সেই প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে এবার শিক্ষক লাঞ্ছিতের অভিযোগ

ছবি: প্রতিনিধি, বিডি২৪লাইভ

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সাহাবাজ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা ফাতেমা আক্তার মিলির বিরুদ্ধে একের পর এক অনিয়ম, দুর্নীতি ও অসদাচরণের অভিযোগ উঠছে। 

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে এক সাংবাদিকের সাথে অশোভন আচরণ, গালিগালাজ ও স্যান্ডেল হাতে হুমকি দিয়ে আলোচিত হওয়ার পর ইউএনওর কাছে ‘মুচলেকা’ দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই ফের নতুন বিতর্কে জড়িয়েছেন এই শিক্ষিকা।

জানা যায়, গত ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের দিন দুপুরে প্রধান শিক্ষক ফাতেমা আক্তার মিলির বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে দৈনিক দেশ রূ পান্তর পত্রিকার প্রতিনিধি শেখ মামুন উর রশিদের সঙ্গে তিনি অশোভন আচরণ করেন এবং স্যান্ডেল খুলে লাঞ্ছিত করার হুমকি দেন।

এ ঘটনায় পরদিন গত ২৭ মার্চ সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে একটি অঙ্গীকারনামা দেন প্রধান শিক্ষক ফাতেমা আক্তার মিলি। অঙ্গীকারনামায় তিনি বলেন, 'আমি আর কোনদিন সাংবাদিক ও জনসাধারণের সাথে অশালীন আচরণ কিংবা অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করব না। এর কোন ব্যত্যয় ঘটলে আমার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে, তাতে কোন আপত্তি থাকবে না।'

এই অঙ্গীকারনামা দেওয়ার এক সপ্তাহ না যেতেই তিনি বিদ্যালয়ের দুইজন এসএসসি পরীক্ষার্থীর কাছে প্রবেশপত্র দেওয়ার শর্তে ছয় হাজার টাকা দাবি করেন প্রধান শিক্ষিকা। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই সহকারী শিক্ষক মঈনুল ইসলাম প্রতিবাদ জানান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ফাতেমা আক্তার তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে প্রকাশ্যে লাঞ্ছিত করেন। এ নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজ কুমার বিশ্বাসের কাছে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষক ও কর্মমচারী।

বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক ও কর্মচারীর অভিযোগ, ফাতেমা আক্তার মিলি প্রয়াত সংসদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের আত্মীয় এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সৈয়দা খুরশিদ জাহান স্মৃতির বোন।

এই রাজনৈতিক পরিচয়ের জোরেই ২০১৫ সালে সাতজন সিনিয়র শিক্ষককে উপেক্ষা করে তিনি সহকারী শিক্ষক থেকে সরাসরি প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ পান। এরপর থেকেই তিনি বিদ্যালয়ে একচ্ছত্র কর্তৃত্ব কায়েম করে নানা অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতায় জড়িয়ে পড়েন।

অভিযোগ রয়েছে, তিনি একাধিকবার বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটিতে নিজের স্বামীর বড় ভাইকে সভাপতি হিসেবে বসিয়ে পকেট কমিটি গঠন করেন। ২০১৫ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ১১ জন শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে মোটা অঙ্কের অর্থ লেনদেন করেন।

বিদ্যালয়ের মাসিক আয়-ব্যয়ের কোনো হিসাব শিক্ষক-কর্মচারীদের সঙ্গে ভাগাভাগি না করে একাই পকেটস্থ করেন। এমনকি শিক্ষকদের প্রাপ্য থাকা সত্ত্বেও সরকার নির্ধারিত টিউশন ফি’র অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে তা নিজেই আত্মসাৎ করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

অভিযোগে আরও বলেন, তিনজন শিক্ষক উচ্চতর গ্রেড পাওয়ার যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও তা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন প্রধান শিক্ষিকার একক সিদ্ধান্তে। অভিযোগ রয়েছে, তিনি প্রয়োজনীয় নথিতে স্বাক্ষর দিতে অস্বীকৃতি জানান, ইএফটি সংশোধনে সহায়তা করেন না। এমনকি চাকরিতে থাকা অবস্থায় নৈশপ্রহরী আব্দুর রহমানের দুই বছরের বেতন বন্ধ করে দেন এবং অবসরের পর তার প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধাও আটকে রেখেছেন এই প্রধান শিক্ষক।

নৈশপ্রহরী আব্দুর রহমানের ছেলে নুরুজ্জামান জানান- আমার বাবা বেঁচে থাকতে দুই বছর বেতন-ভাতা বন্ধ করে রেখেছিলেন। সেই বেতনের টাকা এখনো পাইনি। বাবা ২০২১ সালে মারা গেলেও বকেয়া ভাতাসহ পেনশনের টাকা আজও উত্তোলন করতে পারিনি। প্রধান শিক্ষককে দুই লাখ টাকা না দিলে তিনি অবসরকালী ভাতার কাগজে সাক্ষর করবেন না। দীর্ঘদিন ধরে তাকে অনুরোধ করেও কোন সহযোগিতা পাননি বলেও জানান ভুক্তভোগী পরিবারটি।

সহকারী শিক্ষক মঈনুল ইসলাম জানান, ‘সম্প্রতি এসএসসির প্রবেশপত্র নিয়ে দুইজন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ছয় হাজার টাকা দাবি করা হয়। আমি এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষিকা আমার ওপর চড়াও হন। অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং জুতাপেটা করার হুমকি দেন। এর আগেও বিদ্যালয়ের পিয়ন আব্দুর রাজ্জাককে তিনি প্রকাশ্যে মারধর করেন। আমরা তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করি।’

সাংবাদিক শেখ মামুন উর রশিদ বলেন, ‘স্বাধীনতা দিবসে প্রধান শিক্ষিকার অশোভন আচরণে আমরা মর্মাহত হয়েছি। তিনি ইউএনও’র কাছে ভবিষ্যতে এমন আচরণ না করার অঙ্গীকার করেছিলেন, কিন্তু ফের একই পথে হাঁটলেন। একজন শিক্ষকের কাছ থেকে এমন আচরণ কাম্য নয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ ও সম্মান রক্ষায় প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।’

এসব অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে সাহাবাজ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফাতেমা আক্তার মিলির সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার সাড়া পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষিকা ও সাংবাদিকের আচরণ আমি দেখেছি, তাই মন্তব্য করতে চাই না। তবে শিক্ষকরা যে ইউএনও স্যারের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন তা শুনেছি। আমার কাছে তদন্তের জন্য এখনো কোনো কাগজ আসেনি। পেলে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করবো।’

সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজ কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘সাহাবাজ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করতে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছি। তিনি প্রতিবেদন দাখিল করলে ম্যানেজিং কমিটির সভা ডেকে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সাংবাদিকের সঙ্গে অশোভন আচরণের ঘটনায় তাকে ডেকে এনে মুচলেকা নেওয়া হয়েছিল। তিনি এমন আচরণ ভবিষ্যতে করবেন না বলে অঙ্গীকার করেছিলেন। নতুন ঘটনায় সেই অঙ্গীকার ভঙ্গ হয়েছে কিনা, তদন্তে প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এ বিষয়ে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ডিন ও বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. শফিক আশরাফ বলেন, ‘শিক্ষকরা সমাজের এক ধরনের দর্পণ। একজন শিক্ষক কেবল শ্রেণিকক্ষের শিক্ষক নন, তিনি সমাজেরও শিক্ষক। শিক্ষার্থীরা শুধু তার পাঠদান থেকেই নয়, তার আচরণ, পোশাক-পরিচ্ছদ, জীবনযাত্রা—সব কিছু থেকেই শেখে। 

শিক্ষার্থীদের কথাবার্তা, চলাফেরা, এমনকি তারা অন্যদের সঙ্গে কীভাবে আচরণ করে, সেটার পেছনেও শিক্ষকের ছায়া পড়ে। তাই শিক্ষককে সর্বক্ষেত্রে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। শিক্ষকতা একটি মর্যাদাপূর্ণ পেশা। সারা পৃথিবীতে এই পেশার প্রতি সম্মান রয়েছে। সেই সম্মান ও মর্যাদা ধরে রাখার দায়িত্ব শিক্ষকদেরই নিতে হবে। যারা সেটা ধরে রাখতে ব্যর্থ হন, তারা শিক্ষক হিসেবে ব্যর্থ বলে বিবেচিত হবেন।’

সাংবাদিকদের সঙ্গে বিদ্যালয়ের এক প্রধান শিক্ষকের অসৌজন্যমূলক আচরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমি ওই ঘটনার ভিডিও দেখেছি। একজন শিক্ষক হিসেবে এমন আচরণ অত্যন্ত বিব্রতকর ও দুঃখজনক। একজন শিক্ষকের উচিত সংযত থাকা, বিশেষ করে জনসম্মুখে। 

তিনি যেহেতু শুধু একজন ব্যক্তি নন, অন্য শিক্ষকদেরও প্রতিনিধিত্ব করেন—তাই তার আচরণ সমগ্র শিক্ষকসমাজকেই প্রভাবিত করে।

মুনতাসির/সাএ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পাঠকের মন্তব্য:

BD24LIVE.COM
bd24live.com is not only a online news portal. We are a family and work together for giving the better news around the world. We are here to give a nice and colorful media for Bangladesh and for the world. We are always going fast and get the live news from every each corner of the country. What ever the news we reached there and with our correspondents go there who are worked for bd24live.com.
BD24Live.com © ২০২০ | নিবন্ধন নং- ৩২
Developed by | EMPERORSOFT
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ info@bd24live.com
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
ইমেইলঃ office.bd24live@gmail.com