
২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে পিলখানায় ৫৭ জন সেনা অফিসার হত্যাকাণ্ড ও বিগত ১৬বছরে দেশের সকল গুম, খুন সহ সকল হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবী করেছেন জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডাঃ শফিকুর রহমান। পিলখানায় হত্যার শিকার সেনা কর্মকর্তাদের তিনি দেশপ্রেমিক, চৌকস ও প্রতিশ্রুতিশীল আখ্যা দিয়ে তিনি অভিযোগ করেন, ৫৭ জন সেনা অফিসারকে হত্যার মাধ্যমে শেখ হাসিনা দেশে হত্যার মিশন শুরু করেছিল।
জামায়াত আমীর শনিবার (১৯ এপ্রিল) বিকালে নীলফামারী জেলার জলঢাকা উপজেলার স্টেডিয়াম মাঠে এক জনসভায় প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, পরিকল্পিতভাবে জামায়াত নেতাদের ফাঁসির নাম ও অনেককে জেলখানায় হত্যা করা হয়েছে।
তিস্তা সম্পর্কে তিনি বলেন, আমরা চাই দ্রুত তিস্তা মহা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হউক। এটি আমাদের অধিকার। স্বাধীন আমাদের বাংলাদেশ। আমরা আমাদের জনগণের প্রয়োজনে উন্নয়ন কর্মসূচি হাতে নিব, অবকাঠামো তৈরী করব। এখানে কারো নাক গলানোর সুযোগ নেই। আমরা কারো ব্যাপারে নাক গলাই না। আমরা আমাদের দেশ নিয়ে চিন্তা করি। তিনি এই এলাকার উন্নয়ন বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি আগামী নির্বাচনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে ক্ষমতায় আনার আহ্বান জানিয়ে বলেন জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীদের সম্মান, নিরাপত্তা ও কাজের ব্যবস্থা করবে বলে উল্লেখ করেন।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ফ্যাসিবাদ আওয়ামী লীগের নির্মম নির্যাতনের শিকার জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলাম এখনও কারাগারের ভিতরে। আমরা কোন ধানাইপানাই চাই না। তাকে দ্রুত মুক্তি দিয়ে জনগণের মাঝে ফিরে দিয়ে তাকে কাজ করার সুযোগ করে দিন। তিনি আরো বলেন, এরকম নিরপরাধ মানুষগুলোকে যারা দোষী সাজিয়েছিল, আল্লাহ তায়ালা জনগণের থেকে তাদের গায়েব করে দিয়েছেন। হাসিনা সরকার হাজারো মায়ের বুক খালি করেছে, হাজারো বোনকে বিধবা করেছে, হাজারো সন্তানকে এতিম বানিয়েছে। তারা আয়না ঘর তৈরি করে মানুষের উপর নির্মম নির্যাতন চালিয়েছিল। তাদের পুরো শাসনামলে মানুষ সুশাসন পায় নাই। তারা সোনার বাংলা বানানোর স্লোগান দিয়ে এই বাংলাকে শ্মশান বাংলায় পরিণত করেছিল। মানুষের কথা বলার অধিকার ছিল না। প্রতিবাদী মানুষের উপর জুলুমের পাহাড় নেমে আসতো। ১৬ বছর তারা খুন করেছে, গুম করেছে তারা ধর্ষণ ও লুণ্ঠনের মহা রাজত্ব কায়েম করেছিল।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকার সবচেয়ে আঘাত দিয়েছিল জামায়াতে ইসলামীর উপর। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হিসেবে আঘাত দেয়াড় জন্য জামায়াতে ইসলামীকে বেচে নেয়। তারা জামায়াতের ১১জন দায়িত্বশীল নেতাকে জুডিশিয়াল ক্লিনিং এর মাধ্যমে দুনিয়া থেকে বিদায় করে দিয়েছে। ৫ জনকে অন্যায় ভাবে ফাঁসি দিয়েছে। মাওলানা দেলায়ার হোসন সাঈদীসহ ৬ জনকে জেলের ভিতরে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে। আমরা এসব হত্যার বিচার চাই।
তিনি ফ্যাসিবাদের পতন হলেও এখনও তাদের দোসর ও কিছু নষ্ট রাজনীতিবিদ চাঁদাবাজি-দখলবাজি করেছে দাবী করে এটি প্রতিহত করতে অবরতি সরকারের কাছে আহ্বান জানান।
জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলী সর্ম্পকে ডা. শফিকুর রহমান বলেন মীর কাশেম আলী আমেরিকায় ছিলেন। তার পরিবারের সদস্যরা বলেছিল বাংলাদেশে এখন আসবেন না। আসলে আপনার নেতাদের মতো আপনাকেও ফাঁসি দেয়া হবে। তিনি বলেছিলেন আমি বাংলার সন্তান আমি বাংলাদেশে ফিরে যাব। আদালতে মোকাবেলা করবো। ফাঁসির রশি তার গলায় ঝুলতে পারে এটা জেনেও তিনি দেশে ফিরে আসেন। তিনি দেশ প্রেমিক মানুষ ছিলেন, নিরপরাধ মানুষ ছিলেন। তার সৎ সাহস ছিল। তিনি দেশকে ভালোবাসতেন। তিনি যুবকদের হাতে কাজ তুলে দেয়াড় এক মহান কারিগর ছিলেন। ফ্যাসিস্ট সরকার এই সাহসী মানুষটাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসি দেন।
জুলাই হত্যাকাণ্ড সম্পর্ক ডা. শফিকুর রহমান আরো বলেন, আমরা জুলাই হত্যাকাণ্ড দৃশ্যমান বিচার দেখত চাই। আমরা প্রয়োজনীয় সংস্কার ও জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচারের পর নির্বাচন চাই। আগে এদুটা হবে তার পর নির্বাচন। দুটা ছাড়া জনগণ নির্বাচন মেনে নেবে না। মানুষ ফ্যাসিস্ট সরকারের মতো আর কোনো নির্বাচন দেখতে চায় না।
উপজেলা জামায়াতের আমীর মোখলেছুর রহমানের সভাপতিত্বে জনসভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ মাওলানা মমতাজ উদ্দিন ও অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বেলাল। এ ছাড়া এ জনসভায় উপজেলা, জেলা নেতারা বক্তব্য রাখেন।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর