
দৈনিক হাজিরা (কাজ নাই, মজুরি নাই) ভিত্তিক শ্রমিক-কর্মচারী সরবরাহ ঠিকাদার নিয়োগ প্রক্রিয়া অবৈধ অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিজ্ঞ আদালত সরিষাবাড়ীর যমুনা সার কারখানা ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ৮ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শোকজ করেছেন বলে জানাগেছে। শনিবার (১৯ এপ্রিল) আদালতের এ কারণ দর্শানোর নোটিশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে কর্তৃপক্ষ।
মামলার বিবাদীরা হলেন, যমুনা সার কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সভাপতি আবু সালেহ মোহা. মোসলেহ উদ্দিন, মূল্যায়ন কমিটির সদস্য সচিব ও উপমহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) দেলোয়ার হোসেন, সদস্য ডুয়েট যন্ত্র কৌশল বিভাগের অধ্যাপক ডা. কামরুজ্জামান, মহাব্যবস্থাপক (উৎপাদন) মইনুল ইমরান, মহাব্যবস্থাপক (হিসাব ও অর্থ) ইকবাল হোসেন, উপমহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্যিক) আব্দুল হামীম, জনতা ব্যাংক তারাকান্দি শাখার ব্যবস্থাপক এ আর এম রেদুয়ানুর রহমান ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স আল মমিন আউটসোর্সিং সার্ভিসেস লিমিটেড। মেসার্স এ এন এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী রাশেদুজ্জামান লিটন আদালতে এ মামলা দায়ের করেন।
জেএফসিএল সূত্র জানায়, তারাকান্দি যমুনা সার কারখানার বিভিন্ন বিভাগ-শাখায় অস্থায়ী ভিত্তিতে (কারখানা চলাকালীন ২৩৩ জন ও বন্ধকালীন ১৫৯ জন) দৈনিকভিত্তিক শ্রমিক-কর্মচারী (কাজ নাই, মজুরি নাই ভিত্তিতে) সরবরাহ সংক্রান্ত চলমান মামলা নিষ্পত্তি হলে আউটসোর্সিং দরপত্র বাতিল করে গত বছরের ২৪ নভেম্বর দরপত্র আহ্বান করে কর্তৃপক্ষ। মোট ১২টি প্রতিষ্ঠান এ দরপত্রে অংশ নেয়। যাচাই বাছাইয়ে উপজেলার চরপাড়া গ্রামের মেসার্স এ এন এন্টারপ্রাইজের কমিশন বা উদ্বৃত্ত দর ১৬ টাকা, যা প্রাক্কলিত দরের সমান হওয়ায় দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি তাদের গ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচিত করে।
অপরদিকে রাজধানীর হাতিরপুলের মেসার্স আল মমিন আউটসোর্সিং সার্ভিসেস লিমিটেড প্রতিদিন জনপ্রতি ৮ ঘণ্টা কাজের জন্য কমিশন বা উদ্বৃত্ত দর শিডিউল মোতাবেক প্রদান না করে এক মাসের মূল বেতনের ওপর শতকরা ৫ শতাংশ দাখিল করেন, যা সিডিউলে উল্লিখিত দর অনুযায়ী যথাযথভাবে হয়নি। তাদের দরপত্র অনুযায়ী একজন শ্রমিকের ৮ ঘণ্টা কাজের জন্য কমিশন দর দাঁড়ায় ২৫ টাকা, যা প্রাক্কলিত কমিশন দরের চেয়ে ৯ টাকা বেশি। অথচ সরকারি অর্থ অতিরিক্ত ব্যয় দেখানোর পরও মেসার্স আল-মমিন আউটসোর্সিং সার্ভিসেস লিমিটেডকে কার্যাদেশ প্রদানের প্রস্তুতি নেয় কর্তৃপক্ষ।
মামলার বাদী মেসার্স এ এন এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী রাশেদুজ্জামান লিটন অভিযোগ করে বলেন, শুরুতে তার প্রতিষ্ঠানকে ১ মার্চ ২০২৫ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৭ পর্যন্ত ২৪ মাসের জন্য কার্যাদেশ প্রদানের সুপারিশনামা প্রস্তুত করা হয়। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, রহস্যজনক কারণে কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে মেসার্স আল মমিন আউটসোর্সিং সার্ভিসেসকে অবৈধভাবে কার্যাদেশ প্রদানের প্রক্রিয়া শুরু করে। এই কার্যাদেশ বাতিলের দাবিতে ২৪ মাসের জন্য অস্থায়ী ও অন্তর্বর্তী নিষেধাজ্ঞা চেয়ে মামলার প্রেক্ষিতে বিজ্ঞ আদালত দরপত্র মূল্যায়ন কমিটিকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়।
যমুনা সার কারখানার উপমহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) ও দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সদস্য সচিব দেলোয়ার হোসেন বলেন, শুরুতে আমাদের কিছু দুর্বলতা ছিল। এ কার্যাদেশের জন্য কর্মী সরবরাহের লাইসেন্স জমা দিতে হয়, কিন্তু মেসার্স এ এন এন্টারপ্রাইজ বাণিজ্যিক লাইসেন্স দিয়েছে, যা আমরা শুরুতে বুঝতে পারিনি। পরে মেসার্স আল মমিন আউটসোর্সিং সার্ভিসেস লিমিটেড অভিযোগ দাখিল করে। যা খোঁজ নিয়ে এবং সকল অভিযোগ নিষ্পত্তি করে এ প্রতিষ্ঠানকেই কার্যাদেশ প্রদানের প্রস্তুতি চলছিল।
দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সভাপতি ও কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবু সালেহ মোহা. মোসলেহ উদ্দিন বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স এ এন এন্টারপ্রাইজ অস্থায়ী ও অন্তর্বর্তী নিষেধাজ্ঞা চেয়ে গত (১৭ এপ্রিল) সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে এ মামলা দায়ের করে। মামলার পরিপ্রেক্ষিতে শনিবার আদালতের শোকজ নোটিশ হাতে পেয়েছি। বিষয়টি দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি বসে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর