
খাদ্য উদ্বৃত্ত জেলা নেত্রকোণার হাওড় অধ্যুষিত খালিয়াজুরী, মদন মোহনগঞ্জ উপজেলায় পুরোদমে চলছে বোরো ধান কর্তনের কার্যক্রম। প্রকৃতপক্ষে, এই অঞ্চলের কৃষকেরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন তাদের প্রধান ফসল ঘরে তোলার কাজে।
চলতি বছর ধান উৎপাদনে নেত্রকোনা জেলায় বেশি জমি আবাদ হয়েছে। নতুন জাতের ধানের উৎপাদন বেড়েছে। এবছর উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে গত বছরের চেয়েও বেশি। জেলা প্রশাসন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও পানি উন্নয়ন বোর্ড এর যৌথ তদারকিতে ও প্রাকৃতিক কোন দুর্যোগ না থাকায় এবং এর দাম পাওয়ায় মহা খুশি নেত্রকোনা অঞ্চলের কৃষক।
নেত্রকোণা জেলার হাওরাঞ্চলে বোরো ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। বছরের একমাত্র ফসল বোরো ধান কেটে ঘরে তুলতে কৃষকরা রাত দিন এক করে কাজ করে যাচ্ছেন। প্রতিবছরই হাওরাঞ্চলের একমাত্র বোরো ফসল ঘরে তুলতে প্রাকৃতিক দুর্যোগের আশঙ্কা মাথায় নিয়ে মাঠে থাকতে হয় হাওরবাসীর।
হাওর উপজেলা মোহনগঞ্জের মাঘানের গৌড়াকান্দা গ্রামের কৃষক রফিকুজ্জামান জানান, ‘ফসল কাটা পুরোদমে শুরু হয়েছে, সব কাটা শেষ হয়নি।
খালিয়াজুরি গ্রামের কৃষক মনির হোসেন বলেন, ‘গত বেশ কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর এখন নাগাদ শিলাবৃষ্টি বৃষ্টি হয় নি বলে ফসলের বাম্পার ফলন হয়েছে, পাশাপাশি এবার বিদ্যুৎ, সেচ, সার ও বীজ নিয়ে কৃষকদের কোন সমস্যায় পড়তে হয়নি।’ধান কাটা এর পর স্থানীয়ভাবেই ১২০০ মন বিক্রি হচ্ছে ধান।
আরেক হাওর উপজেলা মদনের মাঘান ইউনিয়নের কাতলা গ্রামে চৌধুরী তালে হোসেন মিছিলজান একাডেমির শিক্ষক রাশেদ বিন সিদ্দেকী জানান, ‘হাওর এলাকার একমাত্র ফসল বোরো ধান। এ এলাকায় এখন পুরোদমে চলছে এ সোনালী ফসল সংরক্ষণের প্রক্রিয়া। প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ধান ইতিমধ্যে কাটা হয়েছে, কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না থাকলে এবছর কৃষকরা ভালোভাবেই ফসল ঘরে তুলতে পারবে। কৃষিভিত্তিক সংগঠন বারসিক এর নেত্রকোনা অঞ্চল সমন্বয়কারী অহিদুর রহমান জানান, অন্যান্য বছরের চেয়ে এবছর, প্রাকৃতিক কোন দুর্যোগ নেই, সার বীজ সেচ নতুন জাতের উন্নত বীজ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ গুলোর সঠিকভাবে তদারকি করায় ভালো উৎপাদনের আশা করছেন নেত্রকোনার কৃষক।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ নুরুজ্জামান সংগ্রাম জানান, ‘নেত্রকোনা জেলায় এবছর ১ লক্ষ ৮৫ হাজার ৪৬০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছে। তার মধ্যে হাওরাঞ্চলের জমির পরিমাণ ৪১ হাজার ৭৫ হেক্টর। আজ পর্যন্ত হাওরে শতকরা ৪০ ভাগ জমির ধান কর্তন করা হয়েছে। আমরা আশা করছি আবহাওয়া স্বাভাবিক থাকলে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে সম্পূর্ণ ধান কর্তন করতে সক্ষম হবো। উল্লেখ্য চলতি বোর মৌসুমী ব্রি নতুন জাতের বীজ সরবরাহের কারণে উৎপাদন গত বছরের চেয়ে বেশি হবে বলে আশা করছি। গত বছর আবাদ ছিল ১৮৫৩২০ হেক্টর এবং উৎপাদন ১২৬২০৯৫ মেট্রিকটন ধান। এ বছর আবাদ হয়েছে ১৮৫৪৬০ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১২৬৩৪৯০ মে.টন।
উৎপাদন লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে বেশি হবে। প্রতি একরে উৎপাদন বাড়বে চল্লিশ কেজি এক মন। ৩০ এপ্রিলের মধ্যে হাওড়ের ধান কর্তন শেষ হবে বলে তিনি জানান।
উল্লেখ্য, এবছর জেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে বোরো ধান আবাদ করা হয়েছে এবং কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগের আশঙ্কা নেই তবে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে কৃষকদেরকে বৈশাখ মাসে করণীয় হিসেবে শতকরা ৮০ ভাগ পাকা ধান দ্রুত কেটে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।আগাম বন্যার শঙ্কায় খালিয়াজুরী হাওরে পুরোদমে চলছে বোরো ধান কর্তন।এখন পর্যন্ত ১২৫টি কম্বাইন হারভেস্টার মেশিন ধান কাটায় ব্যবহৃত হচ্ছে দ্রুত ধান কাটা হচ্ছে কৃষকের। ধান উৎপাদনের জেলার জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস জানান, সার, ব্রি- উন্নত জাতের বীজ, বিদ্যুৎ, কৃষকের সার্বিক সহযোগিতায় কৃষক সহজভাবে ভালো উৎপাদনের মুখ দেখতে পেরেছে। প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ না হলে ভালো ফলনের আশা করছি আমরা।
এছাড়া নেত্রকোনার ভাটি অঞ্চলের ফসল রক্ষাবাঁধ সঠিক পরিচর্যায় বাঁধ মেরামত কাজের সঠিক সময়ে প্রশাসনিক মনিটরিং করায় চলতি মৌসুমে ভালো ফসল উৎপাদন বলে মনে করেন নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সারোয়ার জাহান,তিনি জানান, নেত্রকোণা জেলায় ৩৮০ কিঃমিঃ ডুবন্ত বাঁধ রয়েছে যার মাধ্যমে হাওরের ৪২,০০০ হেক্টর জমির বোরো ফসল আগাম বন্যার কবল থেকে রক্ষা পায়। চলতি বছর নেত্রকোণা জেলায় হাওরে ১৯১টি পিআইসির মাধ্যমে ১৪৬.১২ কিঃমিঃ ডুবন্ত বাঁধ মেরামত করা হয়েছে যার প্রাক্কলিত ব্যয় ছিল ৩১.৭৮ কোটি টাকা। উক্ত ১৪৬.১২ কিঃমিঃ ডুবন্ত বাঁধ মেরামত কাজ নির্ধারিত সময়ে সমাপ্ত হওয়ায় আগাম বন্যায় ফসলের ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি কম রয়েছে। বর্তমানে হাওরে পাকা ধান কাটা হচ্ছে। হাওরের ফসল কাটা শেষ না হওয়া পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট পিআইসিসহ পানি উন্নয়ন বোর্ড বাঁধগুলো তদারকি করছে।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর